দ্য বেডসার ব্রাদার্স

১৯৩৯ সালে দুভাই যখন কাউন্টি দল সারের জন্য ট্রায়াল দিতে যান, তখন দুজনেই ছিলেন মিডিয়াম পেসার। এদিকে সারে কর্তৃপক্ষের দুজনকেই পছন্দ হলেও তারা কিছুতেই দুজন মিডিয়াম পেসার নেবে না, যেকোন একজনকে নেবে ৷ অন্যদিকে, এরিক আর অ্যালেকের সাফ কথা যে তারা খেললে একই ক্লাবে খেলবে। শেষ পর্যন্ত টস করে নির্ধারিত হয় যে এরিক অফ স্পিন করবে আর অ্যালেক মিডিয়াম পেস।

ব্র্যাডম্যানের পছন্দের একাদশ তো দেখেছেন। সেখানে জায়গা পাওয়া একমাত্র ইংরেজ ক্রিকেটার হলেন অ্যালেক বেডসার। ১৯১৮ সালের ৪ জুলাই, বার্কশায়ারে জন্মেছিলেন হুবহু দেখতে দুই যমজ ভাই অ্যালেক আর এরিক বেডসার।

স্যার অ্যালেক বেডসারকে মনে করা হয় সর্বকালের সেরা মিডিয়াম পেসারদের একজন। ‘ন্যাচারাল ইনসুইঙ্গার’ আর ‘লেগ কাটার’-এ পারদর্শী অ্যালেক ৫১ টি টেস্ট খেলে পেয়েছেন ২৩৬ উইকেট, ২৪.৮৯ গড়ে, ১৫টি ফাইভ-ফার এবং ৫টি টেন-ফার সহ। এছাড়া ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে তাঁর রয়েছে ৫,৭৩৫ রান ও ১৯২৪ উইকেট (২০.৪১ গড়ে)। ১৯৩৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত টানা ২২ বছর খেলেছেন সারের হয়ে।

ইংলিশ বোলারদের মধ্যে একমাত্র ফ্রেড ট্রুম্যান (২১.৫৮ গড়ে ৩০৭ উইকেট) আর ব্রায়ান স্ট্যাথামের (২৪.৮৫ গড়ে ২৫২ উইকেট) গড়ই বেডসারের তুলনায় একটু বেটার।

অ্যালেক বেডসারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ৪৪ রানে ৭ উইকেট, ১৯৫৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে। মজার ব্যাপার হল, স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে পেসারদের মধ্যে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ৬ বার আউট করা বোলার হচ্ছেন অ্যালেক বেডসার।

অ্যালেকের যমজ ভাই ডানহাতি অফ স্পিনার এরিকের অবশ্য কোনদিন টেস্ট খেলার সৌভাগ্য হয় নি। তবে ভাইয়ের সাথে তিনিও কাউন্টি মাতিয়েছেন সারের হয়ে ৷ ১৬ বছরের ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ারে এরিকের অর্জন ১৪,৭১৬ রান এবং ৮৩৩ উইকেট (২৪.৯৫ গড়ে)।

সাবেক উস্টারশায়ার লিজেন্ড পিটার রিচার্ডসনের মতে, এরিকের কখনোই জাতীয় দলের হয়ে সুযোগ না পাওয়াটা ওর প্রতি এক ধরনের অবিচার। কেননা ওর সামর্থ্য নিয়ে কোন প্রশ্ন ছিল না, জিম লেকার না থাকলে হয়ত এরিকই হত ইংল্যান্ডের এক নম্বর অফ স্পিনার। তবে এ নিয়ে এরিকের মনে কোন আক্ষেপ ছিল না। বরং সে ভাইয়ের সাফল্য নিয়েই মহাখুশি ছিল৷

 

পিটার রিচার্ডসনের ভাষায়, ‘The joy that Eric has got from Alec’s success was so blatant. This is one of the nicest things about the brothers.’

দুই ভাইয়ের ছিল আত্মার সম্পর্ক, একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারত না। অ্যালেক যখন দেশের বাইরে কোন সফরে যেত, এরিকও সব কাজ ফেলে ভাইকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য সাথে যেত ৷ তাঁরা জামাকাপড়ও পরত একই ডিজাইনের। এরিকের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁরা সারাজীবন একই বাড়িতে থেকেছেন। এমনকি দুই ভাইয়ের কেউই জীবনে বিয়ে করেন নি!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছিল দুভাইকেই, দায়িত্ব পালন করেছেন ফ্লাইট সার্জেন্টের ভূমিকায়৷ ডানকার্কে যুদ্ধ চলাকালীন দু’ভাই-ই অল্পের জন্য বেঁচে যান মৃত্যুর হাত থেকে। এমনকি এরিক যখন ‘ওয়ারেন্ট অফিসার’ পদে প্রমোশন পেলেন, তিনি সেই প্রমোশন শেষ পর্যন্ত বাতিল করেন, যেন ভাইয়ের সাথে থেকে যুদ্ধ করতে পারেন ৷

একটা ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট শেয়ার করি। ১৯৩৯ সালে দুভাই যখন কাউন্টি দল সারের জন্য ট্রায়াল দিতে যান, তখন দুজনেই ছিলেন মিডিয়াম পেসার। এদিকে সারে কর্তৃপক্ষের দুজনকেই পছন্দ হলেও তারা কিছুতেই দুজন মিডিয়াম পেসার নেবে না, যেকোন একজনকে নেবে৷ অন্যদিকে, এরিক আর অ্যালেকের সাফ কথা যে তারা খেললে একই ক্লাবে খেলবে। শেষ পর্যন্ত টস করে নির্ধারিত হয় যে এরিক অফ স্পিন করবে আর অ্যালেক মিডিয়াম পেস।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...