১০০-তে ১০০

শততম ম্যাচ সবসময়ই স্মৃতিময় একটা ব্যাপার। আর সেই ম্যাচে জয় পাওয়াটা যেনো যেকোনো দলের জন্যই বড় একটা ব্যাপার। বিশ্বক্রিকেটে অর্জনের খাতায় খুব বেশি কিছু না থাকলেও এই শততম ম্যাচে জয় নিয়ে নিজেদের সফলতার ছোট্ট গালিচাটা কিছুটা লম্বা করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি - তিন ফরম্যাটেই নিজেদের শততম ম্যাচে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল।

শততম ম্যাচ সবসময়ই স্মৃতিময় একটা ব্যাপার। আর সেই ম্যাচে জয় পাওয়াটা যেনো যেকোনো দলের জন্যই বড় একটা ব্যাপার। বিশ্বক্রিকেটে অর্জনের খাতায় খুব বেশি কিছু না থাকলেও এই শততম ম্যাচে জয় নিয়ে নিজেদের সফলতার ছোট্ট গালিচাটা কিছুটা লম্বা করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল।

টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি – তিন ফরম্যাটেই নিজেদের শততম ম্যাচে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। স্মৃতিতে রাখা সেই জয়গুলো আরেকবার পরখ করে নেই চলুন।

  • শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয়

হারারেতে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৮ উইকেটের দুর্দান্ত জয় পায় বাংলাদেশ। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজুর রহমানের অসাধারণ বোলিংয়ে ১৫২ রানে গুড়িয়ে যায় স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে।

রেগিস চাকাভার ২২ বলে ৪৩ আর ডিওন মেয়ার্সের ২২ বলে ৩৫ ছাড়া কেউই বড় রান করতে পারেননি। ওয়েসলে মাধেভেরে ২৩ বলে করেন ২৩ রান। জিম্বাবুয়ের পক্ষে মাত্র চার ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের কোটা পেরোতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের পক্ষে মুস্তাফিজ ৩১ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২৩ রানে ও শরিফুল ইসলাম নেন ১৭ রানে দু’টি করে উইকেট।

জবাবে ১৫৩ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ওপেনিং জুটিতেই ১০২ রান সংগ্রহ করে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও নাইম শেখ। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবার ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি গড়লো সৌম্য-নাইম। ৪৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫০ রানে সৌম্য রান আউটের শিকার হয়ে ফিরলে প্রথম উইকেটের পতন ঘটে।

এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১২ বলে ১৫ রান করে তিনি শিকার হন রান আউটে। তবে বাকি পথটা সহজেই পাড়ি দেন নাইম শেখ ও নুরুল হাসান সোহান। নাইম তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। শেষ পর্যন্ত নাইমের অপরাজিত ৫১ বলে ৬৩ আর সোহানের ৮ বলে ১৬ রানে ভর করে সাত বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটের সহজ জয় পায় বাংলাদেশ। এই দুর্দান্ত জয়ে নিজেদের শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ দল।

  • শততম ওয়ানডে ম্যাচে জয়

২৬ ডিসেম্বর ২০০৪। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নিজেদের শততম ওয়ানডেতে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে নেমে শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে স্বাগতিকরা। ৩৭ রানে ৩ উইকেটের পর মোহাম্মদ আশরাফুল ও হাবিবুল বাশারের ৪৪ রানের জুটিতে চাপ সামাল দেয় বাংলাদেশ। এরপর ৭ রানের ব্যাবধানে আরো ২ উইকেট গেলে ৮৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে স্বাগতিকরা। একপ্রান্তে আফতাব আহমেদ ভীত গড়লেও বাকিরা ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে। ষষ্ঠ উইকেটে আফতাব ও খালেদ মাসুদের ৪৪ রানের জুটির পথে একশোর কোটা পেরোয় বাংলাদেশ দল।

এরপর খালেদ মাসুদ ২০ রানে আউট হলে ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। একপ্রান্ত আগলে রেখে অসাধারণ এক ফিফটি তুলে নেন আফতাব আহমেদ। দলীয় ১৬৮ রানে আফতাব ব্যক্তিগত ৬৭ রানে ফিরলে ৭ম উইকেটের পতম ঘটে বাংলাদেশের। শেষদিকে মাশরাফির অপরাজিত ৩১ রানে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ দল। ভারতের পক্ষে মুরালি কার্তিক, জহির খান ও অজিত আগারকার দুটি করে উইকেট শিকার করেন।

জবাবে লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন বীরেন্দ্র শেবাগ। এরপর দলীয় ৫ রানেই ফিরেন যুবরাজ সিং। তৃতীয় উইকেটে ৪৫ রানের জুটির পথে দলীয় ৫১ রানে ব্যক্তিগত ২২ রানে আউট হন সৌরভ গাঙ্গুলি। কিছুটা চাপে তখন সফরকারীরা। একপ্রান্তে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে শ্রীধরন শ্রীরাম তুলে নেন ফিফটি। দলীয় ১১৪ রানে শ্রীরাম ব্যক্তিগত ৫৭ রানে ফিরলে দ্রুত ফেরত যান দীনেশ মঙ্গিয়াও। ১৩১ রানেই ৫ উইকেট হারায় সফরকারী ভারত। একপাশে মোহাম্মদ কাইফ ভীত গড়লেও বাকিরা কেউই উইকেটে থিতু হতে পারছিলেন না। দলীয় ১৫৫ রানে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও ১৭০ রানে কাইফ ফিরলে ভারতের অবস্থান দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৭০ রান!

কাইফ ফিরেন ব্যক্তিগত ৪৯ রানে। দলের সাথে ২ রান যোগ করতেই আউট অজিত আগারকারও! সমীকরণ তখন ৫৫ বলে ভার‍তের জিততে প্রয়োজন ৫৮ রান! বাংলাদেশের দরকার মাত্র দুই উইকেট। বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাই তখন চোখ রাঙাচ্ছিলো। এরপর নবম উইকেটে ৩২ রানের জুটিতে আবারো ভার‍তকে আশা জাগায় জোগিন্দর শর্মা ও জহির খান। তবে দুই ওভারের ব্যবধানে জহির খান ও মুরালি কার্তিকের বিদায়ে ১৫ রানের অসাধারণ এক জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। নিজেদের শততম ওয়ানডেতে দুর্দান্ত এক জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ দল।

  • শততম টেস্টে জয়

১৫ মার্চ, ২০১৭। কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দীনেশ চান্দিমালের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রানে থামে লঙ্কানদের ইনিংস। দীনেশ চান্দিমালের ১৩৮ রানের সেই দুর্দান্ত ইনিংস ছাড়া লঙ্কানদের পক্ষে প্রথম ইনিংসে কেউই পেরোতে পারেননি চল্লিশের কোটা। বাংলাদেশের পক্ষে মিরাজ ৩টি উইকেট নেন। এছাড়া সাকিব, মুস্তাফিজ ও শুভাশিস রয় নেন ২ টি করে উইকেট।

নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সাকিব আল হাসানের অনবদ্য এক সেঞ্চুরি আর সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম ও মোসাদ্দেক হোসেনের ফিফটিতে ৪৬৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। এক সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটি ছাড়াও তামিম ইকবাল করেন ৪৯ রান। লঙ্কানদের পক্ষে রঙ্গনা হেরাথ ও লাকসান সান্দাকান নেন ৪ টি করে উইকেট। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের চেয়ে ১২৯ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে লঙ্কানরা।

দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কানদের ওপেনিং জুটিতেই আসে ৫৭ রান। এরপর উপুল থারাঙ্গা ফিরলেও দ্বিমুথ করুনারত্নে ও কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে এগোতে থাকে লঙ্কানরা। দ্বিতীয় উইকেটে জুড়ে দেন ৮৬ রান! বাংলাদেশের নেওয়া ১২৯ রানের লিড সহজেই টপকে বড় টার্গেটের দিকে এগোয় লঙ্কানরা। এরপরই সাকিব-মুস্তাফিজের দাপুটে বোলিংয়ে ১৪৩ রানে ১ উইকেট থেকে ১৯০ রানেই ৬ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

মাত্র ৪৭ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে লঙ্কানরা। একপ্রান্তে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নিলেও সপ্তম উইকেটে ২৭ রানের জুটির পথে করুনারত্নে ১২৬ রানে ফিরলে বাংলাদেশের সামনে জয়ের আশা জেগে উঠে। দলীয় ২১৭ রানে ৭ আর ২৩৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচে তখন ধুঁকছে লঙ্কানরা। বাংলাদেশের সামনে তখন মাত্র ৮৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড় করাতে পেরেছে স্বাগতিকরা।

শততম টেস্টে জয়ের স্বপ্নটা বাস্তবে রুপ নিচ্ছিলো! এরপর নবম উইকেটে দিলরুয়ান পেরেরা আর সুরঙ্গা লাকমলের ৮০ রানের জুটি ম্যাচের চিত্র পালটে দেয়! পেরেরা তুলে নেন অসাধারণ এক ফিফটি! তবে মাত্র চার বলের ব্যবধানে পেরেরা ও লাকমল আউট হলে ৩১৯ রানেই গুড়িয়ে যায় লঙ্কানরা। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব ৪ ও মুস্তাফিজ নেন ৩ উইকেট।

শেষদিনে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় মাত্র ১৯১ রানের! জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিং জুটিতে আসে ২২ রান। এরপর দলীয় ২২ রানে একই ওভারে পরপর দুই উইকেট তুলে নিয়ে লঙ্কানদের ম্যাচে ফেরান রঙ্গনা হেরাথ। তবে তৃতীয় উইকেটে ৯১ রানের জুটিতে সহজ জয়ই চোখ রাঙাচ্ছিলো বাংলাদেশের সামনে। তামিম তুলে নেন দুর্দান্ত ফিফটি। এরপর দলীয় ১৩১ রানে ব্যক্তিগত ৮২ রানে তামিম ইকবাল আউট হন।

বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ৬০ রান, হাতে ৭ উইকেট। এই সহজ সমীকরণ টপকাতে গিয়ে দলীয় ১৪৩ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় সফরকারীরা। সাব্বির রহমান ফেরেন ব্যক্তিগত ৪১ রানে। পঞ্চম উইকেটে ১৯ রানের জুটির পথে সাকিব ফেরেন মাত্র ১৫ রানে। তখনো ৫ উইকেটে দরকার মাত্র ২৯ রান! ৬ষ্ঠ উইকেটে মুশফিকুর রহিম ও মোসাদ্দেক হোসনের ২৭ রানের জুটি জয় সহজ করে দেয় বাংলাদেশের। শেষদিকে মোসাদ্দেক ফিরলেও ৪ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরায় বাংলাদেশ দল।

শততম ওয়ানডে ম্যাচে জয়ের পর শততম টেস্টেও জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এরপর বাকি ছিলো শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আট উইকেট অসাধারণ এক জয়ে তিন ফরম্যাটেই নিজেদের শততম ম্যাচে জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ দল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...