সমস্যার নাম ‘গোল’

আগামী বুধবার নেপালের বিপক্ষে ড্র অর ডাই ম্যাচে যেখানে জয়ের কোন বিকল্প নেই সেখানে সবচেয়ে বড় চিন্তার নাম স্ট্রাইকার সংকট। অনেকে দ্বিমত করতে পারেন এই বলে যে, দলে এতগুলো স্ট্রাইকার রয়েছে তারপরও সংকট কোথায়? যখন স্ট্রাইকাররা গোল করতে না পারে তখন তো সংকটই বলতে হবে। এই বলাতে কেউ আবার বাড়াবাড়ি কিছু খুজতে যাবেন না।

বাংলাদেশের ফুটবলে চিরায়ত সমস্যার নাম গোল। প্রতিপক্ষ ছোট কিংবা বড় যাই হোক না কেন সুযোগ তৈরি করতে পারলেও গোল করতে না পারাটা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম তিন ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখলে সহজেই সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।

আগামী বুধবার নেপালের বিপক্ষে ড্র অর ডাই ম্যাচে যেখানে জয়ের কোন বিকল্প নেই সেখানে সবচেয়ে বড় চিন্তার নাম স্ট্রাইকার সংকট। অনেকে দ্বিমত করতে পারেন এই বলে যে, দলে এতগুলো স্ট্রাইকার রয়েছে তারপরও সংকট কোথায়? যখন স্ট্রাইকাররা গোল করতে না পারে তখন তো সংকটই বলতে হবে। এই বলাতে কেউ আবার বাড়াবাড়ি কিছু খুজতে যাবেন না।

তিন ম্যাচে দুই গোল প্রতিপক্ষের জালে প্রবেশ করানোর বিপরিতে তিনটি গোল হজম করতে হয়েছে। আর যে দুটি গোল বাংলাদেশ করেছে সবগুলোই এসেছে ডিফেন্ডারদের কাছ থেকে। তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে, ষ্ট্রাইকাররা দলে থেকে করছেন টা কি। সাফের দলে দুজন ষ্ট্রাইকার রয়েছেন যারা সর্বশেষ বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) ফুটবলে ১০টি করে গোল করেছেন। তারা পারছেন না দলের প্রয়োজন মেটাতে।

এভাবেই যদি নেপাল ম্যাচে বাংলাদেশ খেলে তাহলে আরেকটা আসর থেকে বিদায় নিতে হবে গ্রæপ পর্বের গন্ডি পার হবার আগেই। ফুটবলপ্রেমীদের অনেকের প্রশ্ন, লিগে ১০ গোল করা দুইজনের তাহলে এই দশা! পেশাদার লিগে বিদেশীদের দাপটে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের গোল করর সুযোগ কমই থাকে। জাতীয় দলের ষ্ট্রাইকারদের গোল না পাওয়ার নেপথ্যের কারণ তো তাই-ই।

এরপরও লিগে যারা গোল করেছেন তাদেরও করুণ দশা লাল-সবুজ জার্সি গায়ে। গোল তো নেই-ই, সাথে একাদশেও হতে নিয়মিত খেলার মতো পারফরম্যান্স দেখাতে পারছেন না। আবার তাদের জাতীয় দলে না ডাকলে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কোচদের। এবারের বিপিএলে ১০টি করে গোল করেছেন উত্তর বারিধারার স্ট্রাইকার সুমন রেজা ও ঢাকা আবাহনীর জুয়েল রানা। অথচ মালদ্বীপ সাফের বাংলাদেশ দলে তারা নিয়মিত হতে পারছেন না। একাদশে থাকলেও ভাল খেলতে না পারার কারণে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছেন কোচ।

বদলি হিসেবে নামানোর পরও পারছেন না গোল নামক আরাধ্য বস্তুটিকে গলায় পড়তে। সুমন রেজা ও জুয়েল রানাকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের প্রথম একাদশে রাখা হয়। তবে কিছুই করতে পারেননি দুজনের কেউই। ফলে দু’জনকেই সেই ম্যাচে তুলে নেয়া হয় ম্যাচের মাঝামাঝি সময়ে। এরপর ভারতের বিপক্ষে সুমন রেজার বদলে মতিন মিয়া এবং জুয়েল রানার পরিবর্তে সাদ উদ্দিনকে একাদশে সুযোগ দেন অস্কার ব্রুজোন। সে ম্যাচে কোন রকমে ড্র করে বাংলাদেশ।

তৃতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ার পর বাংলাদেশ কোচ মাঠে নামান সুমন রেজা, জুয়েল রানা এবং মাহবুবুর রহমান সুফিলকে। কিন্তু তারা গোল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি। নেপাল ম্যাচের আগে অনুশীলন শেষে অবশ্য সুমন রেজা বলেছেন, ‘ক্লাব ফুটবল আর জাতীয় দলের হয়ে খেলা এক নয়। সে কারণেই আমি নেপালের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেলে অবশ্যই গোল করার চেষ্টা করব।’

অথচ এই সুমন রেজা গত মাসে কিরগিজস্থান অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে দর্শনীয় দুই গোল করে গোল স্কোরারের সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত দেন। ২০১৫ সালে জাতীয় দলে ডাক পান আবাহনী লিমিটেডে খেলা ফরোয়ার্ড জুয়েল রানা। এখনো পর্যন্ত তার কোনো গোল নেই লাল-সবুজ জার্সি গায়ে। তিনিও বুঝতে পারেছন না কেন বিপিএল-এ ১০ গোল করার পরও ভালো করতে পারছেন না এবারের সাফে।

যদিও জুয়েল বলেছেন, ’নেপালের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আমাদের জিততে হবে। এই ম্যাচে সুযোগ পেলে অবশ্যই গোল করতে চাই।’ কিন্তু প্রত্যাশার সাথে তো প্রাপ্তির তেমন একটা মিল খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। প্রথম তিন ম্যাচে কোন গোলই পায়নি স্ট্রাইকাররা।

অথচ ভারতের সুনীল ছেত্রী আর মালদ্বীপের আলী আশফাকরা নিয়মিতই গোল করে যাচ্ছেন। ছেত্রী তো ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলের ৭৮ গোল ছাড়িয়ে তার উপরে চড়ে বসেছেন ৭৯ গোল করে। নেপাল ম্যাচে তাই ষ্ট্রাইকাররা যে কিছুটা হলেও চাপে থাকবেন সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা। অথচ এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট পেয়ে ২০০৫ সালের পর আবারো ফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ।

তবে তৃতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের কাছে ২-০ গোলের হার সে স্বপ্নে কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফাইনাল খেলতে হলে এখন নেপালকে হারানোর পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য ম্যাচ গুলোর ফলাফলের দিকেও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে তপু বর্মন এবং ভারতের বিপক্ষে ইয়াসিন আরাফাতের সমতায় ফেরানো গোল বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। তবে ষ্ট্রাইকারদের গোলের দেখা না পাওয়া সমানতালে বাড়াচ্ছে দু:শ্চিন্তাও। তবে চাপে থাকলেও নেপালের বিপক্ষে হাফ চান্স থেকেই গোল করতে চায় মতিন, সুমন, সুফিলরা।

মালদ্বীপের কাছে যদি না হারদো তাহলে ফাইনাল খেলা নিয়ে খুব বেশি দু:শ্চিন্তা করতে হতো না বাংলাদেশকে। তবে সে ম্যাচে মালদ্বীপ যেখানে প্রায় ছয় দিনের বিরতিতে মাঠে নেমেছিল সেখানে বাংলাদেশ সাত দিনে খেলেছিল তিন নাম্বার ম্যাচ! যদিও আন্তর্জাতিক ফুটবলে স্বাগতিকরা এমন সুযোগ পেয়ে থাকেন। খেলোয়াড়দের কিছুটা চাপমুক্ত রাখতেই মালদ্বীপ ম্যাচ হারের পর দুই দিন অনুশীলন করাননি খেলোয়াড়দের।

কোচ অস্কার ব্রুজোন ট্যাকটিকস নিয়ে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সঙ্গে অনুশীলন শুরুর আগে আলোচনা করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই বল নিয়ে মাঠে জামাদেলকে সন্ধার পরও অনুশীলন করান। ২০১৮ সালের সাফে গ্রæপ পর্বে বাংলাদেশ ছিটকে গিয়েছিল এই নেপালের বিপক্ষে হেরে। গ্রুপ পেরুতে হলে সেই ম্যাচে জয়ের কোন বিকল্প ছিলনা। এবার তাই চাপমুক্ত থেকে খেলোয়াড়দের খেলাতে চান ব্রুজোন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...