মালদ্বীপ নামের জ্বালা

১৯৮৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সাফ গেমসে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো মাঠে দ্বীপ রাষ্ট্রটি। কাঠমন্ডুতে সে ম্যাচে মালদ্বীপকে ৫-০ গোলের বড় ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। ১৯৮৫ সালে মালদ্বীপের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয়টি পায় লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। সেবার ঢাকাতে অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে দেশটির বিপক্ষে ৮-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ।

একটা সময় দূর্বল প্রতিপক্ষ মালদ্বীপ এখন কঠিন এক প্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলাদেশের বয়ে কয়ে হারানো দলটিই এখন উল্টোটাই ফেরত দিচ্ছে। ফেরতে দিয়েছে এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও। প্রথম দুই ম্যাচে না হারা জামাল ভূঁইয়ার দল মুখ থুবড়ে পড়েছে স্বাগতিক দলের কাছে। ২-০ গোলের পরাজয় এখন ফাইনালে খেলা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

আপাত দৃষ্টিতে এখন তিনটি দলের সামনে ফাইনাল খেলার হাতছানি। বাংলাদেশ, মালদ্বীপের বাইরে নেপাল রয়েছে ভাল অবস্থানে। প্রথম দুই ম্যাচে ড্র করে সর্ব শক্তির ভারত কিছুটা কোনঠাসা এবারের দক্ষিন এশিয়া বিশ^কাপে। তবে মালদ্বীপ দুঃখটা এবারো শেষ হলোনা। ২০০৩ সালের পর তাদের হারাতে না পারার কষ্টটা আরও বাড়ল। সেটি কতদিনের তা এখনই বলা যাচ্ছেনা।

বাংলাদেশকে হারানোর মধ্যদিয়ে দেশটি প্রমাণ করেছে প্রথম ম্যাচে নেপালের কাছে পরাজয়টা ছিল একটা অঘটন। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলটি শিরোপা রেসে এক ম্যাচ দিয়ে দারুণভাবে ফিরে এসেছে। সেখানে শংকায় পড়ে গেছে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দলগুলো। তবে সম্ভাবনা যে শেষ হয়ে গেছে এমনটা বলার সুযোগ নেই। তবে অস্কার ব্রুজোনের শীষ্যরা ফাইনালে খেলতে না পারলে শেষ পর্যন্ত মালদ্বীপ ম্যাচটাই হয়তো বড় হয়ে থাকবে।

আরও একটি আসরে মালদ্বীপের অহংকারকে দর্পচুর্ণ করার সুযোগ পেয়েও সেটিকে কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। কায়সার হামিদ, শেখ মোহাম্মদ আসলাম, মোহাম্মদ মোহসিনসহ অনেকের কাছে কিন্তু মালদ্বীপ দুধভাতের প্রতিপক্ষের মতো। কারণ সে সময় তো হালি হালি গোলে জিতল বাংলাদেশ দল। এখন সে দিন আর নেই। উল্টো বাংলাদেশকে নিয়মিতভাবেই হারিয়ে চলেছে প্রতিয়নিয়ত উন্নতি করতে থাকা দেশটি।

তবে তাদের উন্নতিটা একদিনে হয়নি। কম আয়তনের দেশ হলেও মূলত অ্যাকাডেমিগুলোই পাল্টে দিয়েছে ফুটবলকে। বাংলাদেশকে তাই প্রতিদিনই শেখাতে যাচ্ছে দেশটি। অথচ একসময় বাংলাদেশ ফুটবল দলের সামনে মালদ্বীপও ছিলো ঠিক অনেকটা দুধভাতের মতো। এই মালদ্বীপের বিপক্ষেই খেলা প্রথম তিন ম্যাচে বাংলাদেশর জয় ছিলো অনেক বড় ব্যবধানে।

১৯৮৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সাফ গেমসে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো মাঠে দ্বীপ রাষ্ট্রটি। কাঠমন্ডুতে সে ম্যাচে মালদ্বীপকে ৫-০ গোলের বড় ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। ১৯৮৫ সালে মালদ্বীপের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয়টি পায় লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। সেবার ঢাকাতে অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে দেশটির বিপক্ষে ৮-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ।

এই জয়টি এখনো বাংলাদেশ-মালদ্বীপ ম্যাচের সবচেয়ে বড় জয় হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে।  অথচ সবচেয়ে দু:খজনক ব্যাপারটা হচ্ছে এক সময়ে ৮-০ গোলের ব্যবধানে জয় পাওয়া বাংলাদেশ মালদ্বীপের বিপক্ষে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ৫-০ গোলের পরাজয়। আর এবার সাফে হারল ২-০ গোলের ব্যবধানে। আর মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয়টাও ১৮ বছর আগে ২০০৩ সালে।

এবার জয় পাওয়ার প্রত্যাশা থাকলে শক্তিতে পেরে ওফেনি জামাল ভূঁইয়ার দল। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ-মালদ্বীপ মুখোমুখি হয়েছে মোট ১৩ বার। ৫ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের হারও সমান ৫ টি। ড্র হয়েছে বাকি ৩ টি ম্যাচ। সাফের ম্যাচের আগে পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও সর্বশেষ চার ম্যাচে বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারেননি মালদ্বীপের বিরুদ্ধে। তবে সাফে এইবারের আসরে নিজেদের এই ম্যাচের আগে শেষ দুই ম্যাচে দূর্দান্ত খেললেও স্বাগতিক দলে বিপক্ষে সেই ধারাটা ধরে রাখতে পারেনি। জিতলে ফাইনালের পথে এক পা দিয়ে রাখত অস্কার ব্রুজোনের শীষ্যরা। আর এখন অনেক যদি আর কিন্তুর মধ্যে চলে গেছে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা।

অনেকের কাছে তাই অদ্ভুত এক প্রতিপক্ষের নাম মালদ্বীপ। একটা সময় যে মালদ্বীপকে গোল বণ্যায় ভাসিয়ে জয় পেত বাংলাদেশ, সে দলটিই এখন এগিয়ে থাকা এক কঠিন প্রতিপক্ষের নাম। জয় পাওয়া যেন ভুলেই গেছে দ্বীপ দেশটির বিপক্ষে। সেটা দেশে কিংবা বিশ্বের যে কোন স্থানেই হোক, বাংলাদেশ হারবে এটা ধরে নিয়েই যেন মাঠে নামে দল। অনেকটা আশ্চয্যের বিষয়, জনসংখ্যা কোটিও পার হয়নি, ভারত মহাসাগরের কোল ঘেষে থাকা ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্রই পরবর্তী সময় ফুটবলে এগিয়েছে অনেক দ্রুত গতিতে।

অদ্ভুত বলার কারণ হচ্ছে, যে দলটাকে একটা সময় ৮-০ গোলে পরাজিত করত বাংলাদেশ, সেই মালদ্বীপই এখন বাংলাদেশ অনেকটা হেসে খেলে হারাচ্ছে। তবে সর্বশেষ ম্যাচে ব্যবধানটা কিছুটা হলেও কমিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। শুরুতে এক দশকেরও কম সময় দাপট দেখানোর পর ১৯৯৩ সালের ষষ্ট সাফ গেমস থেকেই দাপট দেখানো শুরু হয়। সে সময় আন্তর্জাতিক ফুটবলে অনেকটা পুচকে দল হওয়ায় প্রতিপক্ষরা গোনায় ধরতোনা তাদের।

সেই বছরের ২০ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবের গোল অফসাইডে বাতিল হওয়ার পর পেলান্টি মিস করেন কায়সার হামিদ। ডিফেন্সে ৮/৯ জন খেলোয়াড় চীনের প্রাচীরের মতো দাড়িয়ে গোলশুন্যভাবে ড্র করেছিল মালদ্বীপ। সেই যে শুরু, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদেরকে। ২৮ বছর আগের সেই ম্যাচটি নিদারুণ এক ব্যর্থতার নাম।

সাফ গেমসের সেই আসরে গ্রুপের শেষ ম্যাচে নেপালের কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়ে অনেকটা খালি হাতে বিদায় নিতে হয় আরিফ হোসেন মুনের নেতৃত্বাধীন দলটিকে। মূলত এর পর থেকেই শক্তিশালী দল হতে থাকে মালদ্বীপ। আর এখন তো কোনভাবেই পারা যাচ্ছেনা তাদের সঙ্গে। তবে সাফের সর্বশেষ ম্যাচটি পরাজয় বাংরাদেশের ফাইনালের খেলাটা ফেলে দিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে।

এতটাই যে, কেউ কেউ শেষ ম্যাচটা খেলার আশাও ছেড়ে দিয়েছেন। তাইতো কষ্ট নিয়ে ফুটবপ্রেমীরা বলে যান, এই মালদ্বীপ ম্যাচটাই এবারের সাফে বাংলাদেশের ফাইনালে না খেলার বড় কারণ হতে পারে। তাই মালদ্বীপ সাফটা বড় দুঃখ হয়ে থাকতে পারে এই ম্যাচটা। যেখানে হেরে সআবগিতক দলকে টুর্নামেন্টে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...