ইংল্যান্ড ক্রিকেটের সুয়োরানী-দুয়োরানী!

ইনটেন্ট বলে একটা শব্দ আজকাল ক্রিকেটে খুব চলে। ইংল্যান্ড টেস্ট দলের অভিধানে বোধহয় শব্দটাই নেই। বা যে পাতায় ছিল, সেটি ইয়ন মরগ্যান এসে ছিঁড়ে নিয়ে গেছেন। ডেভিড গাওয়ার যে ইংলিশ অধিনায়ক রুটের একটি সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। রুটের গলার কাছে মনে হলো কান্না দলা পাকিয়ে রয়েছে। গাওয়ার পরে বলছিলেন, ‘রুট কে কি দোষ দেবো ? ও তো ইসিবির দুয়োরানী। যা যা চায় তার প্রায় কিছুই পায় না। আর মরগ্যানকে জামাই আদরে রেখেছে। ও যখন যে প্লেয়ার চায়, তাকেই পায়। রুটের বেলায়, বিশ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

১৯৩৬ সালে ভারতের কুখ্যাত বিলেত সফরের পর উইজডেনের সফরপঞ্জি লেখে, ‘এরা একটা দেশের টেস্ট দল, মানতে কষ্ট হয়।’ আজ ৮৬ বছর পর ইংল্যান্ডের অ্য শেজ অভিযান নিয়ে উইজডেন কি লিখেছে এখনও অবধি জানা নেই। তবে এই সিরিজের পর আমার মানতে কষ্ট হচ্ছে, জো রুটের নেতৃত্বাধীন ছেলেগুলো একটি টেস্ট দলের অঙ্গ।

আরেকটা ঘটনা মনে পড়লো। ফিল টাফনেল সেদিন অসম্ভব ভালো বোলিং করছেন। সম্ভবত ওভাল ১৯৯৭ এর ঘটনা। তা ইয়ান চ্যাপেল ধারাভাষ্যে বললেন, ‘টাফনেল যখন বল করে, তখন ইংল্যান্ডের একটা বাড়তি সুবিধা হয়। কারণ তখন ওকে ফিল্ডিং করতে হয় না।’ আজকের ইংল্যান্ডকে নিয়েও একই রকম ভাবে বলা যায়, এরা যখন বোলিং করে তখন নিরপেক্ষ দর্শক হিসাবে একটা বাড়তি সুবিধা, এদের ব্যাটিং দেখতে হয় না।

স্কট বোলান্ডকে ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীর সেভাবে মনে থাকার কথা নয়। ভারতের সাথে বেশ কয়েকটা ওয়ানডে খেলেছেন। কোহলি ও কোম্পানি তাঁকে একরকম চিবিয়ে খেয়েছে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর গড় মেরেকেটে ২৬। বয়েস ৩২। হেজেলউড, রিচার্ডসনরা চোট না পেলে তাঁর ভাগ্য শিকেয় ছিড়তো না। এই সিরিজে তাঁর বোলিং গড় ৯.৫৫। সিরিজে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং বিক্রম বোঝাতে এইটুকুই যথেষ্ট ছিল।

লেজুড় হিসাবে আরো দু একটা তথ্য দি। এই সিরিজে ইংল্যান্ড ২০০ পেরিয়েছে মোট ৪ বার। তিনশো একবারও পেরোয়নি। অর্থাৎ ১০ ইনিংসে ৬ বারই ইংল্যান্ড ২০০র কমে অল-আউট হয়েছে। মেলবোর্নে দ্বিতীয় ইনিংসের ৬৮ তাঁদের শিরোস্ত্রাণে উজ্জ্বলতম পালক।

সেই ক্যামেরন গ্রিন, যিনি ভারতের বিরুদ্ধে ২৬৪ বল করে একটিও উইকেট পাননি, তিনি এই সিরিজে ১৫.৭৬ গড়ে ১৩টি উইকেট পেয়েছেন। এক বছরে যতই উন্নতি তাঁর হয়ে থাকুক, বোলিং মরুভূমি থেকে বোলিং পাহাড়চূড়োয় তিনি ইংল্যান্ডকে না পেলে এতো সহজে পৌঁছতে পারতেন? জানি না।

এবার ইংরেজ বোলাররা এতো ভালো বল করলেন। চতুর্থ ইনিংসে ২৭১ সহজ নয় মেনে নিলাম। কিন্তু ৬৮ রানে ০ উইকেট থেকে ১২৪ রানে অল-আউট ! ব্যাপারটা স্কুল ক্রিকেটে হলে আহা-উহু করার জায়গা থাকে। টেস্ট ক্রিকেটেও এক-দু বার মেনে নেওয়া যায়। যেমন ভারতের ৩৬। কিন্তু বারবার একটি দল একই ভুল করে গেলে, স্বয়ং ক্রিকেট দেবতাও তাদের ক্ষমা করবেন না।

ইনটেন্ট বলে একটা শব্দ আজকাল ক্রিকেটে খুব চলে। ইংল্যান্ড টেস্ট দলের অভিধানে বোধহয় শব্দটাই নেই। বা যে পাতায় ছিল, সেটি ইয়ন মরগ্যান এসে ছিঁড়ে নিয়ে গেছেন। ডেভিড গাওয়ার যে ইংলিশ অধিনায়ক রুটের একটি সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। রুটের গলার কাছে মনে হলো কান্না দলা পাকিয়ে রয়েছে। গাওয়ার পরে বলছিলেন, ‘রুট কে কি দোষ দেবো ? ও তো ইসিবির দুয়োরানী। যা যা চায় তার প্রায় কিছুই পায় না। আর মরগ্যানকে জামাই আদরে রেখেছে। ও যখন যে প্লেয়ার চায়, তাকেই পায়। রুটের বেলায়, বিশ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিলো, এ তো রাজনীতির মতো। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল যে রাজ্য শাসন করছে, তাদের সুযোগ সুবিধা বেশি। বিরোধীদের ক্ষেত্রে খানিক কম।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেনো এই হাল? আর কি ভাবে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে? প্রথমটার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যায়। নাসের হুসেন একবার ২০১১ নাগাদ বলেন, ‘ইসিবি টেস্ট ক্রিকেটে এতো গুরুত্ব দেয়, যে ওয়ানডে ক্রিকেটে এখনও ১০ বছর পিছিয়ে ইংল্যান্ড।’

সেসময় ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটে সেরা। সদ্য অ্যাশেজ জয়ী। বর্তমানে ব্যাপারটা উল্টে গেছে। এর থেকেই আসে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর। ইসিবি যদ্দিন না তিন ফরম্যাটের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য খুঁজে পাচ্ছে, তদ্দিন হাল পাল্টানোর নয়। এই এশেজের পর সেদিকে ইসিবি নজর দেবে কিনা সময়ই বলবে। না দিলে আর কি? রুটের কান্না কান্না গলায় আরো সাক্ষাৎকার দেখার জন্যে প্রস্তুত থাকুন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...