গম্ভীরের সেঞ্চুরির জন্য ঝুঁকি নিয়েছিলেন ধোনি

ধোনি আমাকে সেদিন অনেক সাপোর্ট দিয়েছিল। সে খুব করে চেয়েছিল যেন আমি সেঞ্চুরিটা পাই। এমনকি আমি যখন তাঁর সাথে ক্রিজে ছিলাম তখন সে নিজে ঝুঁকি নিয়েও আমার সেঞ্চুরিটা পাইয়ে দিতে চেয়েছিল। আমি যখন সেঞ্চুরির কাছে তখন সে আমাকে বলল, সময় নাও, এখন এলোপাতাড়ি শট খেলার দরকার নেই। আমি রানের গতিটা দেখছি। শুধু তোমার সেঞ্চুরির দিকে ফোকাস করো'

ক্রিকেট ইতিহাসে দলগত সাফল্যে সর্বজয়ীদের তালিকাটা খুব বেশি লম্বা নয়। আর সেটা যদি অধিনায়ক হিসেবে হয় তাহলে মহেন্দ্র সিং ধোনিই প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র। অধিনায়ক হিসেবে ভারতকে আইসিসি’র সম্ভাব্য সব শিরোপা জিতিয়েছেন। এর মধ্যে এক যুগ আগে ঘরের মাটিতে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি।

তবে ধোনি তাঁর এ সাফল্যমন্ডিত অধ্যায়ে পাশেও পেয়েছিলেন অনেককে। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন গৌতম গম্ভীর। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল কিংবা ২০১১ এর ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল- দুই ফাইনালেই দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার ছিল বাঁহাতি এই ব্যাটার।

২০০৭ সালের ফাইনালে করেছিলেন ৭৫ রান। আর মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ফিরেছিলেন একদম সেঞ্চুরির কাছ থেকে। ভারতের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে তাঁর সামনে সেঞ্চুরি করার সুযোগ ছিল। কিন্তু থিসারা পেরেরার বলে বোল্ড হয়ে ৩ রান দূরে থেকে ৯৭ রানেই ইনিংস শেষ হয় গম্ভীরের।

১২ বছর আগের সেই ফাইনালের স্মৃতি এবার টেনে এনেছেন গৌতম গম্ভীর। এমনিতে ক্রিকেট ছাড়ার পর ধোনির সাথে তাঁর রোষানলের কথাই বেশি ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রকাশ্যে অনেকবার তিনি ধোনির সমালোচনাও করেছেন। একবার তো বলেই দিয়েছিলেন, ‘বিশ্বকাপটা শুধু ধোনি জেতেনি, ভারতের ঐ পুরো দলটা বিশ্বকাপ জিতেছে। তারা সবাই চ্যাম্পিয়ন, শুধু ধোনিকে ব্যক্তিপূজা করে উপরে ওঠানো ঠিক না।’

তবে ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালের কথা তুলতে গিয়ে গম্ভীরের কণ্ঠে ধোনিকে নিয়ে প্রশংসার সুর মিলেছে। গোয়াহাটিতে ভারত-শ্রীলঙ্কা সিরিজের সময় এক টক শোতে তিনি বলেন, ‘ধোনি আমাকে সেদিন অনেক সাপোর্ট দিয়েছিল। সে খুব করে চেয়েছিল যেন আমি সেঞ্চুরিটা পাই। এমনকি আমি যখন তাঁর সাথে ক্রিজে ছিলাম তখন সে নিজে ঝুঁকি নিয়েও আমার সেঞ্চুরিটা পাইয়ে দিতে চেয়েছিল। আমি যখন সেঞ্চুরির কাছে তখন সে আমাকে বলল, সময় নাও, এখন এলোপাতাড়ি শট খেলার দরকার নেই। আমি রানের গতিটা দেখছি। শুধু তোমার সেঞ্চুরির দিকে ফোকাস করো।’

তবে দিনশেষে গৌতম গম্ভীর সেদিন সেঞ্চুরি পূরণ করতে পারেননি। ৯৭ রানেই বোল্ড হয়ে তাঁকে প্যাভিলিয়নে ফিরে যেতে হয়েছিল। অবশ্য তাতে দলকে তেমন চাপে ফেলে আসেননি। কারণ প্রাথমিক বিপর্যয়টা তিনি সামাল দিয়েছিলেন। আর শেষটা করেছিলেন ধোনি।

শ্রীলঙ্কার ২৭৫ রানের লক্ষ্যে সেদিন প্রথমের ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ভারত। শূন্য রানেই ফিরে যান বিরেন্দর শেবাগ। বেশিক্ষণ উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি শচীন টেন্ডুলকারও। দলের ইনফর্ম দুই ওপেনারকে হারিয়ে তাই বেশ চাপেই পড়ে যায় ধোনির দল। তবে সে চাপ কাটিয়ে ওঠার কাজটা করেন গম্ভীর। কোহলিকে নিয়ে সাবলীল ব্যাটিং করতে শুরু করেন। ভারতও আস্তে আস্তে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

বিরাট ৩৫ রানে আউট হয়ে ফিরে গেলে উইকেটে আসেন ধোনি। আর এর পর থেকেই ম্যাচের পরিস্থিতিটাই ভারতের দিকে ঝুঁকে যায়। ধোনি আর গম্ভীর মিলে ৮৩ রানের জুটি গড়েন। ম্যাচটা ততক্ষণে একরকম ভারতেরই হয়ে গিয়েছে।

ধোনি ইনিংস শেষ করেন ৯১ রানে অপরাজিত থেকে। নুয়ান কুলাসাকারার বলে সেই উইনিং ছক্কাটা এতদিনে আইকনিক এক মুহূর্তই বনে গিয়েছে। কারণ সে বারে ভারতের বিশ্বকাপ জয়টা এসেছিল দীর্ঘ ২৮ বছর পর। ১৯৮৩ এর পর আবারো ২০১১ সালে এসে বিশ্বকাপ জেতে ভারত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...