উপেক্ষিত সাকিবের আইপিএল অধ্যায়ের সমাপ্তি!

এই বছরের শুরুর দিকেই হয়েছিল আইপিএলের মেগা নিলাম। আর দলগুলোর ছোটখাটো ঘাটতি মিটিয়ে নিতে বছরের শেষদিকে আয়োজন করা হয়েছে মিনি নিলাম। সেবার অবিক্রীত সাকিব আল হাসানের ভিত্তিমূল্য এবার ধরা হয়েছিল এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ রূপি। কিন্তু সাকিবের নাম যখন ঘোষণা করা হয় তখন কোন দলই বিড করেনি এই অলরাউন্ডারের জন্য।

মিরপুরে সাকিব আল হাসান যখন খেলছিলেন ভারতের বিপক্ষে তখন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এর নিলামেও উঠেছিল তাঁর নাম। দুই ভিন্ন পরিবেশে দুই ভিন্ন লড়াইয়ে নামলেও সাকিবের জন্য সুখবর নেই কোথাও। মাঠের খেলায় যেমন ব্যাকফুটে সাকিবের বাংলাদেশ তেমনি নিলামেও কোন দল আগ্রহ দেখায়নি এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের প্রতি।

এই বছরের শুরুর দিকেই হয়েছিল আইপিএলের মেগা নিলাম। আর দলগুলোর ছোটখাটো ঘাটতি মিটিয়ে নিতে বছরের শেষদিকে আয়োজন করা হয়েছে মিনি নিলাম। সেবার অবিক্রীত সাকিব আল হাসানের ভিত্তিমূল্য এবার ধরা হয়েছিল এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ রূপি। কিন্তু সাকিবের নাম যখন ঘোষণা করা হয় তখন কোন দলই বিড করেনি এই অলরাউন্ডারের জন্য। ফলে এবারও দর্শক হয়েই থাকতে হবে এই বাঁ-হাতিকে।

সাকিব আল হাসান আইপিএলের পরবর্তী আসরে সুযোগ পাবেন না সেটি এক রকমের নিশ্চিতই ছিল বটে। কেননা বর্তমানের এই মারকাটারি ক্রিকেটের যুগে সাকিব আল হাসান আগের মত ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ‘হটকেক’ নন। এটির মূল কারণ মূলত তাঁর বয়স। ইতোমধ্যে ৩৫তম জন্মদিন পালন করা সাকিবের উপর বিনিয়োগ করতে চাইবে না কোন ফ্রাঞ্চাইজি-ই।

আবার ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসানের সেই উড়ন্ত ফর্ম নেই বললেই চলে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি সুলভ দ্রুত গতির ব্যাটিং এখন আর দেখা যায় না তাঁর কাছ থেকে। আইপিএলে নিজের শেষ দশ ইনিংসে পাঁচবারই শূণ্য রানে ফিরেছেন তিনি। আর মাত্র একবার পেরেছেন দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে। আবার এই অলরাউন্ডারের স্ট্রাইক রেটও আশির ঘরে। স্বাভাবিকভাবেই অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে প্রায় সব দল।

বোলার সাকিব এখনো কার্যকরী হলেও মিস্ট্রি স্পিনার কিংবা লেগির ভীড়ে তিনি অপাংক্তেয় হয়ে আছেন। কোন দলই এখন স্পেশালিষ্ট ফিঙ্গার স্পিনার মূল একাদশে রাখতে চায় না। ফলে এখন আর সাকিবকে নিয়ে উচ্ছ্বাস জাগে না টিম ম্যানেজম্যান্টের মনে।

অবশ্য পুরনো রেকর্ড আর পরিসংখ্যান বিবেচনায় সাকিব আল হাসানের উপর আরেকটু আস্থা দেখাতে পারতো আইপিএলের দলগুলো। ২০১১ সাল থেকে একটানা ২০২১ সাল পর্যন্ত এই লিগের প্রতিটি আসরে খেলেছিলেন তিনি। এর মাঝে ২০১২ এবং ২০১৪ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। দুইবারই শিরোপা জয়ের মিশনে দুর্বার ছিলেন এই বাংলাদেশী। এছাড়া হায়দ্রাবাদের হয়ে ২০১৮ সালের আসরেও সাকিব ছিলেন দুর্দান্ত।

 

সবমিলিয়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ৭১ ম্যাচ খেলেছেন সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ১৯.৮২ গড়ে করেছেন ৭৯৩ রান যেখানে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১২৫ এর কাছাকাছি। আর বল হাতে ৬৩ উইকেটের মালিক সাকিবের ইকোনমি মাত্র ৭.৪৪। বেশ কয়েকবার আইপিএলে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কারও পেয়েছিলেন তিনি।

আইপিএলে দল না পাওয়ার দিনে সাকিব অবশ্য থেমে থাকেননি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩০০০ এর বেশি রান এবং ৬৫০ এর বেশি উইকেট নিজের ঝুলিতে পুরেছেন এই তারকা অলরাউন্ডার। ২০০৬ সালে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানোর পর থেকেই ক্রিকেটের মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

গড়েছেন একের পর কীর্তি, ছুঁয়েছেন কত শত মাইলফলক। বাংলার ক্রিকেটের ‘রেকর্ডবয়’ উপাধি তো এমনিতেই পেয়ে যাননি সাকিব আল হাসান। এখনো ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অলরাউন্ডারদের মধ্যে নাম্বার ওয়ান তিনি, টেস্টেও রয়েছেন সেরা তিনে। ক্রিকেট বিধাতার আর কয়জন সন্তান এভাবে সব ফরম্যাটে আধিপত্য দেখাতে পেরেছে।

সাকিব আল হাসানের পথচলার যেমন শুরু আছে, তেমনি আছে শেষও। একদিন না চাইলেও বাইশ গজের লড়াই থামিয়ে দিতে হবে তাঁকে। আইপিএলের নিলামে ডাক না পাওয়াতে কিছু আসে যায় না ঠিকই, তবে এমন প্রত্যাখান ক্রিকেটের আকাশ থেকে সাকিব নামক নক্ষত্রের ম্লান হয়ে ওঠার বার্তা দেয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...