আমাদের পুষ্পা ভাই

দুঃসময়ে অপু বল, হাসি, নাচ; সবকিছু বাক্সবন্দি করে নেমে পড়েছিলেন ময়দানে। নিজের হাতে তহবিল সংগ্রহ করে, নিজেই খাবারের প্যাকেট তৈরি করে সে নিয়ে ছুটেছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে।

ক্রিকেট দুনিয়া অপুকে চেনে ‘নাগিন ড্যান্সের’ জনক হিসেবে। কিংবা পুষ্পা সেলিব্রেশনের জন্য। ড্রেসিংরুমে সতীর্থরা তাকে চেনেন আড্ডায় মাতিয়ে রাখা এক তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে। সমর্থকরা চেনেন এক জন কার্যকর স্পিনার হিসেবে। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা চেনেন ঘাতক এক বোলার হিসেবে। কিন্তু তাকে এইসব পরিচয় দিয়ে আটকে রাখা যাবে না।

তিনি সত্যিকারের এক ভাই। মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য যিনি সবকিছু করতে পারেন, তেমনই এক ভাই। চলচ্চিত্রের পাতা থেকে উঠে আসা চরিত্র নাজমুল হোসেন অপু ভাই।

অপুর এই চরিত্রটা প্রথম সামনে এসেছিলো করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়। লোকেরা তখন ভয়ে তটস্ত। ঘরে বন্দী হয়ে সবাই আক্রান্ত হওয়ার ভয় পাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই দুঃসময়ে অপু বল, হাসি, নাচ; সবকিছু বাক্সবন্দি করে নেমে পড়েছিলেন ময়দানে। নিজের হাতে তহবিল সংগ্রহ করে, নিজেই খাবারের প্যাকেট তৈরি করে সে নিয়ে ছুটেছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে।

অপুর বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। ঢাকার পরই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সবচেয়ে বড়ো জায়গা হয়ে উঠেছিলো নারায়ণগঞ্জ। প্রথম যখন সব খেলা বন্ধ হয়ে গেল, শুরুতে কিছুদিন মানুষকে সচেতন করার কাজ করেছিলেন। এরপর বুঝলেন এই সংকটে আশেপাশে অনেক মানুষের আর্থিক কষ্ট শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্ত নিলেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর।

সেই কাজটায় কিছু টাকা সংগ্রহ করে নিজের দায় শেষ করতে পারতেন। কিন্তু অপুর চিন্তাটা একটু অন্যরকম। তিনি লোকেদের কাছ থেকে টাকা জোগাড় করেছেন, একটা দল তৈরি করেছেন এবং নিজেই সেই কাজে নেমে পড়েন।

কাজটা সম্পর্কে তখন অপু আমাকে বলছিলেন, ‘একা একা তো করা যায় না। তাই আমি একটা টিমের মতো করে নিয়েছি। যারা এই কাজ করছে, তাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারটাও মাথায় রাখা হয়েছে। আমরা ইউএনও স্যারের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে ১৫টা কার্ড করে নিয়েছি। যাতে যে কেউ এই কাজের জন্য ঘোরাঘুরি না করে।’

কিন্তু নিজে কেন এই কাজে অংশ নিচ্ছেন? এ নিয়ে অপুর দারুণ একটা ব্যাখ্যা আছে। তিনি বলছিলেন, ‘এই রোগটায় আমি যত দূর বুঝেছি, যারা ফিট মানুষ, তাদের ভয় কম। ফলে আমরা যারা তরুণ আছি, তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আমি আরেকজনকে টাকা দিয়ে ঘরে বসে থাকতে পারতাম। কিন্তু সেও তো অসুস্থ হতে পারত। তাই ভাবলাম, কিছু হলে আমার ওপর দিয়েও হোক।’

এই অপুকে আপনি টিভি পর্দায় বা ২২ গজে দেখে চিনতে পারবেন না।

অপু সেই সময়টার পর নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সেরে উঠেছেন। কিন্তু মানুষের পাশ থেকে সরে যাননি। এখনও খেলার পাশাপাশি অপুর একটা বড় জগত জুড়ে থাকে মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তা।

অপু মাঠে নামেন। আজকের মত করে দু চারটে উইকেট তুলে নেন এবং পুষ্পা উদযাপন করেন। লোকেরা এই ওপরটা দেখে মজা পায়, অপুকে মজার চরিত্র বলে ধরে নেয়। কিন্তু অপুর মাথায় ঘুরতে থাকে মানুষ। অপু ভেতরে ভেতরে হয়ে ওঠেন এজন ভাই।

এই ভাইতে ধরে যাক সমাজটা। আমরাও অপুর মত তখন তাকে অনুকরণ করে উদযাপন করবো।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...