ঢাকায় খেলে গেছেন এভারটন উইকস

খেলার ফলাফল প্রতিবেদনটি থেকে মূখ্য পাওয়া নয়। ক্রিকেটারদের নাম ও বিশ্বমানে তাঁদেরখ্যাতি উল্লেখযোগ্য বিষয় বটে,তবে সবচাইতে বড় পাওয়া সেসময়ের বাঙালির ক্রিকেট দুর্ভাগ্যের সচিত্র দলিল। একটি প্রাক্তন তারকাদের দলের সাথে ম্যাচ, অথচ পূর্ব পাকিস্তান নামের দলে একজনও বঙ্গ সন্তান নেই।

সদ্য প্রয়াত চিরন্তন ক্রিকেট চেতনার বরপুত্র স্যার এভারটন উইকস ঢাকায় খেলে গেছেন,কথাটা বললে বিতর্ক উঠতে পারে। প্রধান কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আলেকজান্ডারের দলে হল, হান্ট, কানহাই, গিবসদের দলে তিনি ছিলেন না। তবে, তিনি ঢাকায় খেলে গেছেন।

১৯৬২ ইংরেজিতে এমসিসি দল শুভেচ্ছা সফরে তদানিন্তন পাকিস্তানে এলে ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর একাদশের সাথে একটি তিনদিনের খেলায় অংশ নেয়। সেই খেলার একটি প্রতিবেদন সংরক্ষিত ছিলো বন্ধু সৈয়দ মাহবুব সোবহানী পাকার কাছে। ক্রীড়া সংগঠক বন্ধু খেলাটি দেখেছেন। ১৩ মার্চ, ১৯৬২, মর্নিং নিউজ পত্রিকার রিপোর্ট, তিন দিনের খেলা অমিমাংসিত ভাবে শেষ হবার পরের দিনের।

প্রতিবেদক স্বনামধন্য শ্রদ্ধেও তৌফিক আজিজ খান। প্রতিবেদনটির গুরুত্ব প্রতিবেদকের নামের জন্যেও অনেকটা,সেটা শুধু সাবেক সাংবাদিকরাই অনুধাবন করতে পারবেন। কিন্তু এহ বাহ্য। খেলার কথায় আসি। ঢাকা স্টেডিয়ামের তখনকার একতলার বৃত্তে প্রথমে স্বাগতিক দল ব্যাট করে পাঁচ উইকেটে ৩৮৫ রান করে ইনিংস ঘোষনা করে।

নামে পূর্ব পাকিস্তান হলেও দলটি প্রায় পূর্ণ শক্তির পাকিস্তানই ছিলো। দলে এখানকার একমাত্র ক্রিকেটার এমএ লতিফ, তাও অবাঙালি। সাইদ আহমেদ ও ওয়াজির মোহাম্মদ সেঞ্চুরি করেন, হানিফ করেন ৭৭। লতিফের স্কোর ছয়। পক্ষান্তরে অতিথি দলটিতে ছিলো বিভিন্ন দেশের অবসরে যাওয়া ক্রিকেটাররা। তবে তাঁরা ক্রিকেটাকাশে এখনো জ্বলজ্বল করা নামসব।

উইকসের কথাতো আগেই বলেছি, ছিলেন টম গ্রেভেনী, কলিন ম্যাক ডোনাল্ড, গিফোর্ড, রয় মার্শাল, কলিন ব্লেন্ড, সুভাস গুপ্তে প্রমুখ। এখন হলে সাক্ষাৎকার নেয়ার ধুম পড়ে যেতো। সে যাই হোক, মাহমুদ হোসেন, মোহাম্মদ ফারুকদের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে উইকসরা ২৬৬ রানে আটকে যান। এক পর্যায়ে ফলো অনে পড়তে যাচ্ছিলো।

শেষ উইকেটের মারমুখি দৃঢ়তায়, যার মধ্যে সুভাস গুপ্তে ছিলেন, পার পেয়ে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার কলিন ব্লেন্ড সর্বোচ্চ রান করেন, টম গ্রেভেনী সাতচল্লিশ করে রান আউট হন। তিনে নেমে জাভেদ আখতারের বলে বোল্ড হওয়ার আগে উইকস করেন ষোলো রান।

দ্বিতীয় পালায় গভর্নর একাদশের ৯৪ রানে ছয় উইকেট পড়লে নির্ধারিত সময়ের আধাঘন্টা আগে খেলা শেষ হয়। অতিথিদের নিউ জিল্যন্ড ফ্লাইট ধরার তাঁড়া ছিলো, জানাচ্ছেন তৌফিক আজিজ খান।

খেলার ফলাফল প্রতিবেদনটি থেকে মূখ্য পাওয়া নয়। ক্রিকেটারদের নাম ও বিশ্বমানে তাঁদেরখ্যাতি উল্লেখযোগ্য বিষয় বটে,তবে সবচাইতে বড় পাওয়া সেসময়ের বাঙালির ক্রিকেট দুর্ভাগ্যের সচিত্র দলিল। একটি প্রাক্তন তারকাদের দলের সাথে ম্যাচ, অথচ পূর্ব পাকিস্তান নামের দলে একজনও বঙ্গ সন্তান নেই।

প্রতিবেদনটির সাথে একটি খেলার ছবিও ছিলো। অভিজ্ঞ হাতের তোলা ছবি, টম গ্রেভেনী ব্যাট করছেন, অপরপ্রান্তে কলিন ব্লেন্ড। গ্যালারী ফাঁকা ফাঁকা। প্রয়াত তৌফিক আজিজ খান এবং সেই ফটো সাংবাদিকের প্রতি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা। প্রতিবেদনটি থেকে আমরা সেসময়ের ক্রিকেট ও ক্রিকেট সাংবাদিকতার হালহকিকত অনেকটাই আন্দাজ করতে পারি।

তৌফিক আজিজ খানের সচিত্র প্রতিবেদনের ছবিটি আমি কারিগরি সীমাবদ্ধতার জন্যে সংশ্লিস্ট করতে পারছিনা। 

____________________

বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে লম্বা সময় ধরে জড়িয়ে আছেন জালাল আহমেদ চৌধুরী। তিনি সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রিকেট লেখক। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচদের একজন। বিভিন্ন পদে ও মেয়াদে তিনি কাজ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি)।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...