ছোট ফরম্যাটে কিউদের বড় স্বপ্ন

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে রানার আপ, এবার ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণে ট্রফি কী আবার উঠবে কেন উইলিয়ামসনের হাতে, নাকি আবারও কোনো স্বপ্নভঙ্গের কাহিনী শোনাবে নিউজিল্যান্ড, শেষ বেলায় এসে?

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে রানার আপ, এবার ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণে ট্রফি কী আবার উঠবে কেন উইলিয়ামসনের হাতে, নাকি আবারও কোনো স্বপ্নভঙ্গের কাহিনী শোনাবে নিউজিল্যান্ড, শেষ বেলায় এসে?

তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে সেই নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। তার আগে দেখে নেওয়া যাক এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট বলা হচ্ছে যাদের সেই কিউয়ি ব্রিগেড কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে। এমনিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মানেই নিউজিল্যান্ড বারবার ‘ভালো খেলিয়াও পরাজিত’র দলে। সেমি ফাইনালে গিয়ে বেশ কয়েকবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তাঁদের।

দারুণ ফর্মে থাকা নিউজিল্যান্ড এবার মরু দেশে সব সুদে আসলে পূরণ করার লক্ষ্যেই নামবে। সাম্প্রতিক ফর্ম যদি দেখা হয় ২০২১ সালে ছয়টা জয়ের পাশে মাত্র দুবার হেরে মাঠ ছেড়েছেন উইলিয়ামসন, সাউদিরা। ব্যাটিং এ সিফার্ট, কনওয়ে, ফিলিপ্স, চাপম্যান বা বোলিং এ জেমিসন, ফার্গুসনদের মতো দুর্দান্ত সব প্রতিভা কিউয়ি ব্রিগেডে এবার সত্যিই নজর কাড়ার মতো, যে কেউ নিজেদের দিনে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

  • শক্তিমত্তা

ব্যাটিং এ গাপটিল – সেইফার্টের ঝোড়ো শুরু, মিডল অর্ডারে উইলিয়ামসনের চওড়া ব্যাট, কিংবা ‘নিউ সেনসেশান’ ডেভন কনওয়ের ব্যাটিং নিউজিল্যান্ড এর এক বিরাট শক্তি। গত এক বছরে নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং এ যাকে নিয়ে সবচেয়ে আলোচনা হয়েছে তিনি হলেন কনওয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকাজাত এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান টি২০ ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ড মিডল অর্ডারে ‘স্ট্যাবিলিটি’ এনেছেন বলা যায়।

রস টেলর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাদ পড়ায় কনওয়ের কাঁধে এবার আরো বড় দায়িত্ব। এর সাথে যোগ করুন গ্লেন ফিলিপ্স এর মতো খেলোয়াড়, যিনি মিডল অর্ডার কিংবা ওপেনিং যেকোনো জায়গায় ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারেন, গত বছর ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ফিলিপসের ৪৬ বলে সেঞ্চুরি এখনও চোখে লেগে থাকার মতো, এছাড়া পার্ট টাইম অফ স্পিন ও উইকেট কিপিং দিয়ে নিউজিল্যান্ড দলে ফিলিপ্স একটা ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’ বলা যায়। অলরাউন্ডার জিমি নিশ্যাম ব্যাট ও বল হাতে এবং ফিনিশার হিসেবে কিউয়িদের বড় শক্তি।

আর বোলিং ব্রিগেডের দিকে যদি তাকানো যায় সেটাও বিপক্ষকে ঝলসে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। স্পিন বিভাগে স্যান্টনার ও সোধি যদি জুটি বেঁধে ২০১৬ বিশ্বকাপের মতো পারফরমেন্স তুলে ধরতে পারেন, কিউয়িরা অবশ্যই অনেক দূর যাবে। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন নিউজিল্যান্ড এর প্রিমিয়ার ফাস্ট বোলার টিম সাউদি। এমনিতে গত চার বছর ধরে দেখলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪০ ম্যাচে নিয়েছেন ৪৮ টা উইকেট, আর তাঁর সঙ্গী আবারও সেই ট্রেন্ট বোল্ট। সাউদি – বোল্ট এর ফাস্ট বোলিং জুটি, অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলিং অ্যাটাক এই বিশ্বকাপে।

  • দুর্বলতা

উপমহাদেশের বাইরের দল হওয়ায় স্পিন খেলায় চিরাচরিত একটা দুর্বলতা নিউজিল্যান্ড এর বরাবরই সঙ্গী। গ্ৰুপ লিগে ভারতের চাহাল, জাদেজা, পাকিস্তানের শাদাব, ইমাদ, উসমান কাদির, আফগানদের রশিদ, মুজিব, নবি কিংবা বাংলাদেশের সাকিবের মতো সব হাই কোয়ালিটি স্পিন কিন্তু এই বিশ্বকাপে কিউয়িদের ফেস করতে হবে।

উইলিয়ামসন স্পিন খেলায় অত্যন্ত দক্ষ, তিনি বাদে বাকি ব্যাটিং লাইন আপ সেই চ্যালেঞ্জ কতটা নিতে পারে সেটাই এখন দেখার। এছাড়া কিউয়ি ব্যাটিং লাইন আপের অনেকেরই এটা প্রথম বড় মঞ্চ। সিফার্ট, কনওয়ে, ফিলিপ্সরা যতই প্রতিভাবান হোন না কেন কঠিন কন্ডিশনের বিচারে এখনও অনভিজ্ঞ, সেই অনভিজ্ঞতার অভাব প্রতিভা দিয়ে তাঁরা যত ঢেকে দিতে পারবেন কিউয়িদের সম্ভাবনা ততই বাড়বে। এছাড়া বড় রান তাড়া করার ক্ষেত্রে নিশ্যাম ছাড়া ভালো ফিনিশারের অভাব আমিরশাহীর স্লো উইকেটে কিন্তু নিউজিল্যান্ডকে ভোগাতে পারে।

  • নিউজিল্যান্ড দল ও তাঁদের সম্ভাবনা

অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের দারুন মেলবন্ধন এই নিউজিল্যান্ড দল কিন্তু এবারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক বড় দাবিদার। নিউজিল্যান্ড এর হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামলেও কিউই মিডল অর্ডারের এক সারপ্রাইস প্যাকেজ মার্ক চাপম্যানের এটা কিন্তু তৃতীয় বিশ্বকাপ। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ও ২০১৬ সালে ভারতে হওয়া বিশ্বকাপে তিনি নেমেছিলেন হংকংয়ের জার্সি গায়ে।

ফিনিশার হিসেবে কিউয়িরা কন্ডিশন অনুযায়ী কিন্তু ব্যবহার করতে পারে ঘরোয়া ক্রিকেটের দারুন পারফর্মার চাপম্যানকে, বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের পার্ট টাইম বাঁহাতি স্পিন কিন্তু আমিরশাহীর উইকেটে যথেষ্টই কাজে লাগতে পারে, এছাড়া চাপম্যানের বিশ্বকাপে খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই কাজে লাগাবেন উইলিয়ামসনরা। ব্যাটিং এ ওপেনিং থেকে চার নম্বর মোটামুটি স্থায়ী নিউজিল্যান্ড এর।

টিম সেইফার্ট, গাপটিলের পরে উইলিয়ামসন ও কনওয়ে তিন ও চার নম্বরে ফিক্সড। এরপর ফিলিপ্স, নিশ্যাম, স্যান্টনার ও জেমিসন আসতে পারেন। দীর্ঘদেহি অলরাউন্ডার জেমিসন কিন্তু ছন্দে থাকলে বিপক্ষের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারেন। টেস্ট ক্রিকেটে দুর্ধর্ষ দেড় বছর কাটানোর পরে ট-টোয়েন্টি তে কেমন করেন জেমিসন, সেদিকে চোখ থাকবে সবার। সাউদি, বোল্ট ও সোধি নিয়মিত বোলিং ব্রিগেড সামলাবেন আশা করা যায়, সেক্ষেত্রে চাপম্যান, ড্যারেল মিশেল ও জেমিসন এই তিন অলরাউন্ডার কন্ডিশন অনুযায়ী রোটেট করে খেলবেন বলে ধরে নেওয়া যায়।

তবে গত চার বছরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তিনটে সেঞ্চুরি করা কলিন মুনরো, সম্প্রতি ফর্মে না থাকায় বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়া কিছুটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। যাই হোক, বিশ্বকাপের সূচি অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তান ম্যাচে নিউজিল্যান্ড কেমন পারফরমেন্স করে সেটার ওপরই নির্ভর করছে তাঁদের ভাগ্য। তবে এই গ্ৰুপ থেকে নিউজিল্যান্ড এর পরের রাউন্ডে যাওয়ার ওপর বাজি ধরাই যায়।

  • নিউজিল্যান্ড স্কোয়াড

কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), মার্টিন গাপটিল, টিম সেইফার্ট, ড্যারেল মিশেল, ডেভন কনওয়ে, গ্লেন ফিলিপ্স, জিমি নিশ্যাম, মিশেল স্যান্টনার, টিম সাউদি, ইশ সোধি, ট্রেন্ট বোল্ট, মার্ক চাপম্যান, টড অ্যাস্টল, কাইল জেমিসন, লকি ফার্গুসন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...