চেনা ছন্দের ইঙ্গিত

তিনি কোনো একটা জায়গায় টানা কয়েকটা ইনিংস খেলে নিজের যথার্থতা প্রমাণ করতে পারতেন। অন্তত ওপেনিংয়ে তেমন সুযোগ পেয়েছিলেন। তামিম ইকবাল গত বছর দেড়েক ধরে টি-টোয়েন্টিতে নেই। সৌম্য এই সময়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারতেন।

সৌম্য সরকার সম্ভবত গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম এক হতাশার নাম। অমিত সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন। প্রবল পরাক্রমে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে একটু একটু করে ম্লান হয়েছেন। দলে তাকে নিয়ে হয়েছে অনেক পরীক্ষা নীরিক্ষা। ফল একটাই-সৌম্য বিকশিত হতে পারেননি।

এই ২০২২ সালে এসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো প্রবল ছন্দে থাকা সৌম্য সরকারকে। যিনি একেবারেই অচেনা ভঙ্গিতে চোখের পলকে মাঠছাড়া করতে পারেন বলকে। না, বিপিএলেও সেই সৌম্যকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। অবশেষে শেষ দুটো ম্যাচে সৌম্য অন্তত ইঙ্গিত দিলেন যে, তিনি ছন্দে ফিরলেও ফিরতে পারেন।

সৌম্য রান করতে পারেননি, এটা যেমন সত্যি। তেমনই সৌম্যকে নিয়ে গত কয়েক বছরে মারাত্মক টানা হেছড়া হয়েছে, সেটাও সত্যি। টি-টোয়েন্টিতেও শুরু করেছিলেন ওপেনিংয়ে। সেখানে গোটা কয়েক ৩০-৪০ রানের ইনিংসও ছিলো। তারপরও এই ফরম্যাটে তাকে ৩, ৪, ৫, ৬, এমনকি ৭ নম্বরেও ব্যাটিং করানো হয়েছে। এই রকম টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে ২০ ওভারের খেলায় ৬-৭ নম্বরে খেলানোর জন্য একাদশে রাখার দরকার কী, সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি কখনো। কার্যত টেস্ট ও ওয়ানডেতেও সৌম্যকে নিয়ে এই তামাশা করা হয়েছে।

এখানে সৌম্যর একটা করণীয় ছিলো। তিনি কোনো একটা জায়গায় টানা কয়েকটা ইনিংস খেলে নিজের যথার্থতা প্রমাণ করতে পারতেন। অন্তত ওপেনিংয়ে তেমন সুযোগ পেয়েছিলেন। তামিম ইকবাল গত বছর দেড়েক ধরে টি-টোয়েন্টিতে নেই। সৌম্য এই সময়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারতেন।

২০২১ সালের শুরুর দিকে নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ টি-টোয়েন্টির মধ্যে তিনটি ফিফটি করে সেরকম একটা ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু এরপর বছর জুড়ে হতাশা। সর্বশেষ ১০ ম্যাচে তার ২০ রান পার করা ইনিংসও ছিলো না। তারই খেসারত দিয়ে দল থেকে বাদও পড়েছিলেন।

কিছু একটা করতে হবে, এই চাপ নিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলা শুরু করেছিলেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে প্রথম কয়েকটা ম্যাচ খেলতে পারেননি। দেরিতে শুরু করার পর প্রথম তিন ম্যাচে ১, ০ ও ১৩ রান। মনে হচ্ছিলো, সৌম্য অধ্যায় এখানেই শেষ। অবশেষে গত ম্যাচে, সিলেটের বিপক্ষে ঘুরে দাড়ালেন। ৩১ বলে ৪৩ রানের একটা ইনিংস খেললেন।

আর এবার সেই সিলেটের বিপক্ষেই ৬২ বলে ৮২ রানের একটা ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়লেন।

এই ইনিংসের ভেতর দিয়ে বিপিএল ইতিহাসের ১৪তম খেলোয়াড় ও বাংলাদেশি ১২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক হাজার রান পূর্ন করলেন সৌম্য সরকার! ৬৮ ম্যাচে তার রান ১০৭৫ রান।

চেনা ছন্দের সৌম্য এ নয়। চেনা ছন্দে থাকলে এই মানের বোলিংয়ের বিপক্ষে সৌম্য ৬২ বল খেলে সেঞ্চুরি করতে না পারার কোনো কারণ নেই। তবু এই ইনিংস আশা জাগায়। অন্তত এটা ভাবতে ভালো লাগে যে, সৌম্য হয়তো এভাবে ফিরেও আসবেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...