‘রিকশা চালাইয়া, টাকা জমাইয়া ব্যাট কিনুম’

এই বাজারে গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানোই যে দায়, আবার ছেলেকে ক্রিকেট খেলাবেন কী করে। মাও সারাদিন লোকের বাড়িতে কাজ করে ছেলের এই পাগলামিতে প্রশ্রয় দিতে পারেন না। তাই জিদ করে সাকিব বলছিল প্রয়োজন হলে নিজেই রিকশা চালিয়ে ব্যাট কিনব। তবুও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নটা থামবেনা। একটা ব্যাটের জন্য তো আর স্বপ্ন দেখা বন্ধ হতে পারেনা।

প্রায় প্রতিদিন সকালটাই এভাবে শুরু হয় সাকিব আল হাসানের। আপনি হয়তো ভাবছেন এ আবার কোন সাকিব আল হাসান। এই সাকিবের গল্পটা একটু ভিন্ন, একটু অজানা। রোজ সকাল হলেই মিরপুরে মিডিয়া গেটের সামনে সাংবাদিকদের অপেক্ষা শুরু হয়। সেই অপেক্ষার সারিতে থাকে ক্লাস ওয়ানে পড়া ছোট এই ছেলেটাও।

গেট খোলার সময় হলে সাংবাদিকরা মাঠের ভিতরে ঢুকে যান, নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে ছোট্ট সাকিবের আর ভিতরে যাওয়া হয়না, তাঁর মাঠে ঢোকার অনুমতি নেই। ফলে তাঁর প্রিয় ক্রিকেটারদের সাথে আর দেখা হয়না, একটু কথাও বলা হয় না। তবে এতে করে তাঁর মিরপুরে আসা থেমে যায় না।

ছেলেটার বাসা মিরপুরেই। তবে তাঁর সকালটা শুরু হয় মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে। বয়স মাত্র পাঁচ-ছয় বছর হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবকিছুই তাঁর নখদর্পনে। দেশের ক্রিকেটে কোথায় কী হচ্ছে, কে কেমন খেলছে সবকিছুতেই তাঁর যেন বিশেষজ্ঞ মতামত।

এই যেমন বারবার ক্যাচ আউট হয়ে সৌম্য সরকার যে দল থেকেই বাদ পড়ে গেলেন সেটা সাকিব বোঝে। আবার বাংলাদেশ যে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভালো করতে পারছেনা সেটাও জানালেন। তবে নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বে নতুন এই বাংলাদেশ দল ভালো করবে এমন আশাও প্রকাশ করতে ভোলেনি সাকিব।

মিরপুরে কেন রোজ এসে দাঁড়িয়ে থাকে এমন প্রশ্ন করতে তাঁর কণ্ঠ থেকে আসছিল ঝরঝরে উত্তর, ‘আমি আসি ক্রিকেটারদের সাথে দেখা করতে। সাকিব ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চাই। তাঁদের সাথে কথা বলতে চাই ক্রিকেট নিয়ে। দূর থেকে তাঁদের দেখেছি কয়েকবার। তবে কখনো কারো সাথেই কথা হয়নি।’

বাবা-মা অবশ্য তাঁর নাম রেখেছিল নাঈম শেখ। তবে সেই নাম পছন্দ না একটুও। তাইতো নিজেই নিজের নাম রেখেছে সাকিব আল হাসান। স্বপ্ন দেখেন একদিন তিনিও মাঠ কাঁপাবে সাকিবের মতই। যদিও তাঁর এই বড় স্বপ্ন পূরনের যাত্রাটা থেমে আছে কেবল একটা ব্যাটের জন্যে। বাবার কাছে অনেক চেয়েও ব্যাট কেনার টাকা নিতে পারেনি।

ক্রিকেটটা নিয়মিত খেলছে কিনা এমন প্রশ্ন করাতে বলছিল, ‘ আমি ক্রিকেট খেলতে চাই। অ্যাকাডেমীতেও ভর্তি হতে চাই। কিন্তু আমার ব্যাট কেনার টাকা নাই। আব্বু গাড়ি চালায়, কিন্তু ব্যাট কেনার টাকা দিতে পারেনা। আম্মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে। ব্যাটের জন্য আমার ক্রিকেট খেলা হচ্ছে না। কিন্তু আমি ব্যাট কিনমু। দরকার হইলে পায়ের রিকশা চালায় হইলেই ব্যাট কিনুম।’

এই বাজারে গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানোই যে দায়, আবার ছেলেকে ক্রিকেট খেলাবেন কী করে। মা ও সারাদিন লোকের বাড়িতে কাজ করে ছেলের এই পাগলামিতে প্রশ্রয় দিতে পারেন না। তাই জেদ করে সাকিব বলছিল প্রয়োজন হলে নিজেই রিকশা চালিয়ে ব্যাট কিনব। তবুও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নটা থামবেনা। একটা ব্যাটের জন্য তো আর স্বপ্ন দেখা বন্ধ হতে পারেনা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...