‘ফলাফলই অধিনায়কের ভাবমূর্তি ঠিক করে’

কেন বাংলাদেশ পারছে না, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কেমন চলছে, তিনি কী আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্ব করতে পারছেন, সাকিবকে কেন অন্যদের সমান বলেছিলেন, তাঁর নিজের স্বপ্ন কী, সময়টা উপভোগ করছেন তো? এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন টেস্ট অধিনায়ক। কোনো লুকোছাপা না করে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মুমিনুল হক।

অভিষেকের পর থেকেই তিনি বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান। একটার পর একটা রেকর্ড পায়ে দলে এগিয়েছেন প্রথম কয়েকটা বছর। নিজেকে আর্ন্তজাতিক মানে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন মুমিনুল হক সৌরভ।

সেই পরিসংখ্যান এখন অবশ্য অনেকটাই সাধারণ হয়ে এসেছে। তারপরও তিনি সেরা ব্যাটসম্যান দেশের। এই অবস্থায় টেস্ট অধিনায়কত্ব পেয়েছেন। কিন্তু নতুন এই ভূমিকায় মুমিনুল একেবারেই সাদামাটা। একটার পর একটা পরাজয় তাঁর পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে তার অধিনায়কত্ব নিয়ে।

এমন অবস্থায় টেস্ট অধিনায়কের মুখোমুখি হয়েছিলো খেলা ৭১।

কেন বাংলাদেশ পারছে না, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কেমন চলছে, তিনি কী আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্ব করতে পারছেন, সাকিবকে কেন অন্যদের সমান বলেছিলেন, তাঁর নিজের স্বপ্ন কী, সময়টা উপভোগ করছেন তো? এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন টেস্ট অধিনায়ক। কোনো লুকোছাপা না করে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মুমিনুল হক।

আপনি অধিনায়ক হওয়ার আগ থেকেই আমরা টেস্টে পরাজয়ের মধ্যে ছিলাম। আপনার নেতৃত্বে তার পরিবর্তন হয়নি। আপনার সময়ে ৮টি টেস্টে অংশ নিয়ে আমরা হেরেছি ৬টিতে। টেস্টে এই ধারাবাহিক পরাজয় নিয়ে কী বলবেন?

আমার কাছে মনে হয় আমাদের প্রেসেস ঠিক নেই। আমরা জাতীয় দলে যারা আছি তারা ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করতে পারছি না। টেস্ট পাঁচ দিনের খেলা। আমরা দেখা যায় প্রথম চার দিন ভালো খেললাম; শেষ দিনে গিয়ে খারাপ করলাম।  আবার প্রথম ইনিংসে ভালো করে দ্বিতীয় ইনিংসে গিয়ে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স করতে পারছি না। মানে অনেকটা সময় ডমিনেট করেও কিছু সময়ে খারাপ খেলার জন্য কয়েকটা ম্যাচ হেরেছি।  বোলিং এবং ফিল্ডিংও পুরোটা সময় ভালো করতে পারছি না। এক ইনিংসে ভালো হলে, আরেক ইনিংস হচ্ছে না। অনেক আগ থেকেই আমাদের এই জিনিসটা চলে এসেছে। টেস্টে জয়ের অভ্যাস করতে হলে আমাদের পাঁচ দিন ভালো খেলতে হবে; দুই ইনিংসে ভালো করতে হবে; পাঁচ দিন ভালো খেলতে হবে। আমরা দেখা যায় প্রথম ইনিংসে ৫০০ করলাম; দ্বিতীয় ইনিংসে ২০০ রানে অলআউট। অথবা প্রথম ইনিংসে ২৫০ করলাম দ্বিতীয় ইনিংসে গিয়ে ৩০০ রান করি।  এভাবে করলে আপনি টেস্ট ম্যাচ কখনও জিততে পারবেন না। আমাদের টেস্টের ইতিহাসই কিন্তু এরকম।

এটা ঠিক যে, টেস্টের শুরু থেকেই আমাদের এমন অবস্থা ছিল। কিন্তু ২০১৫-২০১৬ সালের দিকে আমরা ঘরের মাঠে টেস্টে অনেক উন্নতি করেছিলাম। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিলাম। শ্রীলঙ্কায় গিয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এসেছি। তখনতো মনে হয়েছিল আমরা একটা উন্নতির মধ্যে আছি। তারপর আবার পিছিয়ে গেলাম কেন?

সত্যি কথা। আমরা মাঝে একটা উন্নতির মধ্যে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয় ওই প্রসেসটা হয়তো ভুলে গেছি। কোনো কিছু পেয়ে যাওয়ার পর যে মৌলিক প্রসেসটা থাকে আমরা তা ভুলে যাই। যখন আমাদের রেজাল্ট এসেছিল, তখন আমরা ঠিক ছিলাম। এরপর আবার ভুলে গেছি। আপনি রেজাল্ট আশা করবেন ঠিক আছে, প্রসেসটা ঠিক থাকলে রেজাল্ট আসবেই। রেজাল্টের আশা করেই যাবেন অথচ আপনার প্রসেস ঠিক থাকল না তাহলে কিভাবে হবে। আমার মনে হয় প্রসেস ঠিক থাকলে রেজাল্ট হবে। আমার মনে হয়, আমরা ভালো ফলে সন্তুষ্ট হয়ে পড়ে মূল কাজগুলোতে আর ঠিক থাকতে পারিনি।

যেটা বলা হয়, টেস্ট ক্রিকেট ভালো খেলার জন্য ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ভালো হওয়া দরকার। আপনি কী মনে করেন, আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটটা টেস্টের জন্য ঠিক আছে? আপনি তো নিয়মিত ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন।

আমি খেলি, কারণ আমি মনে করি জাতীয় লিগে আমার পারফরম্যান্স ভালো হলে আমি কিছু শিখতে পারব। এখানে রান পেলে আমার আত্মবিশ্বাস চাঙ্গা থাকবে। তবে এটা সত্যি যে, আমাদের জাতীয় লিগ আর ইন্টারন্যাশাল ক্রিকেট আকাশ পাতাল তফাত। আপনি যদি একশ ভাগ বলেন একশভাগ তফাত। যে কারণে হয়তো অনেকেই জাতীয় লিগ খেলতে চায় না। জাতীয় লিগ যদি আরো ভালো হয়, আরো কম্পিটিটিভ হয়, তাহলে জাতীয় দলে খেলা অনেক সহজ হবে।  টেস্ট ম্যাচ ভালো খেলার জন্য জাতীয় লিগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

কম্পিটিটিভ ক্রিকেট হচ্ছে না কেনো? দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব নাকি কাঠামোতে সমস্যা? ধরেন উইকেট, দলগুলো যেভাবে করা হচ্ছে-সমস্যাটা কোথায় বলে মনে করেন?

সমস্যা দলগুলোরও হতে পারে, উইকেটও হতে পারে। তবে উইকেট ঠিক করলেই হবে না, প্লেয়ারদের মধ্যেও সিরিয়াসনেস থাকতে হবে। খেলোয়াড়দের মধ্যে পেশাদারিত্ব থাকতে হবে, প্রফেশনাল ক্রিকেট খেলতে হবে। তাহলে ঠিক প্রসেসে থাকা যাবে।

বলা হয় আমাদের খেলোয়াড়রা যার যার টিমকে ওইভাবে ওন করে না? ভারতে যেমন রঞ্জি ট্রফিতে খেলোয়াড়রা যেভাবে নিজের দলকে ওন করে, দলকে জিতাতে সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করে। আমাদের প্লেয়াররা সেটা করে না বলে অভিযোগ করা হয়।

ওই যে আপনাকে বললাম প্রফেশনালিজমের কারণে জিনিসটা হচ্ছে না। প্রফেশনালিজমের মধ্যে অনেক ব্যাপার আছে;  এখানে প্রাকটিসের ব্যাপার আছে। নিজের দায়বদ্ধতার ব্যাপার আছে, অনেক কিছু আছে এখানে।

অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ম্যাচ ফি খুবই কম, বলা হয় যে ম্যাচ ফি বাড়ানো হলে প্রফেশনালিজমটা বাড়বে। আপনি কী মনে করেন এই সমস্যার জন্য টাকাই কী মূল কারণ?

টাকাতো ম্যাটার করেই। তবে শেষ এক দুই বছর ধরে ম্যাচ ফি কিন্তু ডাবল হয়ে গেছে। এখন কতৃপক্ষ কিছুটা সিরিয়াসনেস আশা করতেই পারে। আরও প্রফেশনালিজম দেখানো দরকার বলেআমি মনে করি। প্রফেশনালিজম মানে কিন্তু নিয়মিত প্রাকটিস করা, দৌঁড়ানো, জিম করা না। এটাই কিন্তু প্রফেশনালিজম না’ এটা প্রফেশনালিজমের একটা অংশ। আগে যেটা ছিল প্লেয়াররা অতো পরিশ্রম করত না। এখন অনেক পরিশ্রম করছে, এটা প্রফেশনালিজমের একটা অংশ। টিমের জন্য খেলাও কিন্তু প্রফেশনালিজমের একটা অংশ। আপনার খাবার-ডায়েট এটাও কিন্তু প্রফেশনালিজমের অংশ। ভালো করতে হলে সবকিছুই আপনাকে করতে হবে।

আমাদের জাতীয় দলের চুক্তিতে যেটা হয়, যারা শুধু লঙ্গার ভার্সন (টেস্ট ম্যাচ) খেলেন তারা খুব বেশি আয় করতে পারেন না। ফলে তরুণ খেলোয়াড়দের লঙ্গার ভার্সনের প্রতি আগ্রহ একটু কম বলে মনে করেন?

হতে পারে। তরুষদের আসলে নিশ্চিত করতে হবে যে, টেস্ট খেলেও ক্যারিয়ার করা সম্ভব। তবে এটা আমাদের মাইন্ড সেট আপেরও অংশ। আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিকে বেশি প্রাধান্য দেয়, এটাও একটা কারণ হতে পারে। টাকা বাদেও শর্টার ফরম্যাটটা সবার কাছে বেশি আকর্ষনীয়।

আপনি নিজেও তো যেভাবে হোক এখন শুধু টেস্ট প্লেয়ার হয়ে গেছেন। আপনার নিজেরও কি মনে হয় ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিরতেও যদি খেলতে পারতাম! এই আফসোসটা কি কাজ করে?

আসলে এখানে আফসোস করে কোনো লাভ নেই। আমি মনে করি আফসোস করা মানে হতাশ হওয়া। আর হতাশ হলে আপনি সামনে এগোতে পারবেন না। আফসোস না করে আপনি স্বপ্ন দেখতে পারেন যে, আপনি ওয়ানডে খেলবেন, এটা নিয়ে কাজ করতে পারেন।

তার মানে আপনি এখনও স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার?

হ্যাঁ আমি এখনও স্বপ্ন দেখি। কেন স্বপ্ন দেখব না? আমি যতদিন ক্রিকেট খেলব ততদিন এই স্বপ্ন দেখব।

স্পেশালি যদি ওয়ানডের কথা বলি আপনার তো পারফরম্যান্স ভালো। সবশেষ ঢাকা লিগেও ভালো করেছেন। তারপরও এশিয়া কাপে উড়ে গিয়ে একটা ম্যাচ খেললেন। তাছাড়া আর সুযোগ পেলেন না…

দেখেন, দেখেন। এখানে কিন্তু সুযোগ পাওয়াটা কিন্তু আমার হাতে নেই। আপনার হাতে থাকবে আপনার পরিশ্রম, আপনার প্রচেষ্টা হাতে থাকবে। সুযোগ পাওয়া না পাওয়া এটা পুরোপুরি আল্লাহর হাতে। আপনার সব প্রসেস যদি ঠিক থাকে, আপনার খাওয়া দাওয়া, আপনার ডায়েট, আপনার ফিটনেস থেকে শুরু করে সব যদি ঠিক থাকে তাহলে আপনার সুযোগ আসবেই। তবে ওইটার জন্য আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। সুযোগ আসলে ওই সুযোগটা তখন কাজে লাগাতে হবে।

আবার টেস্টে ফিরি আমরা। আপনি যখন টেস্টে অধিনায়ক হলেন তখন বলেছিলেন, আপনি অধিনায়ক হিসেবে এটাকিং অধিনায়ক হতে চান। আর এক পেসার বা এক স্পিনারের যে ট্রাডিশন সেখানে থাকতে চান না। কিন্তু সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আমরা দেখলাম দুই টেস্টে একজন করে পেসার খেললেন। তার মানে কি আপনি নিজের জায়গা থেকে সরে গেছেন?

না না, আমি কখনও নিজের জায়গা থেকে সরি নাই। এটা আসলে সিচুয়েশন অনুসারে হয়। আপনি যদি চট্টগ্রাম টেস্টে দেখেন সেখানে ১৪৫ কিলোমিটারের উপরে বল করতে না পারলে পেসারদের উইকেট পাওয়া খুবই রেয়ার। যেরকম পেসার আমাদের কোনো সময়ে ছিল না; তাসকিন মাত্র শেষ টেস্টে করছে। ফলে আমরা চট্টগ্রামের উইকেটে পেসারদের ওপর ভরসা করতে পারিনি।  এটাই বলছি মাঝে মাঝে আপনাকে সিচুয়েশন অনুসারে প্লান চেঞ্জ করতে হয়। এর মানে এই না যে আমি নেগেটিভ ক্যাপ্টেন্সি করছি। যিনিসটা হলো ম্যাচে রেজাল্ট পক্ষে না আসলে অনেক সিদ্ধান্তই আপনার বিপক্ষে যাবে। যেটা হওয়া স্বাভাবিক। জিতলে মনে হতো, এটাই এটাকিং ক্যাপ্টেন্সি।

শ্রীলঙ্কায় আমরা যে সিরিজটা খেললাম, সেখানে দ্বিতীয় টেস্টে দেখা গেল শ্রীলংকা স্পিনার অনেক বেশি নিয়েছে। তার মানে স্পিনাররা অনেক বড় রোল প্লে করতে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের মূল স্কোয়াডেই আমাদের বাড়তি কোনো স্পিনার ছিল না। এই ব্যাপারটা কি আমাদের মূল প্ল্যানিংয়ে দুর্বলতা ছিল বলে মনে করেন?

আপনাকে যদি প্রশ্ন করি, বাংলাদেশে টিমে এখন টেস্টর জন্য বেস্ট দুইজন স্পিনার কে কে, আপনি কী আমাকে নাম বলতে পারবেন?

আমরা ধরে নেই তাইজুল ইসলাম আর মেহেদী হাসান মিরাজ।

হ্যাঁ, ওই দুইজন তো খেলছেই। আপনার মেইন দুই স্পিনার তো খেলছে, খেলে নাই?

নাইম হাসান কী যোগ হতে পারত না?

ওই সময়ে আপনি যদি নাইমের অবস্থা বলেন, আমি অধিনায়ক হওয়ার পরে নাইম দলে ছিল না। নাইমের চেয়ে কিন্তু মিরাজ সব দিক থেকে এগিয়ে ছিল। শেষ কয়েকটা টেস্টেও যদি দেখেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে মিরাজ কিন্তু অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করেছে। আমরা যদি সিরিজটা জিততাম তাহলে ও ম্যান অফ দ্য সিরিজ হতো। আমার কাছে মনে হয় দেশের বেস্ট যে দুইটা স্পিনার তারা দলে ছিল।

অধিনায়ক হওয়ার আগে বোলিং করেছেন, অধিনায়ক হওয়ার পরে কী বোলিং করার সেই আত্মবিশ্বাসটা হারিয়েছেন?

না না। আমি সব সময় বিশ্বাস করি যে আমার টিমে যদি পাঁচটা বোলার থাকে তাহলে কোনোভাবে দরকার হয় না আমার বল করার। যদিও আমি শেষ টেস্টে বোলিং করেছি। দলে পাঁচজন বোলার থাকার পরও যদি আমি নিজে বল করি তাহলে আমার কাছে নিজেকে সেলফিশ মনে হয়।

তার মানে আপনি কী পার্টটাইমার ব্যাবহারের সাথে একমত না?

খুব একমত না। টেস্ট স্পেশালিস্টদের খেলা। তবে মাঝে মাঝে দলের প্রয়োজন হতে পারে, তখন হয়তো দুই ওভার বা তিন ওভার করা যেতে পারে। যদি কোনো সিসুয়েশনে হয়, তাহলে।

আপনাকে নিয়ে আরেকটা অভিযোগ হলো, প্রতিপক্ষ দল যখন শক্তিশালী ব্যাটিংয়ে চলে যায় তখন ফিল্ডিংটা খুব বেশি ডিফেন্সিভ করে ফেলেন। এই অভিযোগটা কী সত্যি বলে মনে হয়?

আপনার কাছে কী মনে হয়?

আমার কাছে মনে হয় একটু ডিফেন্সিভ হয়ে যান আপনি।

ডিফেন্সিভ হওয়াটা আপনার কাছে কি মনে হয়? ভালো না খারাপ?

আমার কাছে ওই সময় খারাপ মনে হয়। কারণ, জুটি গড়ে ওঠা অবস্থায় পাল্টা আক্রমণ করা দরকার তো।

আমার কিন্তু তা মনে হয় না। প্রতিপক্ষ আপনাকে এটাক করেছে অনেক বেশি। আপনিও যদি এটাক করেন তাহলে রান তো বেশি হয়ে যাবে। আর কোন উইকেটে কখন আপনি এটাক করবেন, সেটাও আপনাকে বুঝতে হবে। আপনি যদি ফ্ল্যাট উইকেটে অনেক বেশি এটাক করেন তাহলে দুইয়ের পরিবর্তে রান রেট চার বা পাঁচেও চলে যেতে পারে। আপনাকে উইকেটের কন্ডিশন বুঝে এটাকিংয়ে যেতে হবে, তাই না?

আপনি কী একজন নেতা হয়ে উঠতে পেরেছেন? দলকে আগলে রাখার মত নেতা; মানুষ যেরকম চায়?

মানুষ যেরকম চায় সেরকম হওয়া তো আসলেই ডিফিকাল্ট। রেজাল্ট না হলে আপনি যেমন অধিনায়কই হন,আপনি এটাকিং অধিনায়ক হন বা ডিফেন্সিভ অধিনায়ক হন; আপনাকে খারাপ মনে হবে। আমি ধরেন ৮টা টেস্টে অধিনায়কত্ব করলাম, তাতে যদি আমি দুইটা টেস্টে জিততাম, দুইটা টেস্টে ড্র হতো; তাহলে সবাই বলত ওর স্টাইলটাই এরকম। তখন আমাকেও নেতা বলে মনে হতো। মার্জিনালি কয়েকটা টেস্ট হেরে যাওয়ায় একটু অন্যরকম মনে হয়।

তাহলে অধিনায়কের ভাবমূর্তি ফলাফল দিয়ে ঠিক হয়, বলতে চাচ্ছেন?

আমার এখনও একটা কথা মনে আছে, যখন আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে বা ‘এ’ টিমে খেলি তখন আমি এখনকার চেয়েও কম কথা বলতাম। একটা মৌসুমে আমি রান করতে পারিনি তখন মানুষ বলছিল যে, ও খেলবে কেমনে? ও তো কথা বলে না। আবার যখন আমি রান করেছি, তখন বলেছে ও চুপচাপ থাকে, এতে মনোযোগ দিয়ে খেলতে পারে। এটাই ওর স্টাইল। আমার কাছে পুরো জিনিসটাই মনে হয় রেজাল্টের ওপর। রেজাল্ট না হলে সবকিছুই আপনারা বিপক্ষে। এখানে আসলে কারো দোষ নেই। যারা সমালোচনা করে তাদেরও কোনো দোষ নেই।

প্রেসে আপনার কথাবার্তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।

সেটা তো আপনারা চাইলেই ভালো করে সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখতে পারেন, বলতে পারেন।

এই ধরেন সাকিব দলে না থাকা প্রসঙ্গে আপনি বললেন, সাকিবেরও দুই হাত, বাকীদেরও দুই হাত। এটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে।

দেখেন, সাকিব ভাই কত বড় খেলোয়াড়, তা তো আমি জানি। ওনার তুলনা তো বাংলাদেশে বা কোথাও নাই। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে আমার তো দলে থাকা খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো দরকারে ছিলো। ধরেন সফরে যাওয়ার আগে আমার দলে প্লেয়ার আছে ১৭ জন।  সিনিয়র প্লেয়ার আছে মাত্র দুইজন। এখন আমি প্রেস কনফারেন্সে গিয়ে মাথা নিচু করে বলতে পারতাম, ‘না ভাই এভাবে ক্রিকেট খেলা খুবই ডিফিকাল্ট, সাকিব ভাই ছাড়া আমরা কিভাবে খেলব! সাকিব ভাই টিমের অর্ধেক, সাকিব ভাই ছাড়া খেলা কঠিন খুবই হতাশাজনক।’ তাহলে পরের দিন আপনারা লিখতেন বা ফেসবুকে মানুষ লিখত, খেলার আগেই অধিনায়ক নিজেই হতাশ। তার ওপর আমরা কী প্রত্যাশা করতে পারি যে, সে ভালো ক্রিকেট খেলবে? সবচেয়ে বড় কথা, এরকম কিছু বললে শুধু আপনারাই না, আমার দলে যেসব ক্রিকেটার আছে তারাও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলত। তারাও বলতো কী অধিনায়ক, যে আমাদের ওপরই ভারসা করতে পারে না।

সেটা না বলে আমি যদি বলি যে, সাকিব ভাই না থাকলে কোনো সমস্যা নেই। একটা সময়ে সাকিব ভাইকে ছাড়াই বাংলাদেশ টিমকে খেলতে হবে। আমাকে ছাড়াও খেলতে হবে। আমরা কেউ তো স্থায়ী না। কোনো সময় কারো জন্য ক্রিকেট বসে থাকবে না। এভাবে বলে তো আমি আমার প্লেয়ারদের কনফিডেন্স দিয়ে গেলাম। আমি যে কথাটা বলেছি যারা বুঝার কথা তারা ঠিকই বুঝেছে। আমি সব সময় পজেটিভ চিন্তাটা করি। মানুষ পরে কী বললো বা কী বলবে ওসব চিন্তা করলে, আমরা সামনে এগুতে পারব না। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সামনে আগাতে পারবে না।

আমি জানি আমরা খুবই ইমোশনাল একটা জাতি। আমি যদি সাকিব ভাইরে নিয়ে বলতাম তাহলে সবাই ওভাবেই নিত। কিছু মানুষ ভালোভাবে নিত, আবার কিছু মানুষ বলতো ও কোন ধরনের অধিনায়ক যে প্লেয়ারদের ওপর ভরসা করতে পারে না।

একটা সময় আপনি শুধু প্রশংসাই পেয়েছেন সব জায়গা থেকে। এখন অধিনায়ক হয়ে তার উল্টো রূপ দেখছেন। এ অবস্থায় উপভোগ করতে পারছেন অধিনায়কত্বটা?

আমি ক্রিকেট যখন শুরু করেছি বা জাতীয় দলে যখন সুযোগ পেয়েছি, তখন একটা জায়গায় আমি নাম লিখিয়ে ফেলেছি। আর এই জায়গায় যখন নাম লিখিয়েছি তখন আলোচনা-সমালোচনা সব কিন্তু মেনে নিতে হবে। আর লাইফটা এমন না যে সব কিছু স্মুথভাবে চলবে। এটাতো স্বর্গ বা বেহেশত না যে, কোনো সমস্যা থাকবে না বা কোন সমালোচনা থাকবে না। এখানে নানারকম চ্যালেঞ্জ থাকবেই।

পৃথিবীটা এরকমই। কোনো সময় আপনার ভালো যাবে। আবার কোনো সময় খারাপ। অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। আপনি যতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন ততো উপরের ওঠার চান্স বেশি থাকবে। লাইফে ভালো কিছু করার চান্স থাকবে। আমি যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে নাম লিখিয়েছি সেহেতু আমার এটা মেনে নিতেই হবে আপনারা যখন আমার নামে ভালো কিছু লিখবেন তখন আমার ভালো লাগবে। আবার যখন সমালোচনা করবেন তাও মেনে নিতে হবে। তবে এরকম হওয়া উচিত না যে ভালো হলে মেনে নেব। আর সমালোচনা হলে মেনে নিতে পারব না।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।

আপনাকেও ধন্যবাদ। আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলবো। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আপনাদের (সাংবাদিকদের) ভূমিকাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ভাই। আপনারা এই খেলাটার একটা অংশ। আমাদের সবার চেষ্টাতেই আমরা এগোতে পারবো। আপনারা প্রয়োজন হলে সমালোচনা করবেন, কিন্তু সেটা ক্রিকেটের উন্নতির জন্য হলে ভালো হয়। আমার একার পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের ক্রিকেট আগাবে না। আপনাদেরও কন্ট্রিবিউশন দরকার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...