একটি সাহসী রূপান্তর কাব্য

ছোটবেলা থেকেই পাকিস্তান ক্রিকেটের অ্যাডাম গিলক্রিস্ট হবার স্বপ্ন দেখতেন। গিলক্রিস্টের মতো ব্যাটিং করতে চাইতেন ছোট থেকেই। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই সংসার ভার কাঁধে ওঠে ফখরের। ২০০৭ সালে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশ শোচনীয় অবস্থায় ছিলো। তখন তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনীতে নাবিক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু তিনি হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার! তবে বাবা চাইতেন ছেলে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনায় ভালো করুক।

খাইবারপাকতুনওয়ার মারদান নামক গ্রাম থেকে উঠে আসা বালকের নাম ফখর জামান!

ছোটবেলা থেকেই পাকিস্তান ক্রিকেটের অ্যাডাম গিলক্রিস্ট হবার স্বপ্ন দেখতেন। গিলক্রিস্টের মতো ব্যাটিং করতে চাইতেন ছোট থেকেই। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই সংসার ভার কাঁধে ওঠে ফখরের। ২০০৭ সালে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশ শোচনীয় অবস্থায় ছিলো। তখন তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনীতে নাবিক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু তিনি হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার! তবে বাবা চাইতেন ছেলে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনায় ভালো করুক।

এক বছর নেভিতে থাকার পর করাচিতে ট্রান্সফার করা হয় ফখরকে। মূলত সেখানেই ফখর জামান তাঁর স্বপ্ন পূরণের রাস্তার দেখা পান। সেখানে তার পরিচয় হয় নাজিম খানের সাথে! যিনি পাকিস্তান নেভি ক্রিকেটের কোচ ছিলেন। ফখর জামান তার কাছে ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্নের কথা জানানোর পর। নাজিম খান ফখরকে তাঁর অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে নেন।

নাজিম খানের একাডেমিতে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই করেন ৩৭ রান। আর এতেই নাজিম খানের চোখে নিজের প্রতিভা ফুটিয়ে তুলেন ফখর। সেখান থেকে নাজিম খান ফখরকে শহরে আজম খান একাডেমিতে পাঠান! যেখানে তরুনদের ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বেশ পরিচিতি ছিলো আজম খানের। আজম খানকে তার প্রতিভা দেখিয়ে মুগ্ধ করতে বেশি সময় নেননি ফখর। আসগর আলী শাহ স্টেডিয়ামে আন্তজেলা অনূর্ধ্ব-১৯ ম্যাচে সেঞ্চুরি করে তাক লাগিয়ে দেন। আজম খান তখনি বুঝতে পারেন যে ফখরের জায়গা নেভিতে নয় ক্রিকেটে হওয়া উচিত।

তারপর আজম খান ফখরকে পাকিস্তান নেভি ক্রিকেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দরখাস্ত করেন! ফখর জামানের পরিবার এই কথা শুনে বেশ বিষন্ন ছিলেন। কিন্তু আজম খান চেষ্টা চালিয়ে যান এবং তিনি সফল হন। তার দরখাস্ত পাকিস্তান নেভিতে অ্যাপ্রুভাল পায়! এবং ২০০৮ সালে ফখরকে পাকিস্তান নেভি ক্রিকেটে ক্রিকেটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ তাকে তার সতীর্থরা ‘ফৌজি’ নামে ডাকতেন।

৯৫ মাইল ঘন্টায় বল করা বোলিং মেশিন দিয়ে পুল শট অনুশীলন করতেন ফখর। ঘন্টার পর ঘন্টা ক্রিকেটে অনুশীলন করতেন তিনি। কিন্তু পারিবারিক বেশ কিছু সমস্যা আর মাঠে মাঝে মাঝে খারাপ পারফরম্যান্সে অনেক বার তিনি ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার কোচ আজম খান তাকে সবসময়ই ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতি সামাল দিতে শিখিয়েছেন।

ফখর জামান দ্রুত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে পা রাখার জন্য সহজ রাস্তা খুজতে থাকেন। তিনি চেয়েছিলেন নিজের অঞ্চলে ফিরে গেলে সেখান থেকে দল পাওয়া সহজ হবে! করাচিতে থাকলে সুযোগ পেতে কষ্ট হবে এমন ভাবাটাই যেনো তার ক্যারিয়ারের জন্য হুমকি হতে চলেছিলো। অবশ্য পরে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন যে তার অঞ্চলেও অনেক খেলোয়াড় ছিল।

ফখরের করাচি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত শুনে আজম খান বেশ রাগও হয়েছিলেন। এরপর ৬ মাস ফখরের সাথে তিনি যোগাযোগও রাখেননি। ফখর তার ভুল বুঝতে পারায় পুনরায় আজম খান তাকে করাচিতে আসতে বলেন! ২০১১ সালে ফখর পুনরায় করাচিতে আসেন। তার দুই বছর পরই ২০১৩ সালে ক্রিকেটকে প্রোফেশন হিসেবে বেছে নিতে নেভির চাকরি ছেড়ে দেন তিনি।

পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) প্রথম সিজনের আগে ইমার্জিং ক্যাটাগরিতে ফখর জামানকে ড্রাফটে রাখা হয়। কিন্তু সেখানে তিনি কোনো দল পাননি৷ পরবর্তীতে যখন পাকিস্তান কাপে ইউনুস খানের অধিনায়কত্বে খাইবার পাকতুনওয়ার হয়ে ৫৯.০৪ গড়ে ৫ ম্যাচে ২৯৭ রান করেন!

তখন তিনি সবার নজর কাড়েন। এরপর আহমেদ শেহজাদের সাথে ওই টুর্নামেন্টেই ওপেনিং করার সুযোগ পান তিনি। এবং পুরো টুর্নামেন্টেই দূর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন ব্যাট হাতে। ফাইনালে ১১১ বলে ১১৫ রানের ইনিংসের মাধ্যমে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও যেতেন ফখর!

আজকে যদি দুনিয়া ফখর জামানকে এক নামে চিনে সেটা অবশ্যই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তার অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যর জন্য! বিশেষ করে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তার করা সেঞ্চুরি বহুকাল মনে রাখবে ক্রিকেট ভক্তরা। তার ইনিংসে সেদিন প্রমাণ করে ধৈর্য্য আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে মানুষ তার স্বপ্নের চূড়ায় পৌঁছাতে পারে।

সবশেষ সদ্য সমাপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে সিরিজে ম্যান অব দ্যা সিরিজের পুরষ্কার জেতেন তিনি! দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচ হারলেও একা হাতে বুক চিতিয়ে লড়াই করে ১৫৫ বলে ১৯৩ রানের রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলেন তিনি! মাত্র ৭ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি পাননি ফখর। সিরিজ নির্ধারণী শেষ ওয়ানডেতে আবারো ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করেন তিনি! তবে এবার আক্ষেপটা ছিলো না, তাঁর সেঞ্চুরিতে পাকিস্তান ২-১ এ সিরিজ জয়লাভ করে। প্রথম এশিয়ান দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দুইবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়ে পাকিস্তান। ১০৪ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১০১ রান করেন ফখর!

পারিবারিক সমস্যা আর নেভির জব ছেড়ে যিনি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ক্রিকেটকে আপন করে নিয়েছেন, সেই ফখর জামানই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের ম্যাচে সেঞ্চুরির পর অবদান রাখলে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে। পাকিস্তান ক্রিকেটের এডাম গিলক্রিস্ট হবেন কিনা জানি না প্রতিভার আর সামর্থ্যের সবটুকু দিলে সাবেক এই ফৌজি হয়তো নিজেকে ক্যারিয়ার শেষে রেখে যেতে পারবেন অনন্য উচ্চতায়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...