ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্যাচ মিস!

সেটা ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ঘটনা। ১৩ জুন, সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে স্টিভ ওয়াহর ক্যাচ মিস করেন হার্শেল গিবস। ক্রিকেট ইতিহাসে এত ব্যয়বহুল ক্যাচ মিসের নজীর আর নেই বললেই চলে। এরপর একমাত্র ক্রিকেট দেশ হিসেবে টানা তিন বিশ্বকাপ জয় করে অজিরা। ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে একক আধিপত্য দেখিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য ৯৯ এর বিশ্বকাপ জয়ের পিছনে অজিদের ভাগ্যটাই বেশি সহায় হয়েছিল।

ইতিহাসের সেরা ফিল্ডার কে? এই প্রশ্নে কোনো বিতর্ক নেই, কোনো সন্দেহ নেই। মানুষটার নাম জন্টি রোডস। সেই রোডসের চোখের সামনেই ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্যাচ মিসের ঘটনাটি ঘটে। রোডসের সেই সতীর্থটি হলেন হার্শেল গিবস।

সেটা ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ঘটনা। ১৩ জুন, সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে স্টিভ ওয়াহর ক্যাচ মিস করেন হার্শেল গিবস। ক্রিকেট ইতিহাসে এত ব্যয়বহুল ক্যাচ মিসের নজির আর নেই বললেই চলে। এরপর একমাত্র ক্রিকেট দেশ হিসেবে টানা তিন বার বিশ্বকাপ জয় করে অজিরা। ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে একক আধিপত্য দেখিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য ৯৯ এর বিশ্বকাপ জয়ের পিছনে অজিদের ভাগ্যটাই বেশি সহায় হয়েছিল।

সুপার সিক্সে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা ছিল অজিদের। হার্শেল গিবসের সেঞ্চুরির পরে ব্যাটিংয়ে নেমে টপ অর্ডারদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় বেশ বিপাকেই পড়ে অজিরা। এরপর হার্শেল গিবসের কল্যানে স্টিভ ওয়াহর সেঞ্চুরিতে দুর্দান্ত জয় নিয়ে অজিরা পা রাখে সেমিফাইনালে। সেদিনের সেই ক্যাচ মিসের মাশুল হয়তো প্রোটিয়ারা আজও দিচ্ছে! একটা বিশ্বকাপ জয় তাঁদের এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। বড় মঞ্চে প্রোটিয়াদের এমন ব্যর্থতার কারণেই নামের পাশে যোগ হয় চোকার্স।

সেদিন লিডসের হেডিংলিতে টসে জিতে প্রোটিয়া অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রনিয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। হার্শেল গিবসের ১৩৪ বলে ১০১ রানের অনবদ্য ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৭১ রান সংগ্রহ করে প্রোটিয়ারা। ম্যাচের অর্ধেক না শেষ হতেই প্রোটিয়ারা নিজেদের জায়গা পাঁকা করে নেয় সেমিফাইনালে।

তবে তাদের লক্ষ্যটা ছিল অজিদেরকে টুর্নামেন্ট থেকে আউট করা। প্রোটিয়ারা সেবার টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট দল ছিল। পেস বিভাগে অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, স্টিভ এলওয়ার্থি এবং ল্যান্স ক্লুজনারের মতো বোলাররা থাকায় সেবার দুর্দান্ত এক দল ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

ক্রঞ্জে এবং তার দল যেভাবে চেয়েছিল শুরুটাও ঠিক সেভাবেই হয়েছিল। ২৭২ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে মাত্র ৪৮ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চরম বিপাকে পড়ে অজিরা। ক্রিজে তখন রিকি পন্টিং আর অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। দু’জনে মিলে নতুন করে ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় মত্ত হন। ওয়াহর ব্যাটে বাড়তে থাকা রান রেট অনেকটাই নেমে আসে! ৩০ ওভার শেষে অজিদের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ১৪৯ রান। এরপরে ৩১ তম ওভারটিই ছিল মূলত সেই বিশ্বকাপের শিরোপা প্রোটিয়াদের হাত থেকে ছিটকে যাওয়া!

৩১ তম ওভারে বল করতে আসেন ল্যান্স ক্লুজনার। ক্লুজনারের করা ওই ওভারের শেষ বল ওয়াহর পায়ের কাছে ফেলেন! ওয়াহ বলটি লেগ সাউডে ফ্লিক করতে মিড উইকেটে থাকা গিবসের কাছে সরাসরি ক্যাচ যায়। গিবস তালুবন্দি করেও অনেকটা দ্রুত উল্লাস করতে যেতেই বল হাত থেকে পড়ে যায়! প্রোটিয়া অধিনায়ক ক্রঞ্জে সহ অবাক গিবসও। বলের কন্ট্রোল পুরোপুরি আয়ত্তে না নিতেই গিবসের উদযাপন সেদিন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রোটিয়াদের জন্য।

এরপর আর পিছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি ওয়াহর! তার করা ১২০ বলে ১১০ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পাঁচ উইকেটে হারায় অজিরা। গিবস যখন ওয়াহর ক্যাচ মিস করে, তখনো অজিদের প্রয়োজন ১১৪ বলে ১২০ রান! সেই সময়ে গিবসের উইকেট তুলে নিলে প্রোটিয়াদের বোলিং লাইন আপ যথেষ্টই ছিল সেই ম্যাচের ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনতে।

এরপর চারদিন পরে সেমিফাইনালে আবারো অজিদের মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালে নাটকীয় শেষ মূহুর্তে ম্যাচ টাই হয়! আর গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অজিরা জয় পাওয়ায় হেড টু হেডে এগিয়ে থেকে ফাইনালে পৌঁছে যায় অজিরা।

আর অজিদের কাছে পরাজিত হয়ে ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ হয় প্রোটিয়াদের। এরপর ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা লাভ করে তখনকার ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য অজিদের সেই শিরোপা জয়ের পিছনে অন্যতম অবদান ছিল হার্শেল গিবসেরই!

‘গিবস, তুমি তো বিশ্বকাপটাই ফেলে দিলে!’ – হার্শেল গিবসকে কি সেদিন এই খোঁচাটা দিয়েছিলেন স্টিভ ওয়াহ। কে জানে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...