সেই চেলসি, এই চেলসি

ছয় মাস আগেও যদি চেলসি সমর্থকদের বলতেন এই মৌসুমের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালিস্ট হবে তাঁরা, হেসে উড়িয়ে দিতো তারা। শুধু আজ নয়, নয় মৌসুম আগে ২০১২ সালের মাঝ মৌসুমে যদি চেলসি সমর্থকদের যদি বলতেন, ‘তোমরাই হবে ইউরোপের সেরা’  তাহরে সেটাও তাঁরা হেসে উড়িয়ে দিতো। সেবারও মৌসুমের মাঝপথে কোচ হোসে মরিনহোকে চাকরিচ্যুত করা হয়, ইংলিশ লিগে অবস্থান ছিল যাচ্ছেতাই।

ছয় মাস আগেও যদি চেলসি সমর্থকদের বলতেন এই মৌসুমের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালিস্ট হবে তাঁরা, হেসে উড়িয়ে দিতো তারা। শুধু আজ নয়, নয় মৌসুম আগে ২০১২ সালের মাঝ মৌসুমে যদি চেলসি সমর্থকদের যদি বলতেন, ‘তোমরাই হবে ইউরোপের সেরা’  তাহরে সেটাও তাঁরা হেসে উড়িয়ে দিতো। সেবারও মৌসুমের মাঝপথে কোচ হোসে মরিনহোকে চাকরিচ্যুত করা হয়, ইংলিশ লিগে অবস্থান ছিল যাচ্ছেতাই।

এবার অবস্থাটা ছিল আরো করুণ। কারণ, ২০১২ সালে অন্তত দিদিয়ের দ্রগবা, ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, ফার্নান্দো তোরেসের মত তারকা ছিল, এবার তাও নেই।

ভঙ্গুর চেলসি যখন নিজেদের শীর্ষ চার অবস্থানই ঠিক করতে পারছিল না, তখনই আশার আলো হয়ে এসেছিলেন থমাস টুখেল। আর তা থেকেই আজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। আজকের দিনটা চেলসি সমর্থকদের গলা ফাটিয়ে চিৎকার করার দিনই!

চেলসি নিজেদের পথ প্রথম লেগেই তৈরি করে এসেছিল। আলফ্রেডো ডি স্টেফানো স্টেডিয়া থেকে মহামূল্যবান একটা অ্যাওয়ে গোল নিয়ে ফেরত এসেছিল ব্লুজরা। দরকার ছিল নিজেদের মাটিতে এই লিডটা ডিফেন্ড করা। আর সেটুকু করেই উল্লাসে মেতেছেন থমাস টুখেল ও তার শিষ্যরা। টুখেল আসার পর হারের স্বাদ পেয়েছেন মাত্র দুইবার। আর সেই দুইবারই নিজেদের মাটিতে। তাই ভয়টা ছিলই। কিন্তু সেই ভয় কাটিয়েছেন তিনি রিয়াল মাদ্রিদকে রিয়াল মাদ্রিদ না হতে দিয়ে।

গতকাল রিয়ালকে দেখে মনেই হয়নি মাঠে রিয়াল মাদ্রিদ খেলছে। না ট্যাক্টিক্যালি কিংবা ফিজিক্যালি নয়; দর্শনেও মনে হয়নি এটা রিয়াল! রাজকীয় রিয়ালকে চেনা যায় দর্শনেই। সাদা শুভ্র জার্সি, আপাদমস্তক শুভ্র সাদা। কিন্তু গতকাল শুভ্র সাদা জার্সির সাথে বেখাপ্পা কালো মোজা পরে মাঠে নেমেছিল রিয়াল। প্রথম দর্শনেই যেন পিছিয়ে পরেছে রিয়াল। কিন্তু নামটা রিয়াল মাদ্রিদ, হেরে যাওয়ার আগে তারা কোনোদিন হারেনি। কিন্তু গতকাল যেন জিনেদিন জিদানের ভুলই রিয়ালকে পিছিয়ে দিয়েছে অনেকখানি।

টমাস টুখেলের ৩-১-৪-২ এর বিপরীতে ৩-৫-২ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন জিনেদিন জিদান। দলের তিন রাইট ব্যাক চোটের কারণে বাইরে থাকায় রাইট উইংব্যাক হিসেবে নামিয়ে দেন ভিনিস্যুস জুনিয়রকে। যে ভিনিসিয়ুস তার চিরচারিত পজিশনেই অমাবস্যার চাঁদ হয়ে যান, তাকে কীনা নামিয়ে দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পজিশনে?

সে সাথে চোট থেকে ফেরা সার্জিও রামোস আর ইডেন হ্যাজার্ড। রামোস তার স্বভাবসুলভ পারফরম্যান্স দিতে না পারলেও খুব একটা খারাপ ছিলেন না, কিন্তু হ্যাজার্ড ছিলেন আরেক অমাবস্যার চাঁদ। দুই অমাবস্যার চাঁদের মাঝে টিপ টিপ করে জ্বলা তারকারাজি আর কী করবে?

রিয়াল মিডফিল্ডের তারার মেলা একাই আটকে দিয়েছেন এন’গোলো কান্তে। এমনিতেই চোটের কারণে ম্যাচের পর ম্যাচ টানা খেলতে হচ্ছে রিয়াল মিডফিল্ডকে। আর সেই ক্লান্ত মিডফিল্ডকে একাই ধরে রেখেছিলেন কান্তে। কথায় কথায় পগবা একবার বলেছিলেন, তার সাথে খেলতে গেলে নাকিমনে হয় তার ১৫টা ফুসফুস। ভুল বলেননি কিছু। কান্তের ১৫ টাই ফুসফুস।

পুরো মাঠের এমন জায়গা নেই যেখানে তাকে দেখা যায়নি। পুরো মৌসুম যে মিডফিল্ডের উপর দিয়ে পার হয়ে এসেছে রিয়াল, সেই মিডফিল্ডকে এক কথায় অকেজো করে দিয়েছেন শুধুমাত্র তার পজিশনিং দিয়ে। এক মুহুর্তে ডিফেন্সে তো অন্য মুহুর্তে আক্রমণে।

কিন্তু কথাটা রিয়ালের ভুল নিয়ে নয়, বরং চেলসির খেলা নিয়ে। এই নিয়ে ষষ্টবারের মতন জিনেদিন জিদানের মুখোমুখি হলেন থমাস টুখেল। পিএসজিতে দুইবার বাদে প্রতিটি ম্যাচেই ট্যাক্টিক্যালি বিট হয়েছেন জিনেদিন জিদান। এর আগেও এর থেকে খারাপ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার গল্প লিখেছেন জিদান। কিন্তু কাল কিছুতেই কিছু কাজ করছিল না। পুরো ম্যাচে আক্রমণ বলতে একমাত্র বেনজেমাই বল নিয়ে ঢুকে পরেছিলেন ডিফেন্স ভেঙ্গে। সেটাই থেমে গিয়েছে মেন্ডি আর গোলবারের কাছে গিয়ে। টুখেল তার দলটাকে সাজিয়েছিলেন সেভাবেই।

টুখেলের অধীনে আরো ফুলে ফেপে উঠেছে ম্যাসন মাউন্টের ক্যারিয়ার। প্রথমে সকলে ভেবেছিল ল্যাম্পার্ডের আবিষ্কার না হারিয়ে যায় চেলসির লোন সিস্টেমের যাঁতাকলে পরে।

কিন্তু না, সেখান থেকে ঠিকই নিজেকে চেলসির মেইন ম্যান হিসেবে তৈরি করেছেন। আজকের ম্যাচটাই তার উদাহরণ, কান্তে রিয়ালের খেলা ভেনজ্ঞেছেন আর মাউন্ট খেলা সাজিয়েছেন। মিডফিল্ডে ক্রমাগত প্রেসিং করে যাওয়া চেলসির সামনে দাড়াতেই পারেনি রিয়াল। আর সেই সকল ক্রেডিট যাবে থমাস টুখেলের পকেটে।

ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলা নতুন কিছু নয়। অনেক কোচই পার করেছেন এই অধ্যায়। কিন্তু থমাস টুখেল পার করলেন একটু অদ্ভুতভাবে। পরপর দুই মৌসুমে দুইটি আলাদা দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলার অদ্ভুত রেকর্ড এখন তাঁর পকেটে।

পিএসজি থেকে বরখাস্ত হয়ে মাঝ সিজনে দায়িত্ব পেয়েছিলেন চ্চেলসির। আর ১০০ দিনের মাথাতেই তুলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে। এমনকি থিয়াগো সিলভারও একই এক্সপেরিয়ান্স। গত মৌসুমে যদিও ফাইনালে গিয়ে শিরোপার ছোঁয়া পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি কারোরই। এবার কী পারবেন টুখেল শিরোপা জিততে? চেলসি সমর্থকদের ২০১২ এর মতন আরেকটি দুঃখ দিয়ে শুরু করা মৌসুম আনন্দ দিয়ে শেষ করতে?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...