কোথায় সেই বিরাটের ভারত!

ভারতীয় দলের এই শরীরি ভাষাটা খুব ভালোভাবে বর্ননা করেছেন ভারনন ফিল্যান্ডার। ধারাভাষ্যে সাবেক এই দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার বলছিলেন, ‘ভারতীয় খেলোয়াড়দের কাঁধ ঝুলে বরেছে। মনে হচ্ছে, ওরা একটা স্লো মোশন কিছুর ভেতর দিচ্ছে যাচ্ছে। খেলায় ফেরার জন্য আমি কাউকে দেখলাম না যে, বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করছে।’

কাঁধ  ঝুলে পড়েছে। বলের ওপর কারো যেনো চোখ নেই। মাঠে চিৎকার নেই। কেবল কিছু ঘটার অপেক্ষায় আছেন খেলোয়াড়রা।

এ যেনো এক অচেনা ভারত।

অন্তত বিরাট কোহলির জামানায় এমন ভারতীয় দল দেখা যায়নি। বিরাট কোহলির ব্র্যান্ডই ছিলো আগ্রাসন। বলে বলে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা। চিৎকার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা। বিরাট কোহলির চোখ কথা বলতো।

আর এই জিনিসটাই গত দুটো ওয়ানডেতে ভারতীয় দলে মিসিং। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এই দলটা সেই বিরাটের দল নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ দুটি ওয়ানডে ভারত হেরেছে, সেটা খুব বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, ধারাভাষ্যকাররা ও বিশ্লেষকরা পরিষ্কার বলছেন যে, ভারতীয় দলের আচরণে সেই আগ্রাসণ একেবারেই নেই।

যেমন সুনীল গাভাস্কার ধারাভাষ্যে বলছিলেন, ‘একটা জুটি প্রতিপক্ষ করে ফেললেই লোকেশ রাহুলকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় মনে হয়েছে। ওমে হয়েছে, ওর আসলে আইডিয়ার অভাব পড়েছে।’

দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার শন পোলক বলছিলেন, ‘এই ভারতীয় দল কিছু ঘটার জন্য অপেক্ষা করছে। নিজেরা কিছু ঘটানোর চেষ্টা করছে না।’

এই দুটো কথাই আসলে বলে দেয় যে, বিরাট কোহলি নেতৃত্বে নেই। তার সময়ে ভারতীয় দল এরকম ‘ক্লুলেস’ আচরণ করবে, এটা কল্পনাও করা যেতো না। মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যবধানে সেই দলটা এখন হতবাক একটা আচরণ করছে।

ভারতীয় দলের এই শরীরি ভাষাটা খুব ভালোভাবে বর্ননা করেছেন ভারনন ফিল্যান্ডার। ধারাভাষ্যে সাবেক এই দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার বলছিলেন, ‘ভারতীয় খেলোয়াড়দের কাঁধ ঝুলে বরেছে। মনে হচ্ছে, ওরা একটা স্লো মোশন কিছুর ভেতর দিচ্ছে যাচ্ছে। খেলায় ফেরার জন্য আমি কাউকে দেখলাম না যে, বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করছে।’

কিন্তু কথা হলো, অধিনায়কত্ব না থাকলেও বিরাট কোহলি দলে তো আছেন। তাহলে তিনি অন্তত সিনিয়র হিসেবে দলকে এটুকু পুশ করছেন না কেনো?

এখানে কোহলিকে দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি ‘ক্যাপ্টেন বিরাট’ আর নেই। সবসময় এনার্জিতে টগবগ করতে থাকা বিরাট কোহলিকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। খেলোয়াড় বিরাট কিছুতেই এখন পর্যন্ত অন্তত ক্যাপ্টেন বিরাট হিসেবে এগিয়ে আসতে পারছেন না। আসল ব্যাপার হলো, সেটা আশা করাও কঠিন।

মাত্রই খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে সব ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন। ওয়ানডেতে চালিয়ে যাওয়াটা তার পরিকল্পনাতেই ছিলো। সেখানে নিজেকে হুট করে এমন একটা অবস্থায় আবিষ্কার করে তিনি যে স্বরূপে থাকতে পারবেন না, এটা বোঝাই যায়। সঞ্জয় মাঞ্জরেকার বলছিলেন, ‘ভারতীয় দলে এবং বিরাটের মনে কী চলছে, সেটা তাদের শরীর পরিষ্কার বলে দিচ্ছে। এরপর আর কারণ খোজার কোনো অর্থ নেই।’

এখানে আসলে নতুন অধিনায়ককে এগিয়ে আসতে হতো। কিন্তু নতুন অধিনায়ক রোহিত শর্মা ইনজুরিতে খেলতে পারছেন না। তার ডেপুটি লোকেশ রাহুল মারাত্মক গুটিয়ে গেছেন। তিনি এখান থেকে যেন পালাতে পারলে বাঁচেন।

লোকেশের এই আচরণে বিরক্ত গাভাস্কার বলছিলেন, ‘অধিনায়কত্ব আপনাকে তো স্বাধীনতা দেয়। আপনাকে অধিনায়কত্ব দায়িত্ব দেয়। কিন্তু অধিনায়কত্ব পেয়ে এভাবে নুইয়ে গেলে তো চলবে না। লোকেশের অধিনায়ক হিসেবে আসলে অনেক উন্নতি করতে হবে।’

অবশ্য অনেকে মনে করছেন, ভারতীয় দলটা এভাবে নুইয়ে পড়ার কারণ ঠিক অধিনায়কত্ব নয়। এটা আসলে টানা বায়ো বাবলে থাকার প্রভাব। অন্তত তেমন করে সময়টাকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন লোকেশ রাহুণ নিজে।

কিন্তু বিরাট কোহলির অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মত করে ধরা দেওয়ার পর এই যুক্তি কী আর চলে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...