দাপুটে এক জয়। ব্রাজিলের চিরায়ত ধরণে একদম আধিপত্য বিস্তার করে দক্ষিণ কোরিয়া বধ। তাতে শেষ আট নিশ্চিত হয়েছে গত রাতেই। ক্যামেরুন ম্যাচের পর ব্রাজিল ফুটবলের ছন্দ নিয়ে যে শঙ্কা জেঁকে বসেছিল তা যেন নিমেষেই এ ম্যাচে দূর করে দেন নেইমার রিচার্লিসনরা।
ম্যাচ তখন শেষ হয়ে আরো কিছু সময় গড়িয়েছে। তারপরও ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের মাঠ প্রস্থান করতে দেখা গেল না। কিছু একটা আয়োজনের ইঙ্গিত সেখান থেকেই পাওয়া গেল। খানিক বাদে দেখা গেল একটা ব্যানার মাঠে ঢুকছে। ছবি সম্বলিত এক ব্যানার।
পেলের আইকনিক ছবি আর পেলে লেখা একটি ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে গেল ব্রাজিল দলটা। তাদের ইতিহাসের সেরা ফুটবলারের আরোগ্য কামনা করতেই এমন উদ্যোগ। পরে অবশ্য জানা গেল, দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে এ ম্যাচজয়টি তারা পেলেকেই উৎসর্গ করেছে।
তার আগে সামাজিক মাধ্যমে পেলেও একটি পোস্ট করেছিলেন। ১৯৫৮ বিশ্বকাপ অর্থাৎ নিজের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি লেখেন, ‘বাবাকে বিশ্বকাপ জয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ১৯৫৮ সালে সুইডেনের রাস্তায় হাটতে হাটতে সেই প্রতিশ্রুতির কথাই আমার বারবার মনে পড়তো । আমি জানি, ব্রাজিলের এই দলের অনেকেই এবার এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারাও প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে।’
এ ছাড়া তিনি আরো যুক্ত করে লেখেন, ‘আমি তোমাদের অনুপ্রাণিত করতে চাই। আমি হাসপাতালে বসে খেলা দেখব। আমি প্রত্যেকে ব্রাজিল ফুটবলারের দিকে তাকিয়ে থাকব। আমরা একসঙ্গেই হাঁটছি। একসঙ্গেই পথ চলব। শুভকামনা, আমার ব্রাজিল।’
প্যালিয়াটিভ কেয়ারে পেলেকে নেওয়া হয়েছে, এমন একটা খবর দিন দুয়েক আগে রটেছিল। এমনকি সোশ্যাল মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবরও তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়েছিল। যার পুরোটাই ছিল ভুয়া। পেলে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ঠিকই, তবে তাঁকে যেভাবে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রচার করা হচ্ছে, তেমনটি নয়। পেলের পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, পেলের অবস্থা এখন ততটা সংকটাপন্ন নয়। তিনি স্থিতিশীল অবস্থাতেই রয়েছেন।
১৯৫৮ বিশ্বকাপে পেলের হাত দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। এরপর ১৯৬২ তেও সেই শিরোপা ধরে রেখেছিল সেলেসাওরা। মাঝে এক আসর বাদ দিয়ে ১৯৭০ এ আবারো বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। আর এই তিন বিশ্বকাপের প্রত্যেকটিরই মধ্যমণি ছিলেন পেলে।
ফুটবল ইতিহাসে শ্রেষ্ঠত্ব বনে যান ঐ তিনটি বিশ্বকাপ জিতেই। একজন যেখানে ক্যারিয়ারে তিনটি বিশ্বকাপই খেলার সুযোগ পান না, সেখানে পেলে একাই জিতেছেন তিন তিনটি বিশ্বকাপ। পেলের সে কীর্তি এখন পর্যন্ত অভঙ্গুর। যে ল্যান্ডমার্ক তিনি স্থাপন করেছেন তা সম্ভবত চিরায়ত এক রেকর্ডের মাঝেই ঢুকে গেছে।
কাতার বিশ্বকাপ নিজে মাঠে এসে দেখবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তবে অসুস্থতার কারণে আর সেটা হলো। তাতে কি! হাসপাতালে শুয়েই তো নিজের দেশের খেলা দেখলেন। এমনকি গোটা ব্রাজিল দল যেভাবে তাঁকে ট্রিবিউট করলো সেটাও তার চোখ এড়াবার কথা নয়। তবে আসল ট্রিবিউট তো হবে হেক্সা জয়ে।
পেলে অনেক দিন ধরেই হেক্সাজয়ের ব্যাপার আশাবাদ প্রকাশ করে আসছিলেন। এবারে ব্রাজিল দলটার মাঝে সেই সম্ভাবনা আছেও। তাই নিজের ক্রান্তিলগ্নে ব্রাজিলকে একটি শিরোপা দেখার চেয়ে অতি উত্তম দৃশ্য আর হতে পারে। নেইমাররাও নিশ্চয় তাঁর সেই চাওয়ার একটা দৃশ্যায়ন করতে চাইবে। তাই আরেকবার একটা পেলে ট্রিবিউট গোটা ফুটবল বিশ্ব দেখতেই পারে।