তিন বছরের বেশি সময় পর জাতীয় দলের জন্য কোচ পরিবর্তন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তবে যে প্রক্রিয়ায় নতুন কোচকে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া সেটি দেশের ফুটবলে প্রথম ঘটনা। গেল তিন বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা জেমি ডে’কে অব্যহতি না দিয়ে তাকে ছুটিতে পাঠিয়ে অস্কার ব্রুজোনের হাতে দলকে তুলে দেওয়া হয়েছে।
সে হিসেবে জাতীয় দলে এখন দুজন কোচ রয়েছে বললে কি খুব বেশি ভুল বলা হবে? এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি দাড়িয়ে জেমির সাথে চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সালের আগষ্ট পর্যন্ত। তাই এ ইংলিশম্যানকে বহিস্কার করলে মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হবে বাফুফেকে। সে কারণে ছুটি পাঠানোর মতো কুটকৌশল নিয়েছে দেশের ফুটবল নিয়ন্ত্রন সংস্থাটি। সে কারণে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জেমি ডে’র বাংলাদেশ অধ্যায় আপাতত সমাপ্তি হয়ে গেছে।
দুই মাসের ছুটিতে পাঠিয়ে তার সঙ্গে ডিসেম্বর মাসে বসার কথা রয়েছে ফেডারেশনের। জেমি যখন লন্ডনের বিমানে উঠে গেছেন ঠিক সে সময়ই নতুন কোচ অস্কার ব্রæজোনকে বরণ করে নেয় বাফুফে। একই সাথে ঘোষনা করা হয় সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপের জন্য প্রাথমিক দলও। আর নতুন কোচের নাম ঘোষনা পর কিছুটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল বাফুফের জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটি। এরপর দুই দফা বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের গুলশানের বাসায় বৈঠকও হয়।
শুরুতে দুই মাসের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হলেও পরে অনেক আলোচনার পর শুধুমাত্র সাফের জন্যই দায়িত্ব নিতে রাজি হন এই স্প্যানিশ কোচ। এই সময়ের মধ্যে আবার ঘটে যায় বেশকিছু ঘটনা। অস্কার ব্রুজোন বসুন্ধরা কিংসের পুরো কোচিং স্টাফ নিয়ে আসার দেনদরবার করতে থাকেন। বাফুফের এতে রাকি না হওয়ার কোন কারণ ছিলনা। যেহেতু কোচ হিসেবে নামটি মিডিয়ায় ঘোষনা করা হয়েছে সেহেতু ব্রুজোনের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগও ছিলনা ফেডারেশনের।
যদিও জেমি ডে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছিলেন। ৩৪ সদস্যের প্রাথমিক দলও তৈরি ছিল। কিন্তু কিরগিজস্তানে ত্রিদেশীয় সিরিজে ব্যর্থতার কারণে অনেকটা হঠাৎ করে দুই মাসের জন্য জেমিকে অব্যাহতি দিয়ে অন্তরর্তীকালীন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ব্রুজোনকে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে লন্ডন যাওয়ার আগে কয়েকদিন বিশ্রামে ছিলেন ব্রিটিশ এ কোচ। বাফুফের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘ছুটি’ কাটাতে এরই মধ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন জেমি। তাঁর চলে যাওয়ার দিনে নতুন কোচ অস্কারকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বাফুফে। যাওয়া আসার সময়টা দ্রুতই ঘটেছে।
তবে এখনো এক বছরের চুক্তি থাকলেও খুব সম্ভবত শেষ হয়ে গেছে বাফুফে-জেমি’র সম্পর্ক। সাফ ফুটবলের পর তার ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বাফুফে সুত্রে জানা গেছে। তবে বাফুফে ও জেমি উভয়ের কেউই এখনো আনুষ্ঠানিক ইতির কথা বলেননি। আরো ১১ মাস বাফুফের সঙ্গে জেমির চুক্তি থাকলেও দুই পক্ষ হয়তো কিছু দিন পর যৌথ সমঝোতার মাধ্যমে চুক্তি বিচ্ছেদ করতে পারে। জেমি ডে চলে যাওয়ায় কাজ করার প্রস্তাব থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চান না ব্রিটিশ গোলরক্ষক লিস ক্ল্যাভলি।
ফলে ইংল্যান্ড থেকে লিসকে আর মালেতে আনছে না বাফুফে। ফিটনেস কোচ ইভান রাজলভের আগেই সহকারী স্টুয়ার্ট ওয়াটকিস বাফুফের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছেন। জেমির পরিবর্তে দায়িত্ব নেয়া অস্কার তার পছন্দমতো কোচিং স্টাফ নিয়েছেন। দেশীয় কোচ হিসেবে মাসুদ পারভেজ কায়সার থাকলেও অস্কার দলে নিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের তার সহযোগী মাহবুব হোসেন রক্সিকে। গোলরক্ষক কোচও বসুন্ধরায় দীর্ঘদিন কাজ করা নুরুজ্জামান নয়ন। পাশাপাশি ফিজিও এবং ফিটনেস কোচও এখন বসুন্ধরা কিংসের।
এক কথায় বসুন্ধরার কোচিং স্টাফ জাতীয় দলের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তাই ফুটবল বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, শুরুতে রাজি না হওয়ার মূল কারণ ছিল কোচিং স্টাফ নিজেদের পছন্দমতো নেওয়া। বাফুফের দূর্বলতা বুঝতে পেরে তাই দায়িত্ব নিতে গরিমসি করেন অস্কার। সে কারণে দুইবার বাফুফে সভাপতির সাথে করেও সংবাদ মাধ্যমকে কিছুই বলেননি তিনি।
সেখানে বসুন্ধরা কিংসের খেলা বাকি থাকার কথাটি অনেকটাই স্ট্যান্ডবাজি বলে মনে করছেন কেউ কেউ! দুই মাসের দায়িত্ব নেওয়া আর এক টুর্নামেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্যও নেই। যেভাবেই হোক প্রথমবার জাতীয় দলের দায়িত্ব পাওয়াটাকে স্বরণীয় করতে হলে ভাল খেলতে হবে অস্কারের দলকে। প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সাফের ফাইনালে খেলার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিলেন অস্কার। তবে যে নাটক হলো সেটিকে মাঠের ফুটবলের চেয়ে টেবিলের খেলা নিয়ে আলোচনাটাই বেশি করে দিচ্ছে।
দুই দিন দফা সভার পরও জাতীয় দলের কোচ বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। এদিকে কুয়েতে অনূর্ধ্ব ২৩ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহের আরেকটি নভেম্বরে প্রীলংকায় ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। অস্কার শুধু সাফে থাকার পরলে ওই দুই টুর্নামেন্টের দায়িত্ব নেবেন কে সেই সংশয় ছিল। তবে অনূর্ধ্ব ২৩ দলের কোচ হিসেবে কোন নাটকীয়তা ছাড়াই রাজি হয়েছেন দেশসেরা কোচ একেএম মারুফুল হক।
আগামী ১-১৬ অক্টোবর মালদ্বীপের মালেতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ অস্কারের জন্য বড় একটা পরীক্ষা নাম। কারণ যেভাবে সমাদর করে তাকে কোচ বানানো হয়েছে যদি সর্বশেষ চার আসরের মতো গ্রুপ পর্ব থেকে আবারো বিদায় নেয় বাংলাদেশ তাহলে ভিলেন হতেও সময় লাগবেনা। কারণ বাফুফে কর্মকর্তারা এখন ফলাফল চাইছেন, সেটি যে কোন কিছুর বিনিময়েই হোক না কেন। সে হিসেবে কোচের পদটি বেশ কঠিনই বাংলাদেশের জন্য। অনেকটা পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচের চেয়ারের মতোই।