মৃত্যু দেখে ফিরেছেন জার্ভিস

আর এই পুরো সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর নিজেকে ভাগ্যবানই মনে করছেন জার্ভিস। কারণ এতো অসুস্থতার মধ্যেও তিনি বেঁচে আছেন। কারণ জিম্বাবুয়েতে আধুনিক চিকিৎসা খুব একটা নেই। আর সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই এতো দামি চিকিৎসার খরচ বহন করার মত সক্ষমতা নাই।

শুধু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই অনেকে মহা বিপাকে পড়েছেন। এই রোগে এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা কয়েক লাখ।

একটা কল্পনা করুন, কারো এই করোনা হয়েছে। তার সাথে আবার ম্যালেরিয়াও হয়েছে। এখানেই শেষ হয়, এর সাথে আবার ‘টিক বাইট ফিবার’ বলে একটা সংক্রামন রোগও হয়েছে।

না, মোটেও গালগল্প নয়। এই ভয়ঙ্কর ত্রিমুখী সংক্রমণ একসাথে সামলে উঠেছেন জিম্বাবুয়ের পেসার কাইল জার্ভিস।

আর এই পুরো সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর নিজেকে ভাগ্যবানই মনে করছেন জার্ভিস। কারণ এতো অসুস্থতার মধ্যেও তিনি বেঁচে আছেন। কারণ জিম্বাবুয়েতে আধুনিক চিকিৎসা খুব একটা নেই। আর সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই এতো দামি চিকিৎসার খরচ বহন করার মত সক্ষমতা নাই।

জার্ভিস হারারের নিজ বাসভবন থেকে ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে বলছিলেন, ‘জিম্বাবুয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতাল বুরডেল ট্রমা সেন্টার ভর্তি ছিলাম। এখানে মাত্র চারটি বেড আছে। যার একটিতে আমি ছিলাম আর বাকি তিনটি খালি ছিলো। আমি ভাগ্যবান কারণ আমি বেসরকারি হাসপাতালের খরচ মেটানোর মত সক্ষম ছিলাম। কিন্তু যাদের এই সক্ষমতা নেই তাদেরকে অনেক বেশি কষ্ট ভোগ করতে হয়।’

কাইল জার্ভিসের প্রথম করোনার লক্ষণ দেখা যায় ২৬ জানুয়ারী। তখন তিনি ফিটনেস ফিরে পেতে অনুশীলন করছিলেন। তিনি জানান, ‘আমি কেবল কেবল মাত্র ফিটনেস অনুশীলন থেকে ফিরে এসেছিলাম। আমার জ্বর জ্বর অনুভব হচ্ছিলো, শরীরে র‌্যাশের মত দেখা দিচ্ছিলো। সাথে ম্যাথা ব্যথা এবং বমি বমি ভাব হচ্ছিলো। তাই ভাবছিলাম আমি সম্ভবত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ছি এবং নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলি। আর অসুস্থতা বেশ খারাপের দিকে যাচ্ছিলো ‘

চার দিন পর ৩০ জানুয়ারী অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে উঠে। তার জন্য বাড়িতে অবস্থান করা খুব কঠিন হয়ে উঠছিলো। তাই তিনি হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জার্ভিসের স্ত্রী কেলসি তাঁর দেখাশুনা করছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখা যায় নি। অসুস্থতা হবার পর তাকে বুরডেল ট্রমা সেন্টারে ভর্তি হন। যা জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে দামি হাসপাতাল এবং সেরা। সেখানকার ডাক্তাররা বলেন, জার্ভিসের হার্টবিট মিনিটে ২২০ ছিলো। যা কিনা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার লক্ষণ।

জার্ভিসের রক্ত পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। সাথে প্রতিনিয়ত অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছিলো। যতক্ষণ না চিকিৎসকরা নিশ্চিত হচ্ছিলো তাঁর কি হয়েছে। জার্ভিস জানান, ‘তারা প্রথমে আমাকে বলেনি আমি কোভিড-১৯, ম্যালেরিয়া এবং সংক্রমক জ্বরে আক্রান্ত হয়েছি। তারা ভেবছিলো আমি দিশেহারা হবো। দিনের শেষে শুধুমাত্র আমার স্ত্রী আমাকে জানিয়েছিলো।’

শোনার পরও অবশ্য জার্ভিস খুব ভড়কে যাননি, ‘আমি খুব খারাপভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। কারণ আমি জানতাম তারা ম্যালেরিয়া এবং জ্বরের চিকিৎসা করতে পারবে। আর আমার স্বস্তি হচ্ছিলো আমি তাদের পর্যবেক্ষণে আছি।’

জার্ভিসকে বাড়িতে পাঠানো হয়েছিলো। এরপর পরপর পাঁচ দিন তাকে হাসপাতালে আসতে হয়েছিলো। জার্ভিস বলেন, ‘তারা আমাকে প্রচুর অক্সিজেন দিচ্ছিলো। আর আমাকে প্রতিদিন হাসপাতালে চার পাঁচ ঘন্টা করে হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিলো। চার পাঁচ ঘন্টা যাবত চিকিৎসা নিতে হয়েছিলো ‘

ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে জার্ভিস কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেন। তিনি জানান, তাঁর কন্ঠ এখনো শতভাগ ঠিক হয়নি। জার্ভিসের জন্য এটি কিছুটা দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব। জার্ভিস  বলেন, ‘আমি সিটি স্ক্যান করিয়েছিলাম। সিটি স্ক্যানে দেখা গিয়েছিলো কোভিডের কারণে আমার ফুসফুস কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাই চিকিৎসকরা বলেছে এটা ঠিক হতে তিন থেকে ছয় মাসের মত সময় লাগতে পারে। আর রক্ত কিছুটা কমে যেতে পারে। এই সমস্যা বেশ হতাশাজনক। কিন্তু আপনি যখন এতো সমস্যার মধ্য দিয়ে আসবেন । তার মানে এটা ভালো একটা দিক যে আপনি শারিরীকভাবে সুস্থ হয়ে উঠছেন।’

আজকে জার্ভিস তাঁর বাড়ির পাশে প্রায় চার কিলমিটার রাস্তা হেটেছে। সামনের সপ্তাহে জিম্বাবুয়ে আফগানিস্থান সিরিজ খেলতে আরব আমিরাত যাবে। তখন জার্ভিস আরেকটু বেশি এবং জোরে হাটার চেষ্টা করবে। আর যখন জিম্বাবুয়ের পাকিস্থান সফর শুরু হবে তখন আস্তে আস্তে বলিং শুরু করতে পারবে কাইল জার্ভিস। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে কখন ফিরবে এটা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আর পেশাদার ক্রিকেট খেলার জন্য পরিবেশ এখনো অনেক ঝুকিপূর্ণ।

কাইল জার্ভিস অন্য খেলোয়াড়দেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন যদিও তারা বড় খেলোয়াড় । তার মানে এই না যে তারা কোভিড-১৯ থেকে মুক্ত থাকবেন, ‘আমি তরুণ এবং ফিট। তাই ভেবেছিলাম আমি এটি কাটিয়ে উঠতে পারবো। আমার জন্য এটা বড় কোনো সমস্যা হবে না। কোভিড-১৯ যে কারও হতে পারে। যেকোনো ভাবে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

জিম্বাবুয়ের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে ভালো অবস্থায় আছে। ৫০,০০০ হাজার আক্রান্তের বিপরীতে মৃত্যু প্রায় ১৫০০ জন। যাই হোক, দেশটিতে সীমিত সামর্থ্যেরর কারণে চিকিৎসা সামগ্রী ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসা সেবার বিষয়ে কঠোর নিয়ম চালু করা হয়েছে। জিম্বাবুয়েতে চতুর্থ দফা লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। শুধুমাত্র উৎপাদন এবং কৃষিকাজ স্বাভাবিকভাবে চলছে।

পেশাদার খেলা চালু আছে জিম্বাবুয়েতে। তবুও কাইল জার্ভিস গত একবছরে তাঁর দলের সতীর্থদের সাথে দেখা করেন নি। জিম্বাবুয়ে দল এই সপ্তাহেই ক্যাম্পে যোগ দিয়েছি। আসন্ন আরব আমিরাত এবং পাকিস্থান সিরজের জন্য এই ক্যাম্প চালু আছে। জার্ভিস বলেন, ‘আমি খুব ব্যস্ত নই। আমি আস্তে আস্তে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরতে চাই। যতই সময় লাগুক আমি তাড়াহুড়ো করতে চাই না।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...