নি:সঙ্গ রণনায়ক
স্বামী-স্ত্রী দু’জনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন নিজেদের দেশের হয়ে - এমন নজীর খুব বেশি নেই। এই তালিকাতে ভালা ও তাঁর স্ত্রী পাউক সিয়াকাও আছেন। সিয়াকা চারটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন পাপুয়া নিউগিনির হয়ে। স্বামী বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান হলেও তিনি ডান হাতি।
প্রথমবার বাছাইপর্ব উৎরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউগিনি। শক্তিমত্তার বিচারে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দূর্বল দল। সেটির প্রমাণ অবশ্য মিলেছে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই! অধিনায়ক আসাদ ভালার হাত ধরে বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে প্রথম ম্যাচে খুব সুবিধা করতে পারেনি পাপুয়া নিউগিনি।
ওমানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে আসাদ ভালার হাফ সেঞ্চুরির পরেও ২০ ওভারে ৯ উইকেটে মাত্র ১২৯ রান করতে সক্ষম হয় পাপুয়া নিউগিনি। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শূন্য রানেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে তাঁরা। সেখান থেকে এই অবস্থানে যাওয়াটা সহজ ছিল না।
তৃতীয় উইকেটে চার্লস আমিনিকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন ভালা। বিপর্যয় কাটিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন দুজনেই। শুরুতে ভালা কিছুটা স্লো খেললেও পরবর্তীতে দ্রুত রান তুলে ১০ ওভারে ৮১ রানের জুটি গড়েন দু’জনে! ভুল বুঝাবুঝিতে আমিনি রান আউট হয়ে ফিরলেও একপ্রান্তে টিকে থেকে ভালা তুলে নেন দুর্দান্ত এক হাফ সেঞ্চুরি!
দলীয় ১০২ রানে যখন ৪৩ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৬ রানে বিদায় নেন ভালা ইনিংসের তখনো ৫.৫ ওভার বাকি! হাতে তখনো ৬ উইকেট। একটা ভালো সংগ্রহের সুযোগ থাকলেও ভালার বিদায়ের পর স্পিনার জিশান মাকসুদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে পাপুয়ার ব্যাটিং লাইনআপ! ১০২ রানে ৪ উইকেট থেকে ১১৮ রানেই নেই ৯ উইকেট! শেষ পর্যন্ত ১২৯ রান করতে সক্ষম হয় খর্বশক্তির পাপুয়া নিউগিনি। অধিনায়ক আসাদ ভালা সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন।
সহযোগী দেশের দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন ভালা। এর আগে ২০১৬ সালে আসগর আফগান বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি করেন।
পাপুয়া নিউগিনিকে বিশ্বকাপের মঞ্চে আনতে সবচেয়ে বড় অবদানটাও ছিলো আসাদ ভালার! বলেছিলেন বিশ্বকাপে যাতে পাপুয়া নিউগিনি নিয়মিত খেলতে পারে এমনটাই তাঁর চাওয়া। ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারকে আইডল মানা ৩৪ বছর বয়সী ভালা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮ ম্যাচে করেছিলেন ১৯৭ রান! তাঁর ব্যাটেই বাছাইপর্ব উতরে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবার পা রাখে পাপুয়া নিউগিনি।
এখন পর্যন্ত ২৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১০৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৫১৬ রান। আছে ৩ ফিফটিও।
ভালার কাঁধে চড়ে বিশ্বকাপে আসা পাপুয়া নিউগিনি নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ওমানের কাছে হেরেছে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। ওমানের দুই ওপেনার পাত্তাই দেয়নি পাপুয়ার কোনো বোলারকে! বিশ্বকাপের আগেই নিজেদের লক্ষ্যটা পরিষ্কার করেছিলেন ভালা। আপাতত নিজেদের সেরাটা দিয়ে বিশ্বকাপে নিয়মিত হওয়াই দলের পরিকল্পনা।
মুখরোচক একটা তথ্য দিয়ে শেষ করি। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন নিজেদের দেশের হয়ে – এমন নজীর খুব বেশি নেই। এই তালিকাতে ভালা ও তাঁর স্ত্রী পাউক সিয়াকাও আছেন। সিয়াকা চারটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন পাপুয়া নিউগিনির হয়ে। স্বামী বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান হলেও তিনি ডান হাতি।