দৈন্যতার ইনিংস উদ্বোধন

ওপেনিংয়ের দৈন্য দশায় শেষমেশ জিম্বাবুয়ের কাছেও ভুগতে হচ্ছে। অথচ নতুনদের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হচ্ছেনা। এখন মনে হচ্ছে তামিমকেও কিছু কিছু ম্যাচে বিশ্রাম নিতে হবে। আর লিটনের আজকের ইনিংস বার্তা দিচ্ছে আরও দুই সিরিজ দলে জায়গা পাকাপোক্ত হয়েছে আর অযথাই নাইমের বিশ্রামে থাকা নিশ্চিত। অন্যভাবে বললে বিনাদোষেই কপাল পুড়লো তাঁর। বিশ্রামে থেকেই জং ধরুক নাইমের শরীরেও ব্যাটিংয়ে। এভাবেই নষ্ট হোক আরেকজন তরুণ। আমাদের তাতে কি আসে যায়?

২০২০ সালে দেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ বাদ দিলে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে সবশেষ পঞ্চাশোর্ধ জুটি এসেছে ২০১৯ বিশ্বকাপে উইন্ডিজদের বিপক্ষে। সেখানে রানের সংখ্যা ছিলো ৫২। তামিমের সঙ্গী ছিলেন সৌম্য সরকার। তামিম কিংবা সৌম্য কেউই বিশ্বকাপে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি।

ফলশ্রুতিতে বেশিরভাগ ম্যাচেই নড়বড়ে শুরুতে বিপাকে পড়তে হতো দলকে। ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে সময়টা তো করোনায় গেলো। এরপরের অবস্থা জানা আছে কারো ? মানে ওপেনিংয়ের দশা কেমন ছিলো ২০২১ সালে? না জানা থাকলে নীচের সংখ্যা গুলো পড়তে থাকুন।

১৫, ২, ৫, ১৯, ৪, ১০, ৪৭, ৩০, ১, ০… এই সংখ্যাগুলো আজকের দিনের ম্যাচসহ ২০২১ সালে বাংলাদেশের খেলা সবগুলো ওডিআই ম্যাচের ওপেনিং জুটির রান। সবগুলো ম্যাচেই তামিমের সঙ্গী ছিলো লিটন। আজকের পূর্বে ২০২১ সালে লিটনের সর্বোচ্চ রান ছিলো ২৫। লিটন সম্ভবত বড় ধন্যবাদটা নির্বাচকদের দিবেন। লিটনের প্রসঙ্গ আনলে আরেকজনের নাম চলে আসে, আর তিনি হলে না নাইম।

যার উপর আজকের ম্যাচে হলো অবিচার। অনুমেয় ছিলো এই সিরিজে লিটন খেলতে পারবেন না, জায়গা হারাবেন নাইমের কাছে। কিন্তু, মুশফিকের পারিবারিক কারণে দেশে ফেরত আসার ঘটনায় লিটনের একাদশে সুযোগে দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়, আর তাতে নাইম বাদ পড়ার সম্ভাবনা অযৌক্তিকভাবেই তৈরি হয়। স্পষ্টভাবে বললে, লিটনের অন্তর্ভূক্তি আর নাইমের বাদ পড়া দুটোই অযৌক্তিকভাবে হয়েছে।

লিটনকে খর্বশক্তির জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামিয়ে ফর্মে ফেরাতে মরিয়া ভাব প্রকাশ করেছে নির্বাচকরা। সেক্ষেত্রে তারা সফল কিনা তা বুঝতে পারবো সিরিজ শেষে। তারপরেও আজকের ইনিংসের জন্য লিটনকে পুরোপুরি সাধুবাদ জানানো কঠিন। লিটনের ইনিংস ছিলো সম্পূর্ণ তার স্বভাব বিরুদ্ধ। লিটনের বলের চেয়েও রান বেশি করেন।

আজকের ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রানে ফেরার তাগিদে ধীরগতির ব্যাটিং করলেন। রঙিন পোশাকে লিটনের এমন ব্যাটিং দৃষ্টিকটু। রানের খাতা খুলতেও সময় নিয়েছেন বেশ। শেষে যদিও টেনে নিয়েছেন। তারপরেও ভালো দিক একটা রয়েছে, তা হলো প্রান্ত বদলে লিটন পটু ছিলেন। তবুও, নাইমের সাথে যে অবিচার হলো আর তাতে নাইমের মনস্তাত্ত্বিক চাপ বাড়লো এবং আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়লো। দায়টা কে নিবে?

এভাবে একজন ক্রিকেটার নষ্ট হয়ে যেতে পারেন।

উচিত ছিলো আজও নাইমকে পরীক্ষা করা আর লিটনকে দুই সিরিজ বসানো। একজনকে ফর্মে ফেরানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করা ভালো। তবে দিনের পর দিন ম্যাচ খেলিয়ে উঠেপড়া লাগাটা ভুল। এক্ষেত্রে অন্যান্যরা তো উপেক্ষিত হচ্ছে। আর বড় ক্ষতিটা হচ্ছে দলের।

লিটনের উপর আস্থা রাখেন ম্যাচের পর ম্যাচ আর নাইম কেবল এক ম্যাচ ? এগুলো সুবিচার নয়। নাইম তো অযথাই উপেক্ষিত হলো। এমন নয় যে, বছরজুড়েই তামিম-লিটনের ব্যাটিংয়ে হেসে খেলে ম্যাচ জয় করে যাচ্ছিলো বাংলাদেশ। উল্টো দিনে-দিনে দূর্বল ওপেনিংয়ে বাড়ছিলো বিপদ।

যাই হোক, গত দুই বছর তামিমের সঙ্গী সৌম্য-লিটন পুরোপুরি ব্যর্থ। তামিম নিজেও যে খুব ভালো করেছেন তার নজির নেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০২০ সালে দুই শতকের পর ম্যাচ জেতানো কোনো পারফরম্যান্স তামিমের কাছ থেকে আসেনি। শ্রীলঙ্কা আর নিউজিল্যান্ড সিরিজে তামিমের ইনিংসগুলোকে পরিস্থিতি অনুযায়ী বিচার করে দেখুন, উত্তর পেয়ে যাবেন। বাহবা দেওয়ার সুযোগ আপনি তামিমের বেলায়ও পাবেন না। বরঞ্চ আপনার মন ছোটো হতে বাধ্য! এমন দৈন্যদশা দেখে।

এভাবে, ওপেনিংয়ের দৈন্য দশায় শেষমেশ জিম্বাবুয়ের কাছেও ভুগতে হচ্ছে। অথচ নতুনদের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হচ্ছেনা। এখন মনে হচ্ছে তামিমকেও কিছু কিছু ম্যাচে বিশ্রাম নিতে হবে। আর লিটনের আজকের ইনিংস বার্তা দিচ্ছে আরও দুই সিরিজ দলে জায়গা পাকাপোক্ত হয়েছে আর অযথাই নাইমের বিশ্রামে থাকা নিশ্চিত। অন্যভাবে বললে বিনাদোষেই কপাল পুড়লো তাঁর। বিশ্রামে থেকেই জং ধরুক নাইমের শরীরেও ব্যাটিংয়ে। এভাবেই নষ্ট হোক আরেকজন তরুণ। আমাদের তাতে কি আসে যায়?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...