ইয়াও মিং: মিমস ম্যাটেরিয়ালের বাইরেও যিনি অনন্য

২০১০ সালে এক ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তার এক সাংবাদিক বন্ধু’র তোলা ছবি যা পরবর্তীতে একজন চাইনিজ কার্টুনিস্টের ছোঁয়ায় পায় ভিন্নরূপ। ওই ছবিটি ফেসবুকে গিয়ে ভাইরাল হতে সময় নেয়নি!

পুরো বিংশ শতাব্দীতে যা ছবি তোলা হয়েছে তার দ্বিগুনেরও বেশি ছবি একবিংশ শতাব্দীর এক চতুর্থাংশ সময়েই তোলা শেষ। ছবি তোলা আজকাল হাঁচির চেয়েও স্বাভাবিক। হেঁচকি প্রতিদিন না উঠলেও ছবি তোলা হয়। এদের মাঝে কোন কোনটি তৈরি করে ইতিহাস, কোনটি জন্ম দেয় মিশ্রানুভূতির।

‘ইয়াও মিং’ নামের চীনা ক্রীড়াবিদের অবস্থাও এমন ! খুশি হবেন নাকি বেজার, ভাবতে ভাবতে অবসরও নিয়ে নিলেন। তিনি ভাবতে পেরেছেন কি না তা আমরা জানি না, আমরা জানতে চাই তাঁকে, তাঁর সত্যিকারের সত্ত্বাকে। ছবির আগে পরের এক বাস্কেটবল তারকাকে। মানুষ বাঁচে তার কর্মে, ছবিতে নয়, বয়সে নয় আর কি।

ইয়াও মিং। একজন সফল চাইনিজ অ্যাথলেট। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান মিং বিখ্যাত তার উচ্চতার কারণে! ৭ ফিট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার মিংয়ের রক্তেই রয়েছে বাস্কেটবল খেলা। বাবা মা দুজনই পেশাদার বাস্কেটবলার ছিলেন। মজার ফ্যাক্ট, অস্বাভাবিক উচ্চতাও তার জিনগত! বাবার হাইট ৬ ফিট ৭, মায়ের ৬ ফিট ৩!

তাঁর স্ত্রী ইয়ে লি’র উচ্চতাও ৬ ফিট ৪ ইঞ্চি এবং সেও একজন বাস্কেটবল তারকা। ১৯৮০ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর সাংহাইয়ে জন্ম নেওয়া এই তারকা ক্যারিয়ার শুরু করেছেন ‘সাংহাই শার্কসের’ হয়ে। গতি, জাম্পিং, টেকনিক্যাল প্লেয়িংয়ে তুষ্ট করেছেন সবাইকে।

২০০২ সালে এনবিএতে (ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন) ‘হাউস্টন রকেটের’ হয়ে অভিষিক্ত হন। ইয়াও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পাঁঁচবার এনবিএর অলস্টার টিমে স্থান পেয়েছেন। চাইনিজ বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন (সিবিএ) তাকে তাদের হল অব ফেমেও জায়গা দিয়েছে। ইয়াও এনবিএর ইতিহাসের তারসময়ের সবচে লম্বা এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ উচ্চতার খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। আয় এবং জনপ্রিয়তায় টানা ছয়বার ঠাঁই মিলেছে ফোর্বস ম্যাগাজিনের চাইনিজ সেলিব্রেটির ছোট্ট তালিকায়।

মিংয়ের ক্যারিয়ারে অর্জন যথেষ্ট সমৃদ্ধ। তন্মধ্যে নিঃসন্দেহে সেরা সাফল্য ২০০১, ০৩ ও ‘০৫ সালে টানা তিনবার দেশকে এশিয়ান বাস্কেটবলের স্বর্ণ জেতানো। এমনকি তিনটি টুর্নামেন্টেই তিনি পেয়েছিলেন মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের খেতাব। একজন সফল অ্যাথলেটের ক্যারিয়ার আরেকটু দীর্ঘ হতে পারত।

কিন্তু, গোড়ালির চোটে ৩১ বছর বয়সেই অবসর নেন। ২০১১ সালের ২০ জুলাই নিজ শহর সাংহাইয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি। তার সমন্ধে এনবিএর প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘সে মেধা, পরিশ্রম, ডেডিকেশন এবং মানবিকতার অন্যন্য মিশ্রন। তার সেন্স অব হিউমার অসাধারণ।’

তার অবসর ঘোষণায় চীনা সোশ্যাল সাইটে আসা প্রায় দেড় মিলিয়ন মন্তব্যই প্রমাণ করে তার আবেদন ও জনপ্রিয়তা।

বাস্কেটবল অঙ্গনে ইয়াও মিং এক সুপরিচিত নাম হলেও আমাদের দেশে তিনি অচেনা। বাংলাদেশে বাস্কেটবল তেমন জনপ্রিয় নয় বলে তাঁকে না চেনাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, আমরা সকলেই তাঁকে চিনি। ২০১০ সালে এক ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তার এক সাংবাদিক বন্ধু’র তোলা ছবি যা পরবর্তীতে একজন চাইনিজ কার্টুনিস্টের ছোঁয়ায় পায় ভিন্নরূপ। ওই ছবিটি ফেসবুকে গিয়ে ভাইরাল হতে সময় নেয়নি! আমাদের কাছে হাসির খোরাক হলেও ইয়াও মিং আপন আলোয় উদ্ভাসিত নক্ষত্র যার রয়েছে যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি এবং সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, মানবিক গুণ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...