ভয় ও ভালবাসার বুলেট

এই গতির আয়ত্তটা করেছিলেন স্কুল জীবনেই। ট্রিপল জাম্প, লং জাম্প এবং হাই জাম্প নিয়মিত অনুশীলন করতেন তিনি। একই সাথে ৫০ মিটার, ১০০ মিটার কিংবা ২০০ মিটার প্রতিযোগিতায় বেশ জোরে দৌড়ে গতিটা বাড়িয়ে নেন তিনি। আর এই গতির ধারাটা জাপটে ধরে নিয়ে এসেছিলেন ক্রিকেটেও। এরপর শুরু হয় ২২ গজে স্টেইন রাজত্বের গল্প! আর এই গল্পের শুরুটা হয়েছিলো জঙ্গলের ধারের ছোট্ট এক গ্রাম থেকে!

সবুজ গালিচায় ২১ মিটার বুলেটের গতিতে দৌড়ে এসে ১৫০ কিমি/ঘন্টায় আগুনের গোলার মতো বল ছুঁড়লেন। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের চোখে মুখে আতঙ্কে ছাপ। গুনে গুনে ওভারের ছয়টা বল শেষ হলেই যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। বল হাতে ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিতেই যেনো এসেছেন ক্রিকেটে। এভাবেই ২২ গজে ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সময় দোর্দণ্ড দাপট দেখিয়েছেন প্রোটিয়া পেসার ডেল স্টেইন।

যিনি ক্রিকেট পাড়ায় স্টেইন গান হিসেবেই পরিচিত। নামের সাথে টাইটেলটা দশে দশ! বল হাতে আগ্রাসী স্টেইন গতির ঝড় তুলতে তিনি ছিলেন ২২ গজের জাদুকর। ভয়ংকর পেস আর আগ্রাসনে ২২ গজ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রায় সতেরো বছর।

২০০৯ থেকে ২০১৪ – মাঝের ২০১৩ সাল বাদে এই ছয় বছরে স্টেইন রাজ করেছিলেন টেস্ট বোলিং র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। এই সাত বছরে সাদা পোশাকে তিনি ছিলেন অদম্য, দূর্ভেদ্য! সাত বছর ২২ গজে শীর্ষে থেকে একক রাজত্ব করেছেন তিনি। ব্যাটসম্যানদের জন্য ২২ গজের মাফিয়া বনে যান তিনি।

স্যুইং, গতি, আর আগ্রাসন – তিনে মিলে ধারণ করেছিলেন রুদ্রমূর্তি! কতক ম্যাচে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের শশক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ তার ইয়ত্তা নেই।

যেকোনো টেস্টেই দিনের শুরুটা পেসাররা চায় গতি আর বাউন্সারে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করতে। শুরুর দিকে ১৪০-১৪৫ গতিতে বল করতে দেখা গেলেও দিনের শেষ লগ্নতে সময়ের সাথে সাথে গতিও কমতে কমতে নেমে আসে ১২০-১২৫ এ। এদিক থেকে বেশ বিচিত্র স্বভাবেরই ছিলেন স্টেইন। দিনের শুরুতে গতি এভারেজে রেখে দিনের শেষ ভাগটা সবচেয়ে গতিতে বল করতেই তিনি স্বাচ্ছদ্যেবোধ করতেন তিনি। যে সময়টায় ব্যাটসম্যানরা দীর্ঘ সময় ব্যাট করে হাঁপিয়ে উঠতেন, ঠিক সে সময়টায় বল হাতে আগুনের গোলা ছুঁড়ে ব্যাটসম্যানের দূর্বলতার সুযোগ নিতে দক্ষ কারিগর ছিলেন স্টেইন।

ঠিক ‘দূর্বলতার সুযোগ নিতে চাইতেন’ – এমন উদ্ধৃতি দিয়ে স্টেইন গানের সামর্থ্যেকে ছোট করছি এমনটা ভাবার অবকাশ নেই। আর সেই ভুলটাও করতে চাইনা। কখনো সুযোগ মতো পেলে হয়তো আমাকেই বা একটা বাউন্সার দিয়ে দিতে পারেন! – জোকস অ্যাপার্ট!

স্টেইনের কাছে ক্রিকেট মানেই যেনো শুধু ব্যাটসম্যানদেরকে ডাগ আউটের রাস্তা দেখানো। অবশ্য স্টেইনের আগ্রাসন, গতি, স্যুইং, আর বাউন্সার সামলানোর চেয়ে ড্রেসিং রুমে বসে থাকাটাই নিরাপদ নয় কি?

এই গতির আয়ত্তটা করেছিলেন স্কুল জীবনেই। ট্রিপল জাম্প, লং জাম্প এবং হাই জাম্প নিয়মিত অনুশীলন করতেন তিনি। একই সাথে ৫০ মিটার, ১০০ মিটার কিংবা ২০০ মিটার প্রতিযোগিতায় বেশ জোরে দৌড়ে গতিটা বাড়িয়ে নেন তিনি। আর এই গতির ধারাটা জাপটে ধরে নিয়ে এসেছিলেন ক্রিকেটেও। এরপর শুরু হয় ২২ গজে স্টেইন রাজত্বের গল্প! আর এই গল্পের শুরুটা হয়েছিলো জঙ্গলের ধারের ছোট্ট এক গ্রাম থেকে!

গৃহযুদ্ধ আর বর্ণবিদ্বেষের কোন্দলে এক কোনে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব প্রান্তের ছোট্ট এক গ্রাম নাম ফালাবোরা। যেটি জিম্বাবুয়ে এবং মোজাম্বিক বর্ডারের ধারে কুগ্রার ন্যাশনাল পার্কের সাথেই ছিলো। অভয়ারন্যে ঘেরা ইকো পার্কটিতে হরিণ, জেব্রা, জিরাফ সহ বেশ কিছু বন্য প্রাণীর বিচরণ ছিলো। সেই পার্ক ঘেসেই যে ২২ গজের এক হিংস্র চিতা বেড়ে উঠছিলো সেটি অবশ্য আঁচ করতে পারেনি কেউই।

২২ গজের হিংস্র চিতা তিনি। নাম – ডেল স্টেইন। কেউ বা ভয়ংকর গর্জন করা সিংহের সাথেও তুলনা দিতে পারেন। অবশ্য গতির কারণে চিতাকেই বরাবর এগিয়ে রাখি আমি।

অবশ্য ২২ গজের এই হিংস্র চিতা ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন বেশ শান্ত স্বভাবের একজন। ছেলেবেলায় চাইতেন তিনি হবেন প্রোটিয়া ক্রিকেটের কিংবদন্তি অ্যালান ডোনাল্ডের মতো। তবে, সেটি ছাপিয়ে মনে মনে পণ করলেন আরেক প্রোটিয়া ক্রিকেটার শন পোলকের মতোন হবেন তিনি। শুধু শন পোলকের মতো বললে ভুল হবে; হতে চেয়েছিলেন শন পোলকের গতিময় ভার্সন! ক্যারিয়ারের শেষে ঠিকই নিজেকে রেখে গিয়েছেন সবার শীর্ষে। ঠিকই বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন নিজের স্বপ্নকে। একসময় ডোনাল্ড-পোলক হতে চাওয়া স্টেইন তাদেরকে ছাপিয়ে নিজেকে নিয়ে যান বিশ্বসেরাদের কাতারে।

অবশ্য ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিলো যথেষ্ট সাদামাটা। ২০০৩ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। খুব একটা মেলে ধরতে পারেননি ২০ বছর বয়সী তরুন ছেলেটি। পরের মৌসুমে বল হাতে কিছু একটা দারুন করে দেখালেন! নির্বাচকদের নজরকাঁড়তে সফল হয়েছিলেন অন্তত। আর জাতীয় দলে সুযোগ পেতে সেটিই ছিলো যথেষ্ট। ২০০৪ সালেই সুযোগ পেয়ে গেলেন জাতীয় দলে।

তবে, অভিষেকটা ছিলো বেশ সাধারণ! তিন টেস্টে মাত্র ৮ উইকেট নেন তিনি। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স করার পর নির্বাচকরা দেখিয়ে দিলেন জাতীয় দল থেকে বের হবার রাস্তাটা।

দল থেকে বাদ পড়লেও ফিরে আসার জিদটা সেদিন পুষে রেখেছিলেন বেশ যত্ন করে। পরের বছর কাউন্টি ক্রিকেটে খেলতে যোগ দিলে এসেক্সে। সেখানেও বেশ কিছু সময় ছিলেন ব্যর্থতার চাঁদরে প্যাঁচানো। কিছুতেই যেনো নিজের আগ্রাসী রুপটা খোলস ছেড়ে বের করতে পারছিলেন না স্টেইন। ২০০৫ সালে আফ্রিকা একাদশে হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন তিনি। পরের বছর ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয় তাঁর। তবে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়েন তিনি।

এরপর কাউন্টি খেলার সময় সেখানে দেখা পেলেন বোলিং কোচ ইয়ান পন্টের! এরপরই পন্টের কোনো এক গোপন পরামর্শে নিজেকে পালটে ফেললেন স্টেইন।

স্টেইনের ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা সেই হিংস্র চিতাটিই হয়তো জাগিয়ে তুলেছিলেন পন্ট! সেখান থেকেই আবার নতুন এক শুরু।

২০০৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন। প্রথম টেস্টেই পাঁচ উইকেট শিকারে তিন ম্যাচ সিরিজে নেন ১৬ উইকেট! পরের দুই বছর ধারাবাহিক ভাবেই দাপট দেখান তিনি। টেস্ট দলেও জায়গাটা পাঁকা করে ফেলেন স্টেইন। ২০০৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ২০ উইকেট শিকার করার পথে পরের বছর ২০০৮ সালে টেস্ট বোলিং র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবারের মতো সেরা পাঁচে উঠে আসেন তিনি। একই বছর ২৩ নভেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত হন তিনি

ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৯ রানে ক্যারিয়ার সেরা ৪ উইকেট শিকার করেন স্টেইন! পরের এক বছর ওয়ানডেতে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও লাল বল হাতে তিনি ছিলেন অদম্য! পর পর তিন টেস্ট সিরিজেই জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার। ওই মৌসুমে ১১ ম্যাচে ৭৫ উইকেট নিয়ে ২০০৯ সালে উঠে আসেন ক্যারিয়ার সেরা টেস্টে এক নম্বর বোলিং র‍্যাংকিংয়ে।

গতির সাথে সাথে ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলো আউটস্যুইং। শুরুতে ইনস্যুইংটা চেষ্টা করতেন না; যাতে করে আউটস্যুইং টা ভুলে না যান। তবে ধীরে ধীরে ইনস্যুইংটাও রপ্ত করে ফেলেন স্টেইন। গতি, ইনস্যুইং, আউটস্যুইং আর বাউন্সারের সাথে আগ্রাসন! সব মিলে ব্যাটসম্যানদের জন্য আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়ায় স্টেইন। ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে এক ইনিংসে শিকার করলেন ক্যারিয়ার সেরা ৫১ রানে ৭ উইকেট!

২২ গজে লাল বলে র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে একক রাজত্ব শুরু করেন স্টেইন। সবাইকে ছাপিয়ে এক নম্বর পজিশনটা লক করে রাখলেন নিজের নামে। সাদা পোশাকে নামের পাশে যোগ করতে লাগলেন একের পর এক ফাইফর। নিজেকে নিয়ে যেতে লাগলেন সাফল্যের চূড়ায়। সেই সাথে প্রতিপক্ষের জন্য কপালে দুশ্চিন্তার রেখা টেনে দিয়েছিলেন ২২ গজের এই মাফিয়া। তবে, ওয়ানডে ক্রিকেটে সেই আগ্রাসী মেজাজটার পূর্ণ প্রতিফলন না দেখাতে পারলেও সেখানেও তুলেছিলেন গতির ঝড়।

২০১১ বিশ্বকাপে নাগপুরে ভারতের বিপক্ষে ৫০ রানে নিয়েছিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মেইডেন পাঁচ উইকেট। ওই বিশ্বকাপের সেরা দলেও জায়গা পেয়েছিলেন স্টেইন। ওয়ানডে ক্রিকেটে তাঁর পার করা সেরা দুই মৌসুমের একটি ছিলো ২০১১ সাল। ওই বছর ১৯ গড়ে ২৫ উইকেট নিয়েছিলেন স্টেইন। মাঝে ২০১২ সালে কিছুটা অফ ফর্মে থাকলেও পরের মৌসুমে ২০১৩ সালে আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট শিকারের পর; এক ম্যাচ বাদে পাকিস্তানের বিপক্ষেই ঘরের মাটিতে ক্যারিয়ার সেরা ৬ উইকেট শিকার করেন তিনি!

অবশ্য ২০১৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে শিকার করা সেই ৬ উইকেটই ছিলো ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁরশেষ ফাইফর। সাদা বলে রাজত্ব করতে না পারলেও ছিলেন বেশ উজ্জ্বল। তবে, সাদা পোশাকের রাজত্বটা ছিলো আরো কয়েক বছর!

২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ডগ ব্রেসওয়েলকে ফিরিয়ে মাত্র ৬১ ম্যাচেই ৩০০ তম টেস্ট উইকেট শিকার করেন স্টেইন! ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২২ গজে গতির ঝড় তোলা স্টেইন গান টেস্ট বোলিং র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থেকেই দাপট দেখিয়েছেন। টানা সাত বছর রাজত্ব করলেন সাদা পোশাকে র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে তামিম ইকবালের উইকেট শিকারের মধ্যে দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন স্টেইন। এই মাইলফলক স্পর্শ করতে ১৬৬৩৪ বল খরচ করেছিলেন তিনি; যা কিনা বলের হিসেবে দ্রুততম রেকর্ড!

মাঝে ২০১৫ সালে ওয়ার্ল্ডকাপ সেমিফাইনালের তিক্ত অভিজ্ঞতা স্টেইনের ক্যারিয়ারে কালো দাগ কেটে দেয়। ফাইনালে যেতে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিলো ২ বলে ৫ রান! শেষ ওভারে বল করছিলেন স্টেইন। তাঁর করা পঞ্চম বলে লং অনে ছক্কা হাঁকিয়ে প্রোটিয়াদের স্বপ্ন ভঙ্গ করে কিউইদের ফাইনালে পৌঁছে দেন গ্র‍্যান্ট এলিয়ট। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই নাটকীয় ম্যাচে ১ বল বাকি থাকতে জয় পায় কিউইরা।

ক্যারিয়ারের কালো দাগ বলতে এটুকুই! অবশ্য এই দাগের কষ্টটা তিনি ভালো করেই জানেন। দীর্ঘদিনের একটা বিশ্বকাপের স্বপ্ন যে কাছে গিয়েই আটকে গেলো! ওই বছরই সাত বছর আধিপত্য দেখানোর পর টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে নিচে নেমে আসেন স্টেইন।

ওই দাগের পর থেকেই ২২ গজে স্টেইন গানের দাপট ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শিকার করেন টেস্ট ক্রিকেটে সবশেষে ফাইফর! এরপর ধীরে ধীরে খেই হারিয়ে ফেললেন তিনি। মাঝে ইনজুরিতে দলের বাইরেও ছিলেন বেশ খানিকটা সময়। সাদা বলের ক্রিকেটে তখন স্টেইন সেভাবে কার্যকর হচ্ছিলেন না। টেস্টেও কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছিলেন! তবে, ২২ গজের সেই হারানো রাজত্ব আর ফিরে পাননি তিনি। সাত বছর ২২ গজ দাপিয়ে বেড়ানো হিংস্র চিতাবাঘটি যে ক্যারিয়ারের একদম শেষদিকে চলে এসেছেন!

তাতে কি ডিউক কিংবা কোকাবুরা হাতে ২৬৩ সপ্তাহ কিংবা ২৩৫৬ দিন একক রাজত্ব করেছেন টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে! আর কারো দ্বারা সম্ভব হবে বৈকি?!

২০০৮ সালে টেস্টের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন স্টেইন। ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত (২০১৫ বাদে) প্রতি বছর সেরা টেস্ট টিমে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে উইজডেনের লিডিং ক্রিকেটারের পর ২০১৪ সালে উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্যা ইয়ার নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়া ২০১১ এবং ২০১৪ ওয়ানডে টিম অব দ্যা ইয়ারেও ছিলেন স্টেইন গান!

২০১৯ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবেন বলে ৩৬ বছর বয়সে টেস্ট ফরম্যাটকে বিদায় জানান বিশ্ব ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেও তাঁর ইকোনমি রেট ছিলো চোখে পড়ার মতো! টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সাত বছরে ২০১৪ পর্যন্ত ৩৭ ম্যাচে মাত্র ৫.৯৯ ইকোনমিতে ৫৫ উইকেট শিকার করেন স্টেইন!

এরপর ২০১৬ সালে ইনজুরি থেকে ফেরার পর সেই চেনা স্টেইন গান হয়ে যান রান মেশিন!

একই অবস্থা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)! ২০১৪ পর্যন্ত ছিলেন প্রতিটি ফ্র‍্যাঞ্চাইজির জন্য প্রিয় চয়েজ। মাত্র ৬ এর কিছুটা বেশি ইকোনমিতে আইপিএলের মতো টপ রেটেড লিগেও দুর্দান্ত বোলিং করেন তিনি। তবে, ২০১৫ এর পর থেকেই দলে আর সেভাবে সুযোগ পাননি স্টেইন! পরের চার বছরে ১২ ম্যাচ খেলা স্টেইন প্রায় ১০ এর কাছাকাছি ইকোনমিতে নেন মোটে ৯ উইকেট!

৯৩ টেস্টে ৪২.৩০ স্ট্রাইক রেটে ৪৩৯ উইকেটের মালিক তিনি! ২৬ বার পাঁচ আর ৫ বার শিকার করেন দশ উইকেট। ১২৫ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ১৯৬ উইকেট। তিনবার শিকার করেন ফাইফর। এছাড়া ৪৭ টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন ৬৪ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নিয়েছেন মোট ৬৯৯ উইকেট!

মাত্র ১ উইকেট পেলেই স্পর্শ করতে ৭০০ উইকেটের মাইলফলক। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের ঝুলিতে নিয়েছেন ১১৬৫ উইকেট! দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে উইকেটশিকারি হচ্ছেন স্টেইন। একই সাথে টেস্টে সবচেয়ে বেশি পাঁচ উইকেটও (২৬) শিকার করেছেন তিনি!

কমপক্ষে ২৫০ উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে টেস্টে সেরা স্ট্রাইক রেটের মালিক ডেল স্টেইন (৪২.৩)! ওয়াকার ইউনিস, ম্যালকম মার্শাল, অ্যালান ডোনাল্ডের পেছনে ফেলে সাদা পোশাকে নিজেকে রেখে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।

নেভিল কার্ডাস বলেছিলেন, ‘পরিসংখ্যান হলো আস্ত একটা গাঁধা।’অনেকের মতেই কার্ডাস হয়তো খানিকটা সময়ের জন্য নেশায় বুঁদ হয়েই এমন মন্তব্য করেছিলেন। কিছু সময়ের ভাবনার পর আবিষ্কার করলাম তিনি ভুল কিছু বলেননি। ডেল স্টেইনের তুলনায় পরিসংখ্যানকে গাঁধাই বলা চলে! কারণ পরিসংখ্যানের মাপকাঠি পেরিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন বহু দূরে।

গ্রায়েম স্মিথ, জ্যাক ক্যালিস, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ফাফ ডু প্লেসির পর দক্ষিণ আফ্রিকার স্বর্ণালী যুগের টেস্ট দল থেকে শেষ নাম হিসেবে অবসরে গেলেন ডেল স্টেইন। শুরুতে চেয়েছিলে প্রোটিয়া ক্রিকেটের কিংবদন্তি হতে, ক্যারিয়ার শেষে বনে গেলেন বিশ্ব ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...