হঠাৎ দানবদের সেরা একাদশ

নির্দিষ্ট একটা সময় উড়ন্ত ফর্মে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে এবার ভিন্নধর্মী একটি টেস্ট একাদশ তৈরি করা যাক। না, এই একাদশে ব্র্যাডম্যানের মত সারাজীবন ফর্মে থাকা কিংবদন্তিদের জায়গা হবে না ৷ বরং বেছে নেয়া হবে এমন ক্রিকেটারদের যারা উল্লেখযোগ্যভাবে অল্প সময়ের জন্য তাদের পুরো ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন।

ফর্মের উত্থান আর পতন একজন ক্রিকেটারের জীবনের স্বাভাবিক ঘটনা। অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটারের জীবনেও এসেছিল অফ ফর্ম, তেমনি ক্ষণিকের জন্য কোন গড়পড়তা খেলোয়াড়কেও মনে হয়েছে সময়ের সেরা কেউ। তবে এমন কিছু ক্রিকেটার রয়েছে যাদের ইন ফর্ম অবস্থা সামগ্রিক ক্যারিয়ারকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে।

নির্দিষ্ট একটা সময় উড়ন্ত ফর্মে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে এবার ভিন্নধর্মী একটি টেস্ট একাদশ তৈরি করা যাক। না, এই একাদশে ব্র্যাডম্যানের মত সারা জীবন ফর্মে থাকা কিংবদন্তিদের জায়গা হবে না ৷ বরং বেছে নেয়া হবে এমন ক্রিকেটারদের যারা উল্লেখযোগ্যভাবে অল্প সময়ের জন্য তাদের পুরো ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন।

  • গ্রাহাম গুচ (ইংল্যান্ড)

ইনিংসঃ ১৩৮-১৫৭; ১৬৭২ রান, গড় ৮৮, শতক ৬টি

নব্বই দশকের দিকে ইংলিশ ব্যাটার গ্রাহাম গুচ রীতিমতো অতি মানব হয়ে উঠেছিলেন। এর আগ পর্যন্ত ৩৯.৯০ গড়ে ৭৩ ম্যাচ খেলেছিলেন গুচ, এর পরই বাড়তে শুরু করে তাঁর ব্যাটিং গড়। সব মিলিয়ে টানা ২০ ইনিংস রান মেশিনে পরিণত হয়েছেন তিনি। এসময় লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচেই করেছিলেন ৪৫৬ রান। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ১৫৪ রান করে প্রায় একা হাতে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন এই ওপেনার।

  • গৌতম গম্ভীর (ভারত) 

ইনিংসঃ ৩২-৫১; ১৭০৮ রান, গড় ৮৯.৮৯, শতক ৮টি

টেস্ট ক্যারিয়ারের একটানা বিশ ইনিংসে গৌতম গম্ভীরের চেয়ে বেশি রান করতে পেরেছেন মাত্র পাঁচজন ব্যাটসম্যান। ৩২ থেকে ৫১তম ইনিংস-ই গম্ভীরের টেস্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হাইলাইটস, এই ইনিংসগুলো বাদ দিলে তাঁর ব্যাটিং গড় ৩০ এর কাছাকাছি নেমে আসে এবং সেঞ্চুরির সংখ্যা হয় মাত্র এক। এছাড়া এই বিশ ইনিংসের কারণে এই বাঁ-হাতির ব্যাটিং গড় ৩৬ থেকে বেড়ে ৫৭ হয়েছিল। নেপিয়ারে ম্যাচ বাঁচানো ১৩৭ রানের ইনিংসটিও এই সময় খেলেছিলেন তিনি।

  • ইয়ান বেল (ইংল্যান্ড)

ইনিংসঃ ৯৭-১১৬; রান ১৪৮৬, গড় ৯৯.১, শতক ৭টি

২০১০ থেকে ২০১১ এই বারো মাস পুরো ইংল্যান্ড দল দারুণ সময় কাটিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাটিতেই ৩-১ ব্যবধানে এবং ভারতকে ঘরের মাঠে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল ইংলিশরা। আর এই সময় নিজের জীবনের সেরা ছন্দে ছিলেন ইয়ান বেল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি রান ফোয়ারা সৃষ্টি করেছিলেন, আর ভারতের বিপক্ষে ছাড়িয়ে গিয়েছেন কল্পনাকেও। ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১৫৯ এবং চতুর্থ টেস্টে ২৩৫ রানের চমৎকার দুইটি ইনিংস এসেছিল বেলের ব্যাট থেকে।

  • অরবিন্দ ডি সিলভা (শ্রীলঙ্কা)

ইনিংসঃ ১০১-১২০; রান ১৫৫১, গড় ১০৩.৪, শতক ৮টি

তেরো বছর সাদা পোশাকে খেলার পর নিজের সেরা সময়ের দেখা পেয়েছিলেন অরবিন্দ ডি সিলভা। এসময় তিনি টানা তিন ইনিংসে শতকের দেখা পেয়েছিলেন আবার এই হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরির ঘটনা ঘটেছিল দুইবার। এছাড়া তাঁর ১৪৬ রানে ভর করেই জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল লঙ্কানরা।

  • মোহাম্মদ ইউসুফ (পাকিস্তান)

ইনিংসঃ ১০৩-১২২; রান ২০১১, গড় ১০৫.৮৪, শতক ১০টি 

টেস্ট ইতিহাসে এক পঞ্জিকা বর্ষে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডের মালিক মোহাম্মদ ইউসুফ। সে সময় তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য; ২০০৫ সালের শেষদিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২৩ রানের ইনিংস দিয়ে শুরু হয় ইউসুফের দুর্দান্ত ফর্ম। এরপর ২০০৬ সালে নয়টি শতক হাঁকান, যার চারটি আবার ১৯০ রানের বেশি। সব মিলিয়ে স্বপ্নিল এক বছর কাটান এই পাক তারকা।

  • অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার (জিম্বাবুয়ে)

ইনিংসঃ ৮০-৯৯; রান ১৬২১, গড় ১১৫.৮৯, শতক ৫টি

বিশ ইনিংসের এই রান ফোয়ারার সময়ে মাত্র পাঁচ সেঞ্চুরিতেই ১৬২১ রান করেছিলেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ৷ এই সময় মাত্র দুইবার তিনি চল্লিশের নিচে আউট হয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক ম্যাচে একাই লড়াই করেছিলেন এই উইকেটরক্ষক; দল হারলেও প্রথম ইনিংসে ১৪৬ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১৯৯ রান করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন তিনি।

  • ভিনু মানকড় (ভারত)

ম্যাচঃ ১৪-২৩, উইকেট ৬৪, গড় ১৮.৯৪, ফাইফার ৫টি

ভারতের টেস্ট ইতিহাসের সাথে ভিনো মানকাডের নাম জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। ভারতের প্রথম টেস্ট জয়ের ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে একা হাতেই ইংল্যান্ডকে ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন এই স্পিনার৷ এছাড়া দুই ম্যাচে পাকিস্তানের ২১ উইকেট শিকার করে ভারতকে প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ দিয়েছিলেন তিনি।

  • ইমরান খান (পাকিস্তান)

ম্যাচঃ ৩৭-৪৬, উইকেট ৭৩, গড় ১৩.৭৫, ফাইফার ৭টি

অধিনায়ক হিসেবে ইমরান খানের পরিসংখ্যান অবিশ্বাস্য, ব্যাট হাতে তাঁর গড় ছিল ৫২ এবং বোলিংয়ে মাত্র ২০। ১৯৮২ সাল বোলার ইমরান খানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় বছর, এই সময়ে তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন এবং অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

  • মিশেল জনসন (অস্ট্রেলিয়া)

ম্যাচঃ ৫২-৬১; উইকেট ৬৫, গড় ১৬.৫৫ ফাইফার ৫টি 

নিজের দিনে মিচেল জনসনের চেয়ে ভয়ানক বোধহয় খুব কম বোলার-ই আছেন। আর এই পেসারের এমন সেরা ছন্দের শুরুটা হয়েছিল ইংল্যান্ডকে দিয়ে; এক ইনিংসে ইংলিশদের পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়েও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। এই আট টেস্টে প্রতি ৩২ বলে একজন করে ব্যাটারকে আউট করেছেন জনসন, এমন পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে কল্পনাতীত।

  • অ্যালেক বেডসার (ইংল্যান্ড)

ম্যাচঃ ৩৪-৪৫, উইকেট ৬৮, গড় ১৪.৯১, ফাইফার ৮টি

নিজের ক্যারিয়ারের শেষদিকে এসে বল হাতে সবচেয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন অ্যালেক বেডসার। এসময় তিনি ছিলেন দারুণ ধারাবাহিক, কোন ইনিংসেই দুই উইকেটের নিচে শিকার করেননি এই পেসার। এমনকি একটা পর্যায়ে তিনি মাত্র সাত ইনিংসে ছয়বার ফাইফারের দেখা পেয়েছিলেন।

  • মুত্তিয়া মুরালিধরন (শ্রীলঙ্কা)

ম্যাচঃ ১০৪-১১৩; উইকেট ৮৯, গড় ১৪.৯২, ফাইফার ৯টি 

একটানা দশ ম্যাচে আর কোন বোলার মুত্তিয়া মুরালিধরনের চেয়ে বেশি উইকেট শিকার করতে পারেনি। এই কিংবদন্তি অনেক ইনিংসে একাই প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন; আর এই দশ ম্যাচের মাঝে মোট ছয়বার এক ম্যাচেই দশ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রানে আট উইকেট নেয়ার কীর্তি টেস্ট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা বোলিং ফিগার।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...