সামান্য ভুলের বিরাট মাশুল

ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও ব্যয়বহুল কিছু ভুল নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন। ভুল গুলো এতটাই সামান্য, আর এর প্রভাব এতটাই বেশি যে - আজো হয়তো ভুলগুলোর কথা ভেবে আক্ষেপ করেন এর সাথে জড়িতরা।

ক্রিকেট খেলা যতটা ব্যাট-বলের দক্ষতার লড়াই, ঠিক ততটাই মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। এখানে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে মাঠে অবস্থান করার প্রতিটি সেকেন্ড পূর্ণ মনোযোগী থাকতে হয়৷ কেননা ক্রিকেটে কোন দলের পুরো ম্যাচ ‘গচ্চা’ যাওয়ার জন্য একটি ভুলই যথেষ্ট। বিশ্ব ক্রিকেটে এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণও রয়েছে।

ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও ব্যয়বহুল কিছু ভুল নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন। ভুল গুলো এতটাই সামান্য, আর এর প্রভাব এতটাই বেশি যে – আজো হয়তো ভুলগুলোর কথা ভেবে আক্ষেপ করেন এর সাথে জড়িতরা।

  • ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের ‘অনাকাঙ্খিত’ ওভারথ্রো

টুর্নামেন্টজুড়ে ধারাবাহিকতার অনন্য নিদর্শন রেখেই ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। উভয় দলের সামনে ছিল প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার হাতছানি। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ ম্যাচের শেষদিকে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার পড়ে তিন বলে নয় রান।

এমন সময় ট্রেন্ট বোল্টের একটি ফুলটস মিড উইকেটের ফাঁকায় পাঠিয়ে দুই রানের জন্য দৌড় শুরু করেন বেন স্টোকস। ডিপ মিড উইকেট থেকে বল কুড়িয়ে সরাসরি স্ট্যাম্প বরাবর থ্রো করেন মার্টিন গাপটিল। তৎক্ষণাৎ রান আউট থেকে বাঁচতে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্টোকস। ঠিক সেই মুহূর্তে বলটি তাঁর ব্যাটে লেগে চলে যায় সীমানার বাইরে। ফলে আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা সংকেত দেন ছয় রানের।

এতে করে সমীকরণ গিয়ে দাঁড়ায় ২ বলে ৩-এ। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি টাই হয়। পরবর্তীতে সুপার ওভারেও টাই হলে বাউন্ডারি গণনায় ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।

  • অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার সাংঘাতিক ভুল

তর্কযোগ্যভাবে ইতিহাসের সেরা টেস্ট ম্যাচটির কথা স্মরণ করা যাক। সে ম্যাচে চমৎকার ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখান বেন স্টোকস।

হেডিংলিতে ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা আনতে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন নয় রান। হাতে কেবল এক উইকেট। স্ট্রাইকে ছিলেন শেষ উইকেটে ব্যাট করতে আসা জ্যাক লিচ। প্যাট কামিন্সের করা একটি ইয়র্কার আঘাত হানল তাঁর পায়ে।

সঙ্গে সঙ্গে এলবিডব্লিউর আবেদন করা হলে তা নাকচ করে দেন আম্পায়ার। অস্ট্রেলিয়া তখন রিভিউ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং হাতে থাকা একমাত্র রিভিউটি হারিয়ে বসে। কারণ বলটি পিচ করেছিল আউইসাইড লেগে।

পরবর্তী ওভারে জয়ের জন্য যখন দুই রান দরকার তখন নাথান লায়নের বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন স্টোকস। বলটি সরাসরি তাঁর প্যাডে আঘাত করায় এলবিডব্লিউর আবেদন করে  অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তাতে আম্পায়ারের সাড়া মেলেনি। পরে রিপ্লেতে দেখা যায় স্টোকস আউট ছিলেন। আগেই হাতে থাকা একমাত্র রিভিউটি খুইয়ে বসায় এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আর রিভিউ করতে পারেনি অজিরা। মূলত রিভিউ ব্যবহারে একটু বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারলেই ম্যাচটি নিজেদের করে নিতে পারতেন তাঁরা।

  • গিবসের হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বিশ্বকাপ

১৯৯৯ বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার বাঁচা-মরার লড়াই। এর আগে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের সাথে পরাজিত হওয়ায় সেমিতে ওঠার জন্য এ ম্যাচ জয়ের বিকল্প ছিল না তাদের সামনে।

প্রথমে ব্যাট করে হার্শেল গিবসের শতকে ২৭১ রানের পুঁজি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে অসিরা। দলের হাল ধরতে আসা স্টিভ ওয়াহকে যখন থিতু মনে হচ্ছিল ঠিক তখনই ফ্লিক করে তিনি ক্যাচ তুলে দেন গিবসের হাতে। গিবস বলটি তালুবন্দি করেন বটে। কিন্তু তাড়াতাড়ি উদযাপন করতে গিয়ে বলটি ফেলেও দেন। কথিত আছে তখন স্টিভ ওয়াহ তাঁর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘তুমি মাত্রই বিশ্বকাপটি ফেলে দিলে।’

স্টিভ ওয়াহ আদৌ সেটা বলেছিলেন কি না – সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে। তবে, এটা ঠিক যে, সেদিন ১২০ রানের হার না মানা ইনিংসে দলকে জিতিয়ে সেমিফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন স্টিভ।

তারপর সেমিফাইনালে এ দুটি দলই একে অপরের মুখোমুখি হয়। সেখানে টাই হলেও সুপার সিক্সের পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকায় ফাইনালে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা বাগিয়ে নেন তাঁরা।

  • অশ্বিনের নো বল এবং ফাইনালে ভারতের ‘নো এন্ট্রি’

স্পিন বোলারদের ‘ওভারস্টেপ’ করার ঘটনা খুবই বিরল। সাধারণত ছোট্ট রান আপের কারণে ফ্রন্টফুট নো বল করতে ততটা দেখা যায় না তাদের। তবে স্পিনাররা একেবারেই যে এ ভুলটা করেন না এমন নয়। এক্ষেত্রে ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের নামটা ঘুরেফিরে চলে আসে। কারণ ওয়ার্ল্ড কাপ সেমিফাইনালের মত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কোন স্পিনারের ফ্রন্টফুট নো বল করার দুর্লভ ঘটনা যে সহজে ভুলবার নয়।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উইন্ডিজের বিপক্ষে লড়ছিল স্বাগতিক ভারত। ১৯৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে উইন্ডিজ। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলতে এগিয়ে আসেন জনসন চার্লস ও লেন্ডন সিমন্স।

তাঁদের মধ্যে একটা জুটি জমে যাওয়ার সময় হঠাৎ অশ্বিনের বলে শর্ট থার্ডে ধরা পড়েন সিমন্স। কিন্তু বলটি ছিল ফ্রন্টফুট নো বল। ব্যক্তিগত ১৮ রানের সময় জীবন পেয়ে পরবর্তীতে ৫১ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে ফাইনালে উত্তীর্ণ করেন তিনি।

এর মাঝে আরও একবার আউট হন সিমন্স। ব্যক্তিগত ৫০ রানের মাথায় হার্দিক পান্ডিয়ার বলে ত্রিশ গজ বৃত্তে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। তবে ফ্রন্টফুট নো বলের কল্যাণে আবারও বেঁচে যান এই ক্যারিবিয়ান এবং দ্বিতীয় জীবনকে কাজে লাগিয়ে ভারতকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে মাঠ ছাড়েন তিনি।

  • রোহিতকে থিসারার দ্বিশতক উপহার

ওয়ানডেতে রোহিত শর্মার ক্যারিয়ারসেরা ২৬৪ রানের ইনিংসটি আসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ৩৩টি চার ও ৯টি ছয়ে সাজানো এ ইনিংস অদ্যাবধি ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি দখল করে আছে।

যদিও ইডেন গার্ডেন্সের সে ম্যাচে শুরুতেই প্যাভিলিয়নে ফিরতে পারতেন রোহিত। ব্যক্তিগত ৪ রানের সময় শামিন্দা এরাঙ্গার বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে মারতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। কিন্তু সে সহজ ক্যাচটি লুফে নিতে ব্যর্থ হন থিসারা পেরেরা। এটি ছিল তাঁর পক্ষ থেকে রোহিতকে দেয়া ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ও রেকর্ড গড়া দ্বিশতক উপহার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...