শোয়েব আখতার, ১০০ মাইলের গল্প

২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, কেপটাউনে বিশ্বকাপের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচে স্পিডমিটারে ভেসে উঠেছিল অবিশ্বাস্য একটি সংখ্যা, পাক পেসার শোয়েব আখতারের ছোঁড়া একটি ডেলিভারির গতি জানতে স্পিডমিটারের দিকে তাকাতেই দেখা গেল তিন অঙ্কের সংখ্যা।

২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, কেপটাউনে বিশ্বকাপের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচে স্পিডমিটারে ভেসে উঠেছিল অবিশ্বাস্য একটি সংখ্যা, পাক পেসার শোয়েব আখতারের ছোঁড়া একটি বলের গতি জানতে স্পিডমিটারের দিকে তাকাতেই দেখা গেল তিন অঙ্কের সংখ্যা, ঐতিহাসিক ডেলিভারিটির গতি ছিল ঘন্টায় ১০০ মাইল বেগ। ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোন বলের গতি ১০০ মাইল ছুঁয়েছিল।

কেপটাউনে সেদিন শোয়েব আখতার ১৬১.৩ কিলোমিটার গতির বলটি এখনও সবচেয়ে দ্রুততম বলের রেকর্ড ধরে রেখেছে। যেকোনো কিছু অর্জনের পেছনে থাকে কঠোর পরিশ্রমের গল্প, ব্যতিক্রম হয়নি শোয়েব আক্তারের এই কীর্তিও। বলের গতি বৃদ্ধি করতে পাকিস্তানি তারকাকেও বেছে নিতে হয়েছে সংগ্রামের পথ; আর এই পেছনের ঘটনাগুলো এবার প্রকাশ্যে আনলেন তিনি।

শোয়েব আখতার বলেন, ‘যখন আপনি ১৫৫ কিমি/ঘন্টায় বল করেন, তখন বুঝতে হবে আপনার ভিতরে আরও পাঁচ কিমি রয়েছে। এই গতি কাজে লাগাতে প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট কিছু প্রশিক্ষণ। আমি যখন নিয়মিত ১৫৭-১৫৮ গতিতে বোলিং করা শুরু করি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে ১০০ মাইলের মাইলফলক ছোঁয়া সম্ভব হবে। কিন্তু ম্যাচে সেটা করতে পারছিলাম না।’

আর তাই কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার বেছে নেন নির্দিষ্ট কিছু প্রশিক্ষণ। ছোটখাটো যানবাহন, ট্রাক টেনে নেয়া, ২৬ গজের পিচে বোলিং, পুরোনো ছেঁড়া বল ব্যবহার ইত্যাদি পন্থা অবলম্বন করতে শুরু করেন তিনি।

শোয়েব আখতার বলেন যে, ‘আমি প্রথমে টায়ার নিয়ে দৌড়াতে শুরু করি, কিন্তু এরপর বুঝতে পারি টায়ারগুলো বেশ হালকা, তাই আমি ছোট গাড়ি নিয়ে দৌড়ানোর চেষ্টা করি। রাতের রাস্তায় গাড়ি টানার পাশাপাশি রান আপের গতিতে দৌড়াতে থাকি, এবং এক পর্যায়ে ট্রাক নিয়ে একই কাজ শুরু করি। সাধারণত একটি ট্রাক ৪-৫ মাইল টেনে নিতাম।’

রান আপ শেষ করেই শোয়েব আক্তার চলে আসতেন প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে। সেখানে ২৬ গজের পিচে বোলিং করতেন তিনি, এসময় তাঁর বোলিং স্পিড ১৪২-১৪৩ কিমি/ঘন্টায় নেমে আসে। তবে এই এক্সপ্রেস বোলারের লক্ষ্য ছিল অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এই পিচে অন্তত ১৫০ কিমিতে বোলিং করা।

পুরোনো ছেঁড়া বলে বোলিং শুরু করার পর ধীরে ধীরে নতুন বল হাতে তুলে নেন শোয়েব আখতার। প্রায় দুই মাসের একটানা ঘাম ঝরানোর পর নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হন শোয়েব আক্তার, ২৬ গজের পিচে ঘন্টায় ১৫০ কিমি এর বেশি গতিতে বল করতে সমর্থ হন।

এই সময়েই দরজায় হাজির হয় ২০০৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ, নিজের গতির ব্যাপারে তখন পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন শোয়েব আখতার। বিশ্ব মঞ্চেই ১০০ মাইলের রেকর্ড গড়ার ব্যাপারে মনস্থির করেন। আর এই ব্যাপারটি নিজের সতীর্থদেরও জানিয়ে দিয়েছিলেন এই ডানহাতি।

শোয়েব আখতার বলেন, ‘যখন নেটে বোলিং করতাম, তখন ব্যাটাররা বলে উঠতো – তুমি আমাদের মেরে ফেলবে, এত জোরে বল করছো কেন। উত্তরে বলতাম যে আমি খুব কঠিন পরিশ্রম করেছি কারণ আমি বিশ্বকাপে ১০০ মাইল গতিতে বল করতে চাই।’

নিজের সেই ইচ্ছে পূরণ করেছেন শোয়েব আখতার। পর্বতারোহীর মতই দুর্গম পাহাড়ের চূড়া জয় করেছেন, তবে বিন্দুমাত্র আত্মতুষ্টি ছিল না তাঁর। বরং নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার নতুন লক্ষ্য স্থির করেছিলেন। কিন্তু শরীর এবার আর কথা শোনেনি, ভেঙে পড়েছে ক্লান্তিতে। পিঠের ইনজুরি, হ্যামস্ট্রিংয়ের ফলে বোলিংয়ের গতি কমে যায়, ফলে থেমে যেতে হয় সেখানেই।

এখন পর্যন্ত কেউ তো ভাঙ্গতে পারেনি রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেসের রেকর্ড, ভবিষ্যতেও কি পারবে না? আপাতত ভারতের উসমান মালিকের উপর চোখ রেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব; এই তরুণ হয়তো স্পিডমিটারে ১৬১.৩ কিমি/ঘন্টার চেয়ে আরও বড় কোন সংখ্যা তৈরি করতে পারবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...