রাওয়ালপিন্ডির সেই ‘র‌য়্যাল’ জুটি

লাহোর হোয়াইটসের হয়ে প্রথমে ব্যাট করতে আসেন কামরান আকমল ও সালমান বাট। শুরু থেকেই ইসলামাবাদের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ব্যাট করতে থাকেন আকমল। আকমলের তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়ে মোহাম্মদ ইরফান, রহমত আলীরা। আরেকপ্রান্তে বাট অবশ্য উইকেটে থিতু হয়ে যোগ্য সমর্থনই দিচ্ছিলেন আকমলকে। পাওয়ারপ্লেতেই দলের রান বিনা উইকেটে ৬১! আকমল ২১ বলে ৪০ আর বাট খেলছিলেন ১৫ বলে ২১ রানে।

২৪ নভেম্বর, ২০১৭। পাকিস্তানের ঘরোয়া লিগ ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে মুখোমুখি ইসলামাবাদ ও লাহোর হোয়াইটস। টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামাবাদ। এই সিদ্ধান্তই যেনো কাল হয়ে দাঁড়ায় ইসলামাবাদের জন্য। রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেদিন ক্রিকেট বিশ্ব সাক্ষী হয়েছিলো অনন্য এক রেকর্ডের।

লাহোর হোয়াইটসের হয়ে প্রথমে ব্যাট করতে আসেন কামরান আকমল ও সালমান বাট। শুরু থেকেই ইসলামাবাদের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ব্যাট করতে থাকেন আকমল। আকমলের তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়ে মোহাম্মদ ইরফান, রহমত আলীরা। আরেকপ্রান্তে বাট অবশ্য উইকেটে থিতু হয়ে যোগ্য সমর্থনই দিচ্ছিলেন আকমলকে। পাওয়ারপ্লেতেই দলের রান বিনা উইকেটে ৬১! আকমল ২১ বলে ৪০ আর বাট খেলছিলেন ১৫ বলে ২১ রানে।

দলীয় ৮২ রানে ব্যক্তিগত ২৭ বলে ফিফটি তুলে নেন কামরান। ১০ ওভার শেষে দলের রান তখন বিনা উইকেটে ৯৫। ইসলামাবাদের বোলারদের কোনো কৌশল ভাঙতে পারছিলো না লাহোরের ওপেনিং জুটি। একপ্রান্তে আকমলের তাণ্ডব, আরেকপ্রান্তে বাটের দায়িত্বশীল ইনিংস। সব মিলিয়ে ব্যাকফুটে তখন ইসলামাবাদ।

১৩তম ওভারে আদিল আমিনের পর পর তিন বলে ছক্কা হাঁকিয়ে নব্বইয়ের ঘরে পা দেন আকমল। এরপর ইনিংসের ১৬তম ওভারে ৫২ বলে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেন আকমল। আরেকপ্রান্তে ৪২ বলে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন সালমান বাট। পরের ওভারে মোহাম্মদ ইরফানের প্রথম তিন বলে আবারো তিন ছক্কা হাঁকান তিনি! দু’জনের জুটি তখন দেড়শো পার!

সেঞ্চুরির পর আরো আগ্রাসী হয়ে উঠেন আকমল। ইনিংসের শেষ ওভারে ৭১ বলে ব্যক্তিগত দেড়শো রান পূর্ণ করেন কামরান। একই সাথে পাকিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ডও গড়েন তিনি। আকমলের অপরাজিত ১৫০ ও সালমান বাটের ৪৯ বলে ৫৫ রানে নির্ধারিত ২০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২০৯ রান সংগ্রহ করে লাহোর।

বিনা উইকেটে ২০৯ রানের পথে কামরান আকমল ও বাট গড়েন অনন্য এক রেকর্ড। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে ওপেনিং জুটিতেই এটিই ছিলো সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। একই সাথে কোনো উইকেট না হারিয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ডও ছিলো এটি।

এর দুমাস আগেই ইংল্যান্ডের ঘরোয়া লিগ কাউন্টিতে জো ডেনলি ও বেল ড্রুমন্ড মিলে ওপেনিংয়ে গড়েছিলেন ২০৭ রানের জুটি। সেটি গুড়িয়ে দিয়ে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন কামরান ও বাট।

অবশ্য পরের বছরই সেই রেকর্ড ভেঙে দেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যারন ফিঞ্চ ও ডার্সি শর্ট। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে ২২৩ রানের জুটি গড়েন এই দুই অজি ওপেনার।

২১০ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে লাহোরের বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ইসলামাবাদের ব্যাটাররা। আসিফ আলি, বিলাল আসিফ ও ওয়াহাব রিয়াজের দাপটে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ৮ বল বাকি থাকতে মাত্র ১০০ রানেই গুড়িয়ে যায় ইসলামাবাদ। দলের পক্ষে মাত্র চার ব্যাটসম্যান ছুতে পেরেছিলো দুই অঙ্কের কোটা। লাহোরের হয়ে আসিফ আলি ও বিলাল আসিফ সর্বোচ্চ ৩ টি করে উইকেট শিকার করেন।

কামরান আকমল ও বাটের সেই রেকর্ডে এখন আছেন তিন নম্বরে। ২০১৯ সালে দেহরাদুনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হজরতউল্লাহ জাজাই ও উসমান গনির ওপেনিং জুটিতে ২৩৬ রানই এখন পর্যন্ত এই তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...