Social Media

Light
Dark

লালকার্ডহীন ক্যারিয়ার তাঁদের

লাল কার্ড!

ফুটবলের অন্যতম পরিচিত একটি ঘটনা। ফুটবল যতটা যান্ত্রিক হচ্ছে, তত বাড়ছে লাল কার্ডের সংখ্যা। আতশী কাঁচের নিচে ফেলে এখন ফুটবল বদলে গিয়েছে রাতারাতি। বর্তমানে লাল কার্ড দেখাটা যেন নিত্যনৈমিত্যিক ব্যাপার। বিশ্বকাপ ফাইনালে জিনেদিন জিদানের ঢুস, কিংবা লুইস সুয়ারেজের হাত দিয়ে গোল থামিয়ে দিয়ে লাল কার্ড এখনও সকলের চোখে ভাসে। লাল কার্ড দেখে আমাদের মনে স্মরণীয় হয়ে থাকা খেলোয়াড়দের পাশাপাশি এমন খেলোয়াড়ও আছেন যারা পুরো ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন কোনো লাল কার্ড না দেখেই। আজকের লেখা এমন সব খেলোয়াড়দের নিয়েই।

  • মিশেল প্লাতিনি (ফ্রান্স)

ফ্রান্সের ফুটবল ইতিহাসের প্রথম যুগের তারকা ছিলেন মিশেল প্লাতিনি। ফ্রান্সের ইতিহাসের সেরা দল এসেছিল প্লাতিনির হাত ধরেই। প্রথম শিরোপাও এসেছিল তার অধিনায়কত্বে। তার অসাধারণ নৈপুণ্যে ১৯৮৪ সালে প্রথমবারের মত ইউরো জেতে ফ্রান্স।

টানা তিনবার ব্যালন ডি’অর জেতা মিডফিল্ডার খেলেছেন নিজের সেরা খেলা দেখিয়েছেন জুভেন্টাসের জার্সিতে। জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগও। তাঁকে আইডল মেনেই উঠে এসেছেন জিনেদিন জিদান, দিদিয়ের দেশম, এমানুয়েল পেতিতরা, উপহার দিয়েছেন বিশ্বকাপ। ক্যারিয়ারে ৬৫০-এর ওপর ম্যাচ খেলেও তাঁর নামের পাশে জমা পরেনি কোনো লাল কার্ড।

  • রাউল গঞ্জালেস (স্পেন)

তার জন্য পুরো দলের নামই বদলে গিয়েছিল একসময়। রিয়াল মাদ্রিদকে এখনও ভালোবেসে অনেকে ডাকে ‘রাউল মাদ্রিদ’ নামে। স্প্যানিশ এই স্ট্রাইকার হয়ে আছেন রিয়ালের ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে কম ভ্রমণ করেননি। রিয়াল বাদেও গায়ে জড়িয়েছেন  শালকে, আল-সাদ, নিউইয়র্ক কসমসের জার্সি। প্রতি মৌসুমে ফুটবলের সর্বোচ্চ লেভেলে, ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্লাবে খেলেও লাল কার্ডের দেখা পাননি তিনি।

ক্লাব ইতিহাসে ৯৩২ ম্যাচে ৩৮৮ আর এবং স্পেনের জার্সিতে ৪৪ গোল তার। জিতেছেন ৩ চ্যাম্পিয়নস লিগ, রিয়াল মাদ্রিদের ৩২ বছরের চ্যাম্পিয়নস লিগ খরা কাটিয়েছেন নিজ হাতে। ছয়বার জিতেছেন লা লিগা। কিন্তু এত কিছুর পরেও লাল কার্ডের দেখা পাননি তিনি।

  • আলসেন্দ্রো দেল পিয়েরো (ইতালি)

রাউল যদি হন মিস্টার রিয়াল মাদ্রিদ, তবে পিয়েরো হবেন মিস্টার জুভেন্টাস। দুই দশকের বেশি সময় ধরে মাঠ দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন আলসেন্দ্রো দেল পিয়েরো। ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী ইতালির মূল স্ট্রাইকার ছিলেন তিনি।

ক্যারিয়ারের শুরুতে আর শেষে চার মৌসুম বাদে পুরো ক্যারিয়ারই কাঁটিয়েছেন জুভেন্টাসে। ক্লাবের জার্সিতে ৫৮৫ ম্যাচে গোল করেছেন ২৩৪টি  আর ইতালির জার্সিতে ৯১ ম্যাচে ২৭! ফুটবল মাঠে তার মত ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশার, স্পিডি আর পজিশনিং সেন্সওয়ালা খেলোয়াড় বর্তমান ফুটবল বিশ্বে খুব কম দেখা যায়। আর তার সাথে কেকের উপর টপিং হিসেবে পুরো ক্যারিয়ারে লাল কার্ড না দেখার রেকর্ড।

  • রায়ান গিগস (ওয়েলস) 

রয়্যান গিগস ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ‘ওয়ান ক্লাব ম্যান’। ওয়েলসের উইঙ্গার পুরো ক্যারিয়ার কাঁটিয়েছেন রেড ডেভিলদের হয়ে। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের হাতে গড়ে ওঠে ক্যারিয়ারও শেষ করেছেন তার অধীনে। তার পুরো ক্যারিয়ার যেন অ্যালেক্স ফার্গুসনের গড়া।

২০১৪ সালে অবসর নেয়ার আগে প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন তিনি। ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে ৬৭২ ম্যাচ খেলে একবারও লাল কার্ড দেখেননি তিনি। ব্যক্তিগত জীবনের কিছু কন্ট্রোভার্সি বাদ দিলে তার মত নম্রভদ্র খেলোয়াড় খুব কমই আছেন। বর্তমানে ওয়েলসের সহকারী ম্যানেজার তিনি।

  • জাভি হার্নান্দেজ (স্পেন)

স্পেনের ইতিহাসের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডারের কথা বললে সবার আগে নাম আসে জাভি ইনিয়েস্তার। দুজনে যেন অবিচ্ছেদ্য জুটি। বার্সেলোনার হয়ে প্রথম যখন জাভি এসেছিলেন তখনই পেপ গার্দিওলা বুঝেছিলেন তার সময় ঘনিয়ে এসেছে। তার প্রমাণও দেখিয়েছেন তিনি। স্পেনের হয়ে জিতেছেন ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো ট্রেবল। ক্যারিয়ারের শেষ দুই মৌসুম বাদে পুরো সময়টাই কাঁটিয়েছেন বার্সেলোনায়। সবচেয়ে বাজে পরস্থিতি থেকেও বল বের করার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তার। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে শান্ত-শিষ্ট থাকা জাভি কখনও দেখেননি লাল কার্ডের মুখ।

  • আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা (স্পেন)

জাভির নাম থাকবে কিন্তু ইনিয়েস্তার নাম থাকবে না, তা কী কখনও হয়? ২০১০ বিশ্বকাপ ফাইনালে এক গোল করে পুরো পৃথিবীর চোখে হিরো হয়ে গিয়েছিলেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। স্পেনের শৈল্পিক মিডফিল্ড, টিকি-টাকার মূল কারিগর ছিলেন তিনি। স্পেনের ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো ট্রিওর মূল কারিগর ছিলেন ইনিয়েস্তা। শেষ বয়সে জাপানে খেলতে যাওয়ার আগে খেলেছেন বার্সেলোনার হয়ে। প্লে-মেকার হিসেবে ৭৫০টিরও বেশি ম্যাচ খেলে লাল কার্ড দেখেননি কখনও।

  • ফিলিপ লাম (জার্মানি)

অনেকের মতেই ফিলিপ লাম পৃথিবীর অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারদের একজন। হবেনই বা না কেন? ডিফেন্স মানেই যেখানে কড়া ডিফেন্ডিং, রাফ ট্যাকেল আর মাথা গরম সিচুয়েশন; সেখানে ফিলিপ লাম নাম করেছিলেন গতি, ড্রিবলিং, নির্ভুল ট্যাকলিংয়ের জন্য। জাতীয় দলে অভিষেকেই পেয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ!

মাত্র ১৭ বছর বয়সেই শুরু হয়েছিল তার ক্যারিয়ার। আর সেখান থেকে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত জিতেছেন সবকিছু। বায়ার্নের হয়ে জিতেছেন আটটি বুন্দেসলিগা, ছয়টি জার্মান কাপ ও ইউরো ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। অধিনায়ক হিসেবে জার্মানিকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ২৪ বছর পর। ৩৩ বছর বয়সে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত কখনও লাল কার্ড দেখতে হয়নি এই অসাধারণ ফুটবলারকে।

  • করিম বেনজেমা (ফ্রান্স)

বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে যদি কোনো খেলোয়াড়ের লাল কার্ড ছাড়া ক্যারিয়ার কাটানোর রেকর্ড থাকে, সেটা করিম বেনজেমা। মাঠে তার মত শান্ত-শিষ্ট খেলোয়াড় খুব কমই দেখা যায়। রিয়াল মাদ্রিদের স্ট্রাইকে থাকা করিম বেনজেমা ক্যারিয়ারে খেলে ফেলেছেন প্রায় ৬৫০-এর ওপর ম্যাচ। কিন্তু এর মধ্যে কখনোই মেজাজ হারাননি বেনজেমা। এমনকি মাঠে কখনও ঝগড়া ঝাঁটি করতেও দেখা যায় না।

এমনও রেকর্ড আছে মোরিনহোর আমলে এল ক্লাসিকোতে দুই দলের সকলে হাতাহাতিতে ব্যস্ত, সেখানে একপাশে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। গত কয়েক মৌসুম ধরে রিয়ালের আশা ভরসার পাত্র ফুটবলের এই আধুনিক যুগে লাল কার্ড না দেখে এক অদ্ভুত রেকর্ডের সাক্ষী হয়ে আছেন।

  • গ্যারি লিনেকার (ইংল্যান্ড)

তালিকার অন্যসব নামের চেয়ে এই নামের মূল্যটা একটু বেশি। সভায় সবার শেষে যেমন সভাপতি আসে, তাই তালিকার শেষ নামটাও এই ইংলিশ স্ট্রাইকারের। ক্যারিয়ারে বার্সেলোনা, এভারটন, লেস্টার সিটি, টটেনহ্যামের মত দলের হয়ে খেলেছেন।

মাঠে নেমেছেন মোট ৫৬৭ বার। কিন্তু এতো ম্যাচ খেলেও একবারও রেফারির চক্ষুশূল হননি তিনি। পুরো ক্যারিয়ারে লাল কার্ড দূরে থাক, কোনো হলুদ কার্ডও দেখেননি তিনি। যদিও সত্তর এবং আশির দশকে ফুটবলে এতো কড়াকড়ি ছিল না। কিন্তু তবুও পুরো ক্যারিয়ার কোনো কার্ড ছাড়া শেষ করা তাঁকে সবার উপরেই স্থান দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link