১৯৮৭ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল: এক মিলেনিয়ালের দৃষ্টিভঙ্গি

ভারতের সেমিফাইনালের আগের দিন পাকিস্তান অপ্রত্যাশিত ভাবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যাবার পরে তো আরোই আনন্দের লহর বয়ে গিয়েছিলো গোটা দেশ জুড়ে। এরপর তো ‘ইডেনে কাপ আমরাই জিতছি’, এরকম একটা মনোভাব যেন ড্রেসিংরুমের অন্দরেও প্রবাহিত হয়েছিল। কিন্তু কেউ হিসেবে রাখেনি, এই ইংল্যান্ডই বছর দুয়েক আগে ভারতকে দেশের মাটিতে কড়া স্বাদের হারের ওষুধ গিলিয়েছিলো। টেস্ট এবং ওয়ানডে দুটোই লজ্জাজনকভাবে হারে ভারত।

ভারতীয় সমর্থকরা যারা একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে ক্রিকেট দেখা শুরু করেছে, তাঁদের জন্য সবচেয়ে হৃদয় বিদারক দুই ক্রিকেটীয় ঘটনা হলো ২০০৩ এর ফাইনালে পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার কাছে জঘন্য হার এবং ২০০৭ এর বিশ্বকাপে বিশাল প্রত্যাশা নিয়ে পৌঁছেও বাংলাদেশের কাছে হেরে একেবারে ধরণীতলে নিঃক্ষেপিত হওয়া।

তবে তাঁদের বাবা কাকাদের জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন, তাঁদের প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে হৃদয় বিদারক দুই ঘটনা শারজাহয় জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কা আর মুম্বাইয়ে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ধরাশায়ী হওয়া। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ৩৩ বছর আগে। সেই বিশ্বকাপে ভারতের প্রধান ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মনিন্দর এবং শাস্ত্রীর স্পিন জুটি।

সেমিফাইনালের আগ অবধি মনিন্দর ৩.৭৬ এর ইকোনমিতে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন। মানিকজোড়ের দ্বিতীয় সদস্য, রবি শাস্ত্রী ৩.৮৭ এর ইকোনোমিতে সাত উইকেট নিয়েছিলেন। তৎকালীন বোম্বেতে স্পিনিং ট্র্যাকে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে পেরে ফেলা খুব একটা কঠিন হবে না, এমনই ভেবে বসেছিলেন অনেকে। ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল হবে, এই মর্মে অনেক কলকাতাবাসী আগাম ইডেনের টিকিট কেটে নিয়েছিলেন।

মুম্বাইয়ে ভারতের সেমিফাইনালের আগেরদিন পাকিস্তান অপ্রত্যাশিত ভাবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যাবার পরে তো আরোই আনন্দের লহর বয়ে গিয়েছিলো গোটা দেশ জুড়ে। এরপর তো ‘ইডেনে কাপ আমরাই জিতছি’, এরকম একটা মনোভাব যেন ড্রেসিংরুমের অন্দরেও প্রবাহিত হয়েছিল। কিন্তু কেউ হিসেবে রাখেনি, এই ইংল্যান্ডই বছর দুয়েক আগে ভারতকে দেশের মাটিতে কড়া স্বাদের হারের ওষুধ গিলিয়েছিলো। টেস্ট এবং ওয়ানডে দুটোই লজ্জাজনকভাবে হারে ভারত।

কপিল দেব বাদ পড়েন জীবনে একমাত্র বার সেই সিরিজেই। ১৯৮৭-এর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক গ্যাটিং, দু বছর আগেই মাদ্রাজে ডাবল সেঞ্চুরি করে যান, যার মধ্যে ছিল বেশ কিছু নান্দনিক সুইপ। একদিনের সিরিজেও সর্বোচ্চ রান ছিলো গ্যাটিংয়ের। তাও তো সেই ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমের দলে গুচ ছিলেন না।

অর্জুন যেভাবে একাগ্রচিত্তে নিশানা অনুশীলন করতেন, ঠিক সেভাবেই গুচ সাহেবও সুইপ অনুশীলন করছিলেন সেমিফাইনালের আগে। গ্যাটিং এবং বিল অথে তো স্পিন খেলার ওস্তাদ হিসেবে ছিলেনই মিডল অর্ডারে। গুচ ইনিংসের শুরুতে একবার কপিলের বলে লেগ বিফোর হওয়া থেকে বেঁচে যান। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ১৩৬ বলে ১১৫ করেন গুচ।

অধিনায়ক গ্যাটিং তো আরো আক্রমণাত্মক, ৬২ বলে ৫৬। ইংল্যান্ড শেষ করে ২৫৪ তে। স্পিন মানিকজোড়ের ফলাফল ২০ ওভারে ১০৩ রানে ৩ উইকেট। গুচ ও গ্যাটিংকে মনিন্দর ফিরিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার আগে যা হবার তা হয়ে গিয়েছে। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ১৯৮৭ সালে ২৫৪ রান তারা করা মানে আজকের দিনে ৩২৫ তাড়া করা।

তাও আশা ছিল তখনো। সুনীল গাভাস্কার সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছিলেন। শ্রীকান্ত, কপিল, আজহার আছেন। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। গাভাস্কার, সিধু, শ্রীকান্ত কেউই পারলেন না। খেলছিলেন আজহার এবং কপিল। ১৬৮ রানে ৪ উইকেট, কপিল ২১ বলে ৩০ করে নট আউট। সাথে ফর্মে থাকা আজহার। গোটা ভারত আবার বুক বাঁধছে আশায়।

ঠিক এই সময় হেমিংসকে তুলে মারতে গিয়ে আউট কপিল। আমার বাবা তো আজও কপিলকে ওই শটের জন্যে ক্ষমা করতে পারেন না। যতই বোঝাই উনি ঐভাবেই খেলতেন, আবেগের কাছে যুক্তি হেরে যায় বারবার। সেবার আউট হবার জবাব দিতেই কিনা কে জানে, সেই কপিলই সেই হেমিংসকে পরপর ৪ টি ছয় মেরে ভারতের ফলো অন বাঁচান ঠিক তিন বছর বাদে।

ভারত ম্যাচটি হারে ৩৫ রানে সাড়ে ৪ ওভার বাকি থাকতে। কে বলতে পারে কপিল শেষ অবধি থাকলে ভারত আবার বিশ্বকাপ জিততো না? মাঝে মাঝে মনে হয় হয়তো বাবারাই ঠিক বলেন!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...