কুর্নিশ হে মহারাজা!
হীরক রাজার মতই একচ্ছত্র অধিপতি তিনি। শাসন তিনি করছেন বটে। ক্রিকেট বিশ্বকে। ভালোবাসায় তাকে বারে বারে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।
‘মহারাজা তোমারে সেলাম, সেলাম, সেলাম’, হীরক রাজার মতই একচ্ছত্র অধিপতি তিনি। শাসন তিনি করছেন বটে। ক্রিকেট বিশ্বকে। ভালোবাসায় তাকে বারে বারে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। বিরাট কোহলি সবার মন জয়ের মন্ত্রটা জানেন বেশ ভাল করেই। সূর্যের মত করে সকল আলোর উৎস হতেও জানেন তিনি।
২০১৯ বিশ্বকাপে ছিলেন অধিনায়ক। বিশ্বজয়ের স্বপ্ন যাদের, তাদের জন্যে সেমিফাইনাল অকৃতকার্য হওয়ার শামিল। এরপরই আবার বিরাট কোহলির ফর্মের চাকা ঘুরেছে উল্টো পথে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ বিশ্বকাপ অবধি সময়ে বেজায় ধুকেছেন ক্রিকেটের মহারাজ। রান পাচ্ছিলেন না। শতক তো বহুদূরের আর্ধেক জ্বলতে থাকা আলো।
শেষটা দেখে ফেলেছিলেন সকলে মিলে। অধিনায়কত্ব নিয়ে বেজায় কাণ্ড হলো। বিরাটকে নিয়ে সমালোচনার ফিরিস্তি হলো। ড্রেসিংরুমের গণ্ডগোলের খবর বাইরে এলো। তাতেই বিরাট যেন হয়ে গেলেন এলোমেলো। সেই প্রভাব তো পারফরমেন্সেও পড়বে। পড়তে বাধ্যই বটে।
স্রেফ ওয়ানডে ক্রিকেটের পরিসংখ্যানই চোখে আঙুল দিয়ে নিম্নগামী পারফরমেন্সের উদাহরণ বাতলে দেয়। ২০১৯ এর প্রায় ৬০ এর গড় ক্রমশ নামতে থাকে। ২০২০ এ ৪৭.৮৮, ২০২১ এ ৪৩.০০। ২০২২ এ তো ভয়ংকর পরিস্থিতি। মাত্র ২৭.৪৫। ১১ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি। ফিফটি কেবলই দু’টি।
ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে বিরাট বাদ, বিরাট বাদ সরবে মুখর ভারতের ক্রিকেট পাড়া। এর আগে থেকেই অবশ্য গুঞ্জন খানিকটা দিয়েছিল মাথাচাড়া। এক ফরম্যাট, কিংবা ক্রিকেট উভয় ছাড়তে জোরাজুরি সমালোচকদের। তবুও অদম্য বিরাট। তার উপর অগাধ আস্থা ক্রিকেট বোর্ডের।
সেই আস্থাও তো অর্জন করেই নেওয়া। এরপর এলো ২০২৩ বিশ্বকাপ। ব্যাস! খোলস ছেড়ে নিজের ভরা যৌবনের রুপে হাজির। বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েই আবারও আসন নিয়েছেন মহারাজের। বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের ৯ ম্যাচে তার ঝুলিতে আছে ৫৯৪। রয়েছেন সবার উপরে। গড়টা তার ঠিক ঠিক ৯৯।
এই বছরে বাকি সব ওয়ানডে মিলিয়ে ৭০.৯৮ গড়ে ১২০৬ রান করেছেন তিনি। বিশ্বকাপে দুইটি সেঞ্চুরি সহ এই বছরই সেঞ্চুরি করেছেন মোট ৫টি। অথচ আগের তিন বছরে ওয়ানডেতে ছিলো তার কেবল একটি সেঞ্চুরি। ঠিক এভাবেই নিজেকে বদলে ফেলার দারুণ কৌশল অদ্ভুতভাবে রপ্ত করা বিরাট কোহলির।
তাইতো সমালোচক থেকে নিন্দুকরাও তার ভক্ত। দলের জয়ে অবদানের কমতি নেই। নিজের ঝুলিতেও অর্জন যুক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ছাপিয়ে যাচ্ছেন পূর্বপুরুষদের ফেলে যাওয়া সকল রেকর্ড। এবার স্রেফ বিশ্বজয়ের পালা। তরুণ বিরাট নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই বিশ্ব জয়ের স্বাদ অবশ্য পেয়েছেন।
শেষ বিশ্বকাপটাও তাই শিরোপা দিয়েই হয়ত রাঙিয়ে যেতে চাইবেন। দলের তরীর পাল যে তুলে দিয়েছেন তিনি। শক্ত হাতে নোঙর তার হাতেই বন্দী। শিরোপার বন্দরের সেই নোঙর হয়ত তিনিই ফেলবেন। আর তখন আবার সবাই বলে উঠবে, ‘মহারাজা তোমারে সেলাম’।