অবসর ডাকছে রিয়াদকে

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যখন ক্রিজে আসেন তখনো ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে যায়নি বাংলাদেশ। ক্রিজে তখনো আছেন সাকিব আল হাসান, যার সাথে অনবদ্য এক জুটি গড়ে ধবংস্তুপ থেকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় এনে দিয়েছিলেন দলকে। ম্যাচের লাগামটা তাই ইংল্যান্ডের হাতে থাকলেও আশার প্রদীপ জ্বলছিল সমর্থকদের মনে। কিন্তু সেটা আর হলো কই, একের পর এক ডট বল খেলে উল্টো সবার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। 

মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের দেয়া ৩২৭ রানের বিশাল লক্ষ্যটা তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। নয় রানে তিন উইকেট হারালেও সাকিব – তামিমে ভর করে ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দলীয় ৮৮ রানে তামিম ফিরলে ক্রিজে আসেন আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। 

সবাই ভেবেছিলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মিলে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলবেন দলকে। কারণ অপর প্রান্তে সাকিব ততক্ষণে সেট হয়ে গেছেন, দুজনের একটা বড় রানের জুটিই পারতো বাংলাদেশকে পুনরায় ম্যাচে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু ১২২ রানের মাথায় সাকিব ফিরতেই যেন রান নেয়াই ভুলে গেলেন মাহমুদউল্লাহ।

রীতিমত টুকটুক ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে দলের হারের সম্ভাবনা ক্রমশই বাড়িয়েছেন। বেমানান ৬৫.৩০ স্ট্রাইক রেটে ৪৯ বলে ৩২ রান করে আদিল রশিদের বলে ফিরেছেন এই তারকা। এর মাঝে ২৫টি বল থেকে কোনো রানই করতে পারেননি তিনি। 

তবে কেবল ব্যাট হাতে নয়, ফিল্ডিংয়েও বেশ বাজে করেছেন এই তারকা। ইংল্যান্ডকে অতিরিক্ত বাউন্ডারি উপহার তো দিয়েছেনই পাশাপাশি জস বাটলারের রান আউটও মিস করেছেন।

পরবর্তীতে সেই বাটলারই ৭৬ রানের ইনিংস খেলে রানটাকে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনি বল ফেরত পাঠাতে এতটাই সময় নিয়েছেন যে ততক্ষণে ক্রিজে ঢুকে গেছেন ইংরেজ অধিনায়ক। আরেকটু ক্ষীপ্রতার সাথে বলটা পাঠাতে পারলে হয়তো এই আক্ষেপে পুড়তে হতো না দলকে।

অথচ একটা সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার হিসেবে ভাবা হতো তাঁকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বদলে গেছে সে দৃশ্য। এখন অধিনায়ককে বরং মাঠে লুকিয়ে রাখতে হয় তাঁকে যেন মিস করে না বসেন। এছাড়া ব্যাটিংয়েও অবনতি ঘটেছে এই তারকা, অপরাজিত থাকার সুবাদে গড়টা বেশ বাড়লেও কমেছে স্ট্রাইকরেট। গত দুই বছরে তাঁর স্ট্রাইকরেট মোতে ৭১, যা কিনা বর্তমান যুগের সাথে বড়ই বেমানান। 

সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে ৯৬ বলে ৭৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন রিয়াদ। যদিও সে ম্যাচ জয়ের মূল কৃতিত্বটা পাবেন মেহেদি মিরাজ, তাঁর ঝড়ো ব্যাটিংয়েই সেদিন লড়াই করার মতো সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচেও ধীর শুরু করেছিলেন রিয়াদ, ফিফটি পেরোতেই খেলে ফেলেছিলেন ৭৪ বল। ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়ে রিয়াদের বেহাল দশা থাকা সত্ত্বেও অবশ্য অধিনায়ক তামিম ইকবালের সমর্থন পাচ্ছেন এই ব্যাটার। 

তামিম বলেন, ‘আপনি যদি তাঁকে ক্রমাগত চাপের মুখে রাখেন, তাহলে সেটা দলের জন্য ভালো কিছু নয়। কেবল তাঁর ক্ষেত্রেই নয়, আমাদের সবারই উন্নতির জায়গা আছে হোক না ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিংয়ে। আমি দলের অধিনায়ক এবং আমি কাউকে আলাদা করে দোষী বলতে পারি না। আমি এখানে তাঁদেরকে রক্ষা করতে এসেছি, দোষী বানাতে নয়।’

তবে, রিয়াদের বিদায় তাতে ক’দিন আটকে থাকে এখন সেটাই দেখার পালা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link