এপিটাফের কৃষ্ণচূঁড়া

২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়ার সেই কাব্যগাথা এখনো মনে আছে ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে। টেস্ট খেলুড়ে দেশ না হয়েও দক্ষিণ আফ্রিকায় বসা সেই আসরে কেনিয়া পৌঁছে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। যেকোনো আইসিসি সহযোগী দেশের জন্য সেটিই ছিল সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে কেনিয়ার ক্রিকেটে সেই কৃষ্ণচূঁড়া আর ফোটেনি। মাঠের পারফর্মেন্স, রাজনৈতিক ঝামেলার নানা গ্যাঁড়াকলে পড়ে কেনিয়ার ক্রিকেট এখন শুধুই এক এপিটাফ।

২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়ার সেই কাব্যগাথা এখনো মনে আছে ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে। টেস্ট খেলুড়ে দেশ না হয়েও দক্ষিণ আফ্রিকায় বসা সেই আসরে কেনিয়া পৌঁছে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। যেকোনো আইসিসি সহযোগী দেশের জন্য সেটিই ছিল সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে কেনিয়ার ক্রিকেটে সেই কৃষ্ণচূঁড়া আর ফোটেনি। মাঠের পারফর্মেন্স, রাজনৈতিক ঝামেলার নানা গোড়াকলে পড়ে কেনিয়ার ক্রিকেট এখন শুধুই এক এপিটাফ।

দারিদ্রের চাপে পিষ্ট হওয়া ছেলেদের কিংবা পথশিশুদের নিয়ে আবার সচল হতে শুরু করেছে কেনিয়ার ক্রিকেটের হৃদপিণ্ড। নাইরোবির নেটে এখন নিয়ম করে ব্যাট-বলের শব্দ হয়। বছর কয়েক আগেও পথে পথে ঘুরে বেড়ানো শিশুদের নিয়েও এখন বড় স্বপ্ন দেখে কেনিয়া। যেই স্বপ্নটা প্রথম দেখতে শিখিয়েছিলেন ওবুয়ারা। ২০০৩ সালের ফোঁটা সেই কৃষ্ণচূঁড়া আবার কেনিয়ার ক্রিকেটে ফিরিয়ে দিতে চান তাঁরা।

কেনিয়া সরকারের নানাকান্ড, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মাঠের বাজে পারফর্মেন্স সবকিছু মিলিয়ে আঁধারে মিলিয়ে যেতে বসেছিল কেনিয়ার ক্রিকেট। সেই সময় স্বপ্নটা দেখেছিলেন কেনিয়ার সাবেক তিন ক্রিকেটার, তিন ভাই। ক্রিকেটে কেনিয়ার সেই গৌরবোজ্জ্বল দিন আবার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা।

কেনিয়ার সাবেক ওপেনার কেনেডি ওটিয়েনো ও তাঁর দুই ভাই ডেভিড ও কলিন্স ওবুয়ারা মিলে শুরু করেন ওবুয়া ক্রিকেট একাডেমি। ২০০৬ সালে নাইরোবি শহরে এক ফুল হয়ে ফোটে ওবুয়া ক্রিকেট একাডেমি। শহরের দরিদ্র পরিবারগুলো থেকে বেঁছে বেঁছে নিয়ে আসা হয় খুদে ক্রিকেট তারকাদের। ওবুয়াদের একাডেমি চলতে থাকে কেনিয়াকে আরেকজন স্টিভ টিকলো উপহার দেয়ার জন্য কিংবা আরেকবার ক্রিকেটটাকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য।

কেনিয়ার সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ডেভিড ওবুয়া এফপিকে বলেন, ‘খুদে ক্রিকেটারদের উন্নতিই আমাদের ক্রিকেটের হৃদপিণ্ড সচল রাখতে পারে। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল দরিদ্র প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের বেঁছে নিয়ে আসা এবং তাঁদেরকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলতে সাহায্য করা।’

ওবুয়ারা দারুণ প্রতিক্রিয়াও পেয়েছিল। পাঁচ থেকে উনিশ বছর বয়সী কয়েক ডজন ছেলে একাডেমিতে নিয়মিত আসা শুরু করে। নাইরোবির ওবুয়া ক্রিকেট একাডেমি যেন কেনিয়া ক্রিকেটের হৃদপিণ্ড হতে শুরু করে। বাবা-মারাও তাঁদের বাচ্চাদের এই একাডেমিতে পাঠাতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কেননা একাডেমি ভালো ক্রিকেটারদের স্কুল ফি ও খাবার দেয়া শুরু করে।

নানা আর্থিক টানাপোড়নের মাঝেও ওবুয়া ক্রিকেট একাডেমি আস্তে আস্তে ডানা মেলতে শুরু করে। আস্তে আস্তে কেনিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেদের একটি শক্তিশালী দলও গঠন করে ওবুয়া। এরমধ্যেও অন্য ক্লাব গুলোর বেড়ে ওঠার জন্য তাঁদের মাঠে জায়গা করে দেয় ওবুয়া ক্রিকেট একাডেমি। ডেভিড ওবুয়া বলছিলেন,’ আমরা একটি পরিবার হিসেবে বেড়ে উঠতে পারছি। আর নিজেদের সার্থক মনে হয় যখন এই একাডেমি কেনিয়ার তরুণ ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করছে।‘

এমনকি ভারতের অনেক ক্রিকেটারও এখন কেনিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন ক্রিকেট খেলার জন্য। ভারতের বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান প্রুস্কার শর্মা এখন কেনিয়ার একটি লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারি। মুম্বাই অনুর্ধ্ব-১৬ দলের সাবেক এই অধিনায়ক ছয় বছর কেনিয়াতে থাকার পর দেশটির হয়ে ক্রিকেট খেলার ছাড়পত্র পেয়েছেন।

এছাড়া ওবুয়া ক্রিকেট একাডেমির অনেক খুদে ক্রিকেটারও এখন বড় হয়ে গিয়েছেন। তাঁরা এখন স্বপ্ন দেখছেন কেনিয়ার ক্রিকেটকে প্রাণ ফিরিয়ে দেয়ার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চান নিজের দেশের হয়ে। ওবুয়া ক্রিকেট একাডেমির এক তরুণ ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘আমি যখন এখানে আসি তখন আমার ধারণাও ছিল এতদূর আসতে পারব। মাত্র ছয় বছর বয়সে আমি এখানে খেলতে এসেছিলাম। এখন আমি সুপার লিগেও খেলছি। এখন আমার স্বপ্ন কেনিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার।’

নানা জটিলতায় পড়ে কেনিয়ার ক্রিকেটের মৃত্যুই হয়ে গিয়েছিল বলা চলে। তবে ওবুয়াদের ছোট্ট এই একাডেমি ধীরে ধীরে কেনিয়ায় আবার ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কেনিয়ার ক্রিকেটের যে এপিটাফ লিখা হয়ে গিয়েছিল সেখানে আবার কৃষ্ণচূঁড়া ফোঁটার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...