অধিনায়কত্বের ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র পাঁচ মাসের মত সময় বাকি। এরপরই আফগানরা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মত টেস্ট খেলতে যাবে। এর আগে অধিনায়কত্ব নিয়ে শুরু হল নতুন বিড়ম্বনা। আর মিউজিক্যাল চেয়ারে দেশটির বোর্ডের অতীত ইতিহাস বলে, এই পাঁচ-ছয় মাসও তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারবেন কি না - তা আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে একটু একটু করে বড় শক্তি হয়ে উঠতে থাকা আফগানিস্তান ক্রিকেট দল একটা গ্যাড়াকলেই পড়লো।

আফগানিস্তানের অধিনায়কত্বটা অনেকটা মিউজিক্যাল চেয়ারের মত। প্রায়ই ভুতুড়ে সব কারণে অধিনায়ক পাল্টানোকে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড প্রায় নিয়মে পরিণত করেছে।

২০১৯ বিশ্বকাপের আগেও সব ফরম্যাটের অধিনায়ক ছিলেন আসগর আফগান। তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওয়ানডে দলের অধিনায়ক করা হয় গুলবাদিন নাঈবকে। তিনি বিশ্বকাপে গিয়ে দল নিয়ে সবগুলো ম্যাচ হেরে আসেন।

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর স্বাভাবিক ভাবেই নড়েচড়ে বসে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। আর এর আগে থেকেই শীর্ষস্থানীয় আফগানিস্তান ক্রিকেটারা বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিলেন। বিশেষ করে মোহাম্মদ নবী ও রশিদ খানের মত সিনিয়র ক্রিকেটাররা প্রকাশ্যে বোর্ডের সমালোচনাও করেছিলেন।

এসিবি তখন আগে থেকেই টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক থাকা রশিদ খান ওয়ানডে ও টেস্ট দলের দায়িত্বও দিয়ে দিলো। এখানেই থেমে গেলে চলতো। কিন্তু তা হল না। বোর্ডের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে আসগর আফগান আবারো সব ফরম্যাটের অধিনায়কের দায়িত্বেন ফিরলেন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। মানে এক বছরের মধ্যেই অধিনায়কত্ব হারিয়ে আবার ফিরেও পান আফগান। এই সময় তাঁর অবর্তমানে অধিনায়কত্ব করেন আরো দুজন। এটা মিউজিক্যাল চেয়ার না তো কি!

তবে, সেই দায়িত্বে তার লম্বা সময় থাকা হল না। আবারও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ ড্র করার পর পুরনো সিদ্ধান্তে ফিরলো এসিবি। অধিনায়কের জায়গাটা আবার হারিয়েছেন আসগর আফগান।

টেস্ট আর ওয়ানডে দলের অধিনায়ক এখন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। সেখানে তাঁর ডেপুটি হলেন রহমত শাহ। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক এখনো ঘোষণা করা হয়নি। আগে থেকেই সেখানকার সহ-অধিনায়ক লেগ স্পিনার রশিদ খান। তবে, বোর্ড জানিয়েছে টি-টোয়েন্টি সহ-অধিনায়কই থাকছেন রশিদ।

আসগর আফগানের ওপর বোর্ড বেশ নাখোশ। এসিবি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এসিবি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পর ফলাফল পর্যালোচনার জন্য একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেখান থেকে যে রিপোর্ট এসেছে সেখানে আসগর আফগানের কিছু সিদ্ধান্তের জন্যই সিরিজের ফলাফল খারাপ হয়েছে। তাই তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।’

আফগানিস্তান সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে প্রথম টেস্ট খুব বাজেভাবে হারে। সেই ম্যাচের পুরস্কার বিতরণীতে ‘ভিসা বিষয়ক জটিলতা’র কথা বলেন। যদিও ৩৩ বছর বয়সী এই অধিনায়ক পরের ম্যাচেই ১৬৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন, যার সুবাদে আফগানিস্তানের জয়ের পথ সহজ হয়। যদিও, বোর্ডের কাছে এই পারফরম্যান্স যথেষ্ট বলে মনে হয়নি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র পাঁচ মাসের মত সময় বাকি। এরপরই আফগানরা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মত টেস্ট খেলতে যাবে। এর আগে অধিনায়কত্ব নিয়ে শুরু হল নতুন বিড়ম্বনা। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগেও এমন একটা হঠকারী সিদ্ধান্তে আফগানিস্তানের সম্ভাবনা যা ছিল তা আদৌ বাস্তব রূপ নেয়নি। এবারও যে তেমন কিছু হবে না। তাঁর নিশ্চয়তা কি?

আর মিউজিক্যাল চেয়ারে দেশটির বোর্ডের অতীত ইতিহাস বলে, এই পাঁচ-ছয় মাসও তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারবেন কি না – তা আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে একটু একটু করে বড় শক্তি হয়ে উঠতে থাকা আফগানিস্তান ক্রিকেট দল একটা গ্যাড়াকলেই পড়লো।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...