বিদায় বললেই বিদায় নয়

একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হওয়া শক্ত কাজ। তবে, এর চেয়েও বেশি শক্ত হল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ক্রিকেট মানেই বিস্তর চাপ, সেখানে আরামের কোনো সুযোগ নেই। তবে, একই সাথে এটা মানসিক একটা তৃপ্তির ব্যাপার।

একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হওয়া শক্ত কাজ। তবে, এর চেয়েও বেশি শক্ত হল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ক্রিকেট মানেই বিস্তর চাপ, সেখানে আরামের কোনো সুযোগ নেই। তবে, একই সাথে এটা মানসিক একটা তৃপ্তির ব্যাপার।

তাই, বিদায় বলার পরও অনেকেই দোটানায় ভুগেন। কেউ কেউ তো অবসরের সিদ্ধান্ত ভেঙে ফিরে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও খেলেন। ইতিহাসে এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়। তেমনই কয়েকজনকে নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

  • কেভিন পিটারসেন (ইংল্যান্ড)

সহজ ভাষায়, ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন কেভিন পিটারসেন। সব ফরম্যাটেই তিনি ছিলেন তুখোড়। ১০৪ টেস্টে তিনি ৪৭.৩ গড়ে করেন ৮১৮১ রান।

২০১১ টেস্ট ক্যারিয়ার লম্বা করার জন্য তিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটকে বিদায় জানান। তবে, দ্রুতই সিদ্ধান্ত পাল্টান ও সীমিত ওভারের দলে জায়গা ফিরে পান। ২০১৪ সাল অবধি তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন।

  • শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)

অবসর নেওয়া ও অবসর ভেঙে ফেরা – এখানে শহীদ আফ্রিদির ধারের কাছেও কেউ নেই। ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল অবধি, মানে দুই যুগের বেশি সময় তিনি পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।

২০০৬ সালে তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর আবার ফিরে আসেন, ২০১০ সালে দলে নেতৃত্বও পান। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে তিনি বোলিংয়ে বেশি মন দেন। ব্যাটিংয়ের চেয়ে এই সময় থেকে তিনি বোলিংয়েই বেশি কার্যকর ছিলেন। তবে, ‘সারপ্রাইজ’ অবসর নেওয়ায় তিনি ধারাবাহিক ছিলেন। এরপরও কমপক্ষে দু’বার তিনি অবসর নেন ও অবসর ভেঙে ‍ফিরেন।

  • ইমরান খান (পাকিস্তান)

অবসর ভেঙে ফিরে সবচেয়ে কার্যকর ছিলেন এই কিংবদন্তি। পাকিস্তানের বর্তমান এই প্রধানমন্ত্রী দেশটির ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে পরিচিত।

ইমরান ১৯৮৭ বিশ্বকাপের পর অবসর নিয়ে ফেলেন। তবে, অবসর ভেঙে ফিরেন। অধিনায়ক হিসেবে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জিতেন পাকিস্তানের হয়ে। তিনি দুই দশকের বেশি সময় ধরে খেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।

  • ডোয়াইন ব্রাভো (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার জন্য দীর্ঘ বিরতির পর অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন। বিশ্বকাপের আগে দলের হয়ে কিছু ম্যাচ খেলার পর অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপ দলেও রাখে ক্যারিবিয়ানরা।

তবে, মজার ব্যাপার হল ২০১৮ সালে তিনি ক্রিকেটের সব ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। তবে, ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর তিনি অবসর ভেঙে ফিরে আসেন। বিশ্বজুড়ে তিনি খেলে বেড়ান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। তাই লম্বা সময় বাদে ফিরলেও, ফর্মে মরচে পড়েছে সামান্যই।

  • জাভেদ মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের বিখ্যাত ক্রিকেটার, ব্যাট হাতে উপমহাদেশের অন্যতম সের। ছয়টা বিশ্বকাপ খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে, টেস্ট খেলেছেন ১২৪ টি। ক্যারিয়ারটা ২১ বছর দীর্ঘ।

১৯৯৬ বিশ্বকাপের আগেই তিনি অবসর নিয়ে ফেলেন। তবে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর অনুরোধে অবসর ভেঙে ফেরেন তিনি। ওই বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে খেলা ম্যাচটাই তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

  • আসিফ করিম (কেনিয়া)

২০০৩ সালের বিশ্বকাপটা কোনো ভাবেই তাঁর খেলার কথা ছিল না। কারণ, এরও অনেক আগেই তিনি অবসর নিয়ে ফেলেছিলেন। তবে, বোর্ডের অনুরোধে আসিফ করিম বিশ্বকাপ খেলতে ফিরেছিলেন, সেটাও অধিনায়ক হয়ে।

বাকিটা ইতিহাস। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা সাফল্য পায় কেনিয়া। প্রথমবারের মত চলে যায় সেমিফাইনালে। আর শেষ চারে ওঠায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন আসিফই।

  • এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)

২০১৮ সালের পর তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি। জানিয়ে দেন অবসরের সিদ্ধান্ত। তবে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট বিশেষ করে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) তিনি যেভাবে পারফরম করে যাচ্ছেন ব্যাট হাতে – তাতে এটুকু বোঝা যায় যে এবি ডি ভিলিয়ার্সের সুদিন এখনও ফুরায়নি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর ফেরার মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। কোচ মার্ক বাউচার চেয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স যেন বিশ্বকাপটা খেলে। ডি ভিলিয়ার্স আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও এটুকু বলেছিলেন, বিশ্বকাপ খেলতে তিনি প্রস্তুত। তবে, শেষ অবধি আর ব্যাটে-বলে হয়নি।

  • স্টিভ টিকোলো (কেনিয়া)

কেনিয়ার ইতিহাসের অবিসংবাদিত সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। বলা হয়, কেবল কেনিয়ায় জন্মেছিলেন বলেই তিনি টেস্ট খেলতে পারেননি। এর বাদে টেস্ট খেলার সকল যোগ্যতাই তাঁর ছিল। টিকোলো ২০১১ বিশ্বকাপ খেলে অবসন নেন। তখন, বয়স তাঁর ৩৯। ২০১২ সালে উগান্ডার ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিয়োগও পান।

তবে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলতে ৪২ বছর বয়সে তিনি অবসর ভেঙে ফিরেন বোর্ডের অনুরোধে। ২০১৩ সালে তিনি সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেন জাতীয় দলের হয়ে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...