কবে গোল পাবে বাংলাদেশ!
স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতার আরেকটি ম্যাচ খেলল জাতীয় ফুটবল দল। ঘরের মাঠ সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করেছে বাংলাদেশ। কয়েক হাজার দর্শককে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশ সবই পারে, শুধু গোলটাই করতে পারে না। বিপক্ষের অতি ডিফেন্সিভ খেলার কারণে জায়গা পেয়ে খেলাকে আক্রমণাত্মক করতে পেরেছে বাংলাদেশ কিন্তু কাজের কাজ ‘গোলটাই’ করা হয়নি।
স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতার আরেকটি ম্যাচ খেলল জাতীয় ফুটবল দল। ঘরের মাঠ সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করেছে বাংলাদেশ। কয়েক হাজার দর্শককে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশ সবই পারে, শুধু গোলটাই করতে পারে না। বিপক্ষের অতি ডিফেন্সিভ খেলার কারণে জায়গা পেয়ে খেলাকে আক্রমণাত্মক করতে পেরেছে বাংলাদেশ কিন্তু কাজের কাজ ‘গোলটাই’ করা হয়নি।
৯০ মিনিটে যদি কোন দল গোল করতেই না পারে তাহলে সে দল কখনোই জিততে পারে না, এটা বেশ পুরনো কথা। বাংলাদেশ দলের অসুখের মতো হয়ে যাওয়া গলদটা ঠিক সেখানেই। যেন কোনভাবেই ক্লিন গোল আদায় করতে পারে না বাংলাবেছরের পর বছর ধরে। গেল কয়েক বছরে একাধিক কোচ এলো আর গেলো কিন্তু এই সমস্যার সমাধান হয়নি।
দুর্বল দল কিংবা সবল, সব দলের বিপক্ষেই একই আচরণ ম্যাচের পর ম্যাচ বাংলাদেশ দলের স্ট্রাইকাররা করেই যাচ্ছে। মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠেও একটি গোলও করতে পারেনি হ্যাভিয়ের কাবরেরার শীষ্যরা। অথচ ম্যাচের পুরোটা সময় বাংলাদেশ মাঠে নেতৃত্ব দিয়েছে ঠিকই কিন্তু বাংলাদেশ পারেনি ফিনিশিং ভালো করে একটা গোল আদায় করে নিতে।
তবে এতকিছুর পরও কোচ কিন্তু দলের মধ্যে উন্নতি দেখছেন, ড্র ম্যাচ থেকেই নাকি শেখার আছে অনেককিছু! যেহেতু মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ তাই আবারো বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে আলফাজ আহমেদের নাম। তার ভুমিকায় ২১ বছর পরও কাউকে পেলোনা বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের ফুটবলে সবচেয়ে বড় হতাশা ও আক্ষেপের নাম দক্ষ গোল স্কোরার। দলের প্রয়োজনীয় সময়ে গোল করতে না পারায় অনেক ম্যাচে জয়ের খুব কাছ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে।
শেষ মুহুর্তের গোলে যেমন জয় পাওয়া হয়নি ঠিক তেমনি হারাতে হয়েছে পয়েন্ট। দেশি স্ট্রাইকারদের কাছ থেকে প্রত্যাশামতো গোল পাওয়া হয়নি বলে হতাশা যেন কমছেনা। ২৪ মার্চ মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচেও আরেকবার বোঝাা গেছে স্ট্রাইকারের অভাব। মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ফিফা অন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে তাই একজন আলফাজ আহমেদের খোজ করেছিলেন ফুটবলপ্রেমিরা।
২১ বছর আগে সর্বশেষ ম্যাচে যে জোগা গোল করেছিলেন সাবেক এই স্ট্রাইকার। জাতীয় দলের অনেক অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তার নাম। বুট জোড়া তুলে রাখলেও কোচ হিসেবে এখনো ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি। ২০০১ সালে যখন সর্বশেষ মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশে খেলে সে সময় দলের কোচ ছিলেন জর্জ কোটান। এই অষ্ট্রিয়ান কোচের অধীনে ২০০৩ সালের সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জিতেছিলেন।
এই ম্যাচের খোজ জানা থাকলে হয়তো টিভি সেটের সামনে বসে দেখেছেন তিনি। কারণটা অবশ্য মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে যে তার অনেক স্মৃতি। যেমন করে অনেক স্মুতি জমা রয়েছে আলফাজ আহমেদের। দুই দশকেরও বেশি সময় আগে সৌদি আরবের দাম্মামে দুটি ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ-মঙ্গোলিয়া। সেই সফরে আলফাজের জোড়া গোলে ৩-০ গোলের জয় এসেছিল লাল সবুজ প্রতিনিধিদের। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য শেষ মুহূর্তের গোলে ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। এই শ্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন ডিফেন্ডার মোহাম্মদ সুজন।
এই দুজনের কাছে আজকের ম্যাচটিও তাই বিশেষ। অনেকে তো বর্তমান দলের মাঝে খুজে বেড়ান একজন আলফাজ কিংবা সুজনকে। কিন্তু বর্তমান দলে এমন একজনের কথা বলা যাবেনা যার উপর ভরসা করা যায়। স্ট্রাইকার সংকটের এই দুঃসময়ে তাই ভরসার রাখার মতো নামই যে নেই বাংলাদেশের ফুটবলে। মালদ্বীপের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে ৪-৪-২ ছকে সুমন রেজার সঙ্গে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানো হয় রাকিব হোসেনকে। কিন্তু তারা আলো ছড়ানোর মতো কিছু পাওয়া যায়নি। মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে কি কেউ সাবেক স্ট্রাইকারের জায়াটি নিতে পারবে কিনা সেই প্রত্যাশা থাকলেও তা পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশের ফুটবলে একজন আলফাজ আহমেদের যে কতটা প্রয়োজন সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে অবশ্য সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করেছেন তিনি, ‘২১ বছর আগে ৩-০ গোলে জয়ের ম্যাচটিতে আমি দুটি গোল করেছিলাম। তখন কি হয়েছে সেটি মনে করতে চাইনা, তবে আমি চাই দল জিতুক। দলের প্রতি প্রত্যাশাটা এখন জেতার। ফুটবল গোলের খেলা বিধায় জয়ের কোন বিকল্প নেই।’
কিন্তু তার সেই কথাতেও অনুপ্রাণিত হতে পারেনি। ২০০১ সালের দলের আরেক সদস্য ইকবাল হোসেন এখন ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জামাল ভুইয়াদের অনুপ্রাণিত করতে সাবেক এই মিডফিল্ডার বলেছেন, ‘মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে জয় ছাড়া কোন বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে। আমি চাই আজকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়–ক বাংলাদেশ। এই ম্যাচ জিততে না পারলে ফুটবলারদের খেলাই ছেড়ে দেয়া উচিত।’
কিন্তু ফুটবলারদের মাথায় এই কথাও ঢুকেনি। তারা গোল করে ইকবালের কথার জবাবটাও ঠিকঠাক দিতে পারেনি। তাই একজন আলফাজ আহমেদের বড় বেশি প্রয়োজন।
তবে নিজ দেশের তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছে মঙ্গোলিয়া। একটা সময় আন্তর্জাতিক ফুটবলে হালি হালি গোল হজম করা দলটি এখন বাংলাদেশকে চোঁখ রাঙ্গাচ্ছে। ১৯৯৮ সালে নিজেদের প্রথম দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২৬ গোল হজম করেছিল তারা। ফিফা র্যাংকিংয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৬, মঙ্গোলিয়ার ১৮৪।
অথচ ২১ বছর আগে দুই দেশ যখন সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল, তখন ফিফা র্যাংকিংয়ের চিত্রটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। তখন বাংলাদেশ ১৪৪ আর মঙ্গোলিয়ার ছিল ১৯৬। সেই মঙ্গোলিয়া এখন বাংলাদেশের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে রয়েছে। তৃপ্তি নয় ২১ বছরে বাংলাদেশ পিছিয়েছে ৪২ ধাপ, মঙ্গোলিয়া এগিয়েছে ১২ ধাপ! বাংলাদেশের মাটিতে স্বাগতিক দলের সঙ্গে ড্র করাটা অর্জণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।