আইসিএল থেকে আইপিএলে

ক্রিকেট বিশ্বে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো মাঠে গড়ায় তুমুল জনপ্রিয় এ টুর্নামেন্টটি। এর আগের বছর বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) অনুমতি ছাড়াই ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল) নামে একটি টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করা হয় ভারতে। তার কয়েক মাস পর আইপিএল আয়োজন শুরু করে বিসিসিআই এবং আইসিএলে খেলা ক্রিকেটারদের ওপর আজীবন নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

তবে কয়েক বছরের মধ্যে আইসিএল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এতে করে আইসিএলে খেলা ভারতীয় ক্রিকেটাররা আইপিএলে খেলার সুযোগ পান। তাঁদের মধ্যে জাতীয় দলের হয়ে খেলে ফেলা ক্রিকেটারদের পাশাপাশি পরবর্তীতে ভারতের জার্সি গায়ে চড়ানো কয়েকজন ক্রিকেটারও ছিলেন।

এমন অনেক ক্রিকেটারের দেখাই তাই ভারতীয় ক্রিকেটে মিলেছে যারা আইপিএল ও আইসিএল – দু’টো আসরেই খেলেছেন। আবার কেউ কেউ খেলেছেন জাতীয় দলেও। তাঁদের মধ্যেই কয়েকজনকে নিয়ে এই আয়োজন।

  • আম্বাতি রাইডু

আম্বাতি রাইডু এই তালিকার সবচেয়ে বড় তারকা। ক্যারিয়ারের শুরুতে অমিত প্রতিভা প্রদর্শন করেও বিতর্কিতভাবে আইসিএলের প্রথম আসরেই খেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। টুর্নামেন্টে তিনি ঘরের দল হায়দরাবাদ হিরোসের হয়ে মাঠে নামেন।

পরবর্তীতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএল যাত্রা শুরু করেন রাইডু। সেখানে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান তিনি। বর্তমানে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএলে মাঠ মাতাচ্ছেন হায়দ্রাবাদের এই ক্রিকেটার।

  • স্টুয়ার্ট বিনি

ভারতের বিখ্যাত অলরাউন্ডার রজার বিনির পুত্র স্টুয়ার্ট বিনিকে কর্ণাটকের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচনা করা হত। তাই তাঁর আইসিএলে খেলার সিদ্ধান্তটি ওই রাজ্যের মানুষদের বেশ অবাক করেছিল সে সময়। তবে হায়দ্রাবাদ হিরোসের হয়ে আইসিএলে খেলার মাধ্যমে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন তিনি।

বিসিসিআই যখন সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেয় তখন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের তাবুতে যোগ দেন বিনি। যদিও আইপিএলে তাঁর উত্থান ঘটে রাজস্থান রয়্যালসের জার্সি গায়ে ৷ দলটির হয়ে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই দারুণ পারফর্ম করেন এ অলরাউন্ডার।

তখন একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের ঘাটতি পূরণ করতে বিনিকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করেন নির্বাচকরা। কিন্তু তাঁদের আস্থার প্রতিদান দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন তিনি। ওই সময় ছন্দে ফিরতে বেগ পাওয়া বিনি বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে জায়গা করে নিতে প্রচুর হিমশিম খাচ্ছেন।

  • শ্রীধরন শ্রীরাম

শ্রীধরন শ্রীরাম ভারতীয় ক্রিকেটে একটি পরিচিত নাম। খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুতেই সম্ভাবনার ছাপ রাখেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান।

২০০০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে শ্রীরামের। তবে নীল জার্সিতে তাঁর যাত্রাটা একদম সুখকর হয়নি। বড় ইনিংস খেলতে ক্রমাগত ব্যর্থ হওয়ায় শীঘ্রই দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে যুতসই পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে জায়গা ফিরে পাবার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

২০০৮ সালে আইসিএলের দ্বিতীয় আসরে প্রথমবারের মতো অংশ নেন শ্রীরাম। সেখানে আহমেদাবাদ রকেটসের হয়ে খেলার পর আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও দিল্লি ডেয়ারডিভলসের জার্সিতে কয়েকটি ম্যাচে অংশ নেন তিনি। এখন তিনি জড়িত আছেন কোচিংয়ে।

  • হেমাং বাদানি

ভারতের হয়ে ৪০টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা এই ক্রিকেটার ৩৩.৩৪ গড়ে সংগ্রহ করেন ৮৬৭ রান। পরিসংখ্যান একজন ভালো খেলোয়াড় হিসেবে বাদানির পক্ষে সাক্ষ্য দিলেও দুঃখজনকভাবে প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্যারিয়ার লম্বা করতে ব্যর্থ হন তিনি। ২০০০-২০০৪, এ সময়টায় ভারত দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন চেন্নাইয়ের এই ক্রিকেটার।

জাতীয় দলে জায়গা হারানোর কয়েক বছর পর চেন্নাই সুপারস্টার্সের হয়ে খেলতে আইসিএলে যোগ দেন বাদানি। তার পর আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের স্কোয়াডে থাকলেও দলটির হয়ে কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি।

  • রোহান গাভাস্কার

ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারের ছেলে রোহান গাভাস্কার বাবার মতো জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন। ভারতের হয়ে মাত্র ১১টি ওয়ানডে খেলেই থেমে যায় তাঁর ক্যারিয়ারের চাকা। তবে রঞ্জি ট্রফিতে একটা লম্বা সময় ধরে ওয়েস্ট বেঙ্গলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে খেলেছেন তিনি।

এর মাঝে আইসিএলে কলকাতা টাইগার্সের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। আইসিএল বন্ধ হয়ে যাবার পর আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলার সুযোগ মেলে তাঁর। এর কয়েক বছর বাদে ২০১২ সালে সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানান রোহান।

  • আলী মুর্তজা 

তাঁকে চাইলে আইসিএলের আবিষ্কারও বলা যায়। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি যোগ দিয়েছিলেন আইসিএলে। ততদিনে খেলেছেন মাত্র তিনটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। দিল্লী জায়ান্ট ও আইসিএল ভারত একাদশের হয়ে প্রশংসিত হন উত্তর প্রদেশের এই বাঁ-হাতি স্পিনার।

আলী গুলাম মুর্তজা তিন বছর পর ঠাঁই পান আইপিএলে। তাকে নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। এরপর পুনে ওয়ারিয়র্স দলেও খেলেন। ১২ ম্যাচে নয় উইকেট পেয়ে থামে তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ার।

তাঁকে ভারতীয় ক্রিকেটের আক্ষেপও বলা যায়। সর্বশেষ, পেশাদার ম্যাচ খেলেন ২০১৫ সালে। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৫! বাকি পাঁচ জনের সাথে তাঁর পার্থক্য হল তিনি জাতীয় দলের হয়ে খেলেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link