বাংলাদেশের বাস্তবতায় খুবই বিরল একজন

নিজের প্রতি তাঁর নিজের দায়িত্ব অবশ্যই আছে। ক্ষুধা, তাড়না, নিবেদন, পরিশ্রম, ফোকাস, ইচ্ছাশক্তি ধরে রাখা, প্রতিদিনই উন্নতির পথ ধরে এগিয়ে চলা, এসব তো লাগবেই। তবে দেশের ক্রিকেটেরও বড় দায়িত্ব। আমাদের সিস্টেম যদিও আদর্শ নয় মোটেই, কোনো একজনের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়ার সুযোগও কম, তার পরও যেভাবেই হোক, শামীমকে পথে রাখতে হবে, গড়ে তুলতে হবে, তার প্রতিভাটাকে শাণিত করতে হবে, তাঁর সম্ভাবনার পুরোটা কাজে লাগাতে হবে।

অবিশ্বাস্য ব্যাট স্পিড। চাবুকের মতো চালিয়ে দেন। ভেবেই বলছি, এরকম ব্যাট স্পিড বাংলাদেশে এই মুহূর্তে আমি আর দেখি না।

শামীম হোসেন পাটোয়ারি ছেলেটা রেয়ার ব্রিড – গত ডিসেম্বরে একবার লিখেছিলাম এই কথা। আয়াল্যান্ড উলভেসর বিপক্ষে দুটি ম্যাচ দেখার পর একই কথা আবার লিখতে বাধ্য হচ্ছি। বাংলাদেশের বাস্তবতায় শামীম খুবই বিরল একজন।

প্রতিভার মাপার কোনো যন্ত্র যদিও নেই, তবু প্রথাগত অর্থ ধরে বলা যায়, শামীমের চেয়ে প্রতিভাবান অনেকে হয়তো আছেন। তার চেয়ে সম্ভাবনাময় অনেকেও থাকতে পারেন। কিন্তু তার যেটা শক্তির জায়গা, বাংলাদেশের ক্রিকেটে তা বিরল

তিনি পাওয়ার হিটার। এমন মাসল পাওয়ার, এমন গায়ের জোরে বড় শট খেলতে পারার মতো ব্যাটসম্যান আমরা সচরাচর পাই না। রিফ্লেক্স ও ব্যাট স্পিড দুর্দান্ত বলে সেই পাওয়ার আরও বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে। চোখ খুব ভালো, লেংথ আগে পড়তে পারেন বলে তার সব শক্তির জায়গাগুলো কাজে লাগানোর সুযোগ বেশি থাকে।

আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে দুই ম্যাচে তার ব্যাটিং দেখে মনে হলো, শটের রেঞ্জ বাড়তে শুরু করেছে। এই দুটি ম্যাচে আমার বেশি যা ভালো লেগেছে, যেভাবে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়েছেন। যেভাবে চাপের মধ্যে নির্লিপ্ত থেকে নিজের খেলা খেলে গেছেন। যেভাবে অবলীলায় ম্যাচ শেষ করে ফিরেছেন। এসব বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিরল।

ফিল্ডিং নিয়েও আগে লিখেছি, বাংলাদেশ থেকে সত্যিকারের প্রথম টপক্লাস ফিল্ডার তিনি হতে পারে। পাশাপাশি তার অফ ব্রেক বেশ উপযোগী। নতুন-পুরোনো, সব বলেই তার বোলিং কাজে লাগানো যায় প্রয়োজন হলে।

সব মিলিয়ে ছোটখাটো গড়নের ছেলেটি আস্ত একটি পাওয়ার হাউজ – সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দুর্দান্ত এক প্যাকেজ হতে পারেন তিনি, অনেক বছর ধরেই যেমন একজনকে খুঁজছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।

অবশ্যই আরও অনেক অনেক উন্নতি তাঁকে করতে হবে। আরও অনেক কঠিন পরীক্ষা আসবে, সেসবের জন্য তাকে তৈরি হতে হবে। বিশেষ করে ডিফেন্স আরেকটু আঁটসাঁট করা, শট সিলেকশন আরেকটু ভালো করা, সার্বিক উন্নতিরও জায়গা অনেক অনেক আছে – তবে সেই জায়গাগুলোয় তাকে নিয়ে যেতে হবে।

আমাদের অনেক প্রতিভাই আগে হারিয়ে গেছে। সব দেশেই কম-বেশি সেটা হয়। সামনেও হবে। সবাই পথে থাকতে পারে না, সবার হয়ে ওঠে না। তবে শামীম তার সম্ভাবনার পূর্ণতায় কিংবা কাছাকাছি পৌঁছাতে না পারলে, ক্ষতিটা বেশি হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের। বারবার যেটা বলছি, এই ঘরানার ক্রিকেটার বিশ্বের অনেক দেশে অনেক থাকলেও বাংলাদেশে খুব বিরল।

নিজের প্রতি তাঁর নিজের দায়িত্ব অবশ্যই আছে। ক্ষুধা, তাড়না, নিবেদন, পরিশ্রম, ফোকাস, ইচ্ছাশক্তি ধরে রাখা, প্রতিদিনই উন্নতির পথ ধরে এগিয়ে চলা, এসব তো লাগবেই। তবে দেশের ক্রিকেটেরও বড় দায়িত্ব। আমাদের সিস্টেম যদিও আদর্শ নয় মোটেই, কোনো একজনের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়ার সুযোগও কম, তার পরও যেভাবেই হোক, শামীমকে পথে রাখতে হবে, গড়ে তুলতে হবে, তার প্রতিভাটাকে শাণিত করতে হবে, তাঁর সম্ভাবনার পুরোটা কাজে লাগাতে হবে।

কারণ, আবারও বলছি, বাংলাদেশের বাস্তবতায় ছেলেটা রেয়ার ব্রিড।

– ফেসবুক থেকে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...