১০-৮-৩-৪: অতিমানবীয় ফিল সিমন্স

ভদ্রলোক পরিচিত ছিলেন তাঁর হার্ড হিটিং ব্যাটিংয়ের জন্য। কিন্তু সেদিন নিয়তির পরিকল্পনার ছিল ভিন্ন! প্যাটারসনের সঙ্গে নতুন বল ভাগ করে নিলেন সিমন্স। শুরু হল ভবিষ্যতকে ইতিহাস মনে রাখানোর নির্দয় খেলা! নির্দয় শব্দটিতে অন্তত পাকিস্তানের আপত্তি থাকার কথা ছিল না। দশ বলের ব্যবধানে চার উইকেটের পতন ঘটিয়ে সিমন্স তখন নির্দয়তার ঘোড়ায় সওয়ার!

‘১০-৮-৩-৪’ – সংখ্যাগুলো কোন এক বোলারের বোলিং স্পেল বলে দাবী করলে আপনি আমাকে পাগল ঠাওরে বসতে পারেন! এরপর যদি বলি, স্পেলটা কোন আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচের, তাহলে আপনি তেড়ে মারতে আসতেও পারেন! তবে, ভ্রু কুঞ্চিত অবস্থায় ধৈর্যের সাথে আপোষ করে আমাকে একটু সময় দিলে গল্পটা পেশ করতে পারি।

১৯৯২ সালের বেনসন এন্ড হেজেস ওয়ার্ল্ড সিরিজ, মুখোমুখি পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ! আটটি করে ম্যাচ খেলা শেষ, ফাইনালের বগিতে নিজেদের সিট বুক করার উদ্দেশ্যে মরিয়া দুই দল! টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কাপ্তান ব্যাট ঘুরানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। ইট টুক সাম গাটস, কারণ ওয়াকার, আকরামের পাকিস্তান বোলিং অ্যাটাক তখন ফর্মের তুঙ্গে! সেটা প্রমান করতেই কিনা ২১৪ রানেই গুটিয়ে গেল ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস! এক ডেসমন্ড হেইন্সই যা একটু প্রতিরোধ দেখালেন, সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে কাটা পড়লেন আকরামের খাড়ায়!

ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য সুখবর তখন দুইটা। এক, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পিচ, দুই, পাকিস্তানের ভঙ্গুর ব্যাটিং! প্যাটারসন, অ্যামব্রোসদের হাত কচলানো দেখে হয়ত আশার পালে হাওয়া লাগিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ। মাঠের ক্রিকেটে পাক ব্যাটিংকে বড়সড় ধাক্কা দেবার প্ল্যান তাদের ছিল, কিন্তু ধাক্কাটা এলো প্রায় অচেনা এক প্রান্ত থেকে!

ফিল সিমন্স! হ্যাঁ, ভদ্রলোক পরিচিত ছিলেন তাঁর হার্ড হিটিং ব্যাটিংয়ের জন্য। কিন্তু সেদিন নিয়তির পরিকল্পনার ছিল ভিন্ন! প্যাটারসনের সঙ্গে নতুন বল ভাগ করে নিলেন সিমন্স। শুরু হল ভবিষ্যতকে ইতিহাস মনে রাখানোর নির্দয় খেলা! নির্দয় শব্দটিতে অন্তত পাকিস্তানের আপত্তি থাকার কথা ছিল না। দশ বলের ব্যবধানে চার উইকেটের পতন ঘটিয়ে সিমন্স তখন নির্দয়তার ঘোড়ায় সওয়ার!

মেরুদণ্ডহীন ইনিংসকে মেরামতের নামে অবশিষ্ট পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা যেটা করলেন সেটা প্রহসনের সামিল। ৮১ রানে যখন দশম উইকেটের পতন হয়, ততক্ষণে খেলা হয়ে গেছে ৪৮ ওভার! পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানেরা মেইডেন খেলে ফেলেছেন ১৯ টি! ফিল সিমন্স ০.৩ ইকোনমি রেটে কোটা শেষ করে অমরত্ব পেয়ে গেছেন এবং উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান রশিদ লতিফ ৭২ বল খেলে ৮ রান করে ফেলেছেন!

৭২ বলে ৮ রান করাকে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন? গাভাস্কার এখনো জীবিত, তাহলে কার ভুত রশিদ লতিফের ঘাড়ে ভর করেছিল?

ওয়ানডে ক্রিকেটে সিমন্সের এই সর্বনিম্ন ইকোনমি রেটটি আজও রেকর্ডের চূড়ায় অবস্থান নিয়ে আছে! চূড়া থেকে সিমন্সকে সরাতে হলে আবারও কাউকে সওয়ার হতে হবে নির্দয়তার অশ্বে, রাশ ধরে টিকে থাকতে পারবে তো সে?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...